প্রতিদিন সংসারের কাজে ফ্রিজ ছাড়া যেন কল্পনাই করা যায় না। রান্নার কাজের নিত্যসঙ্গী এই ফ্রিজ। ফ্রিজ থাকা মানে বাড়তি রান্নার চাপ থেকে মুক্ত থাকা। ঈদ কিংবা যে কোনো উত্সব এলেই ফ্রিজের প্রয়োজন আরও বেড়ে যায়। খাবার সংরক্ষণের একমাত্র সঙ্গী এখন ফ্রিজ। সংরক্ষিত খাবারের পুষ্টিগুণ ঠিক রাখতে নিয়মিত ফ্রিজের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে ফ্রিজের দুর্গন্ধ হলে তো তা ব্যবহার করাই দুসাধ্য হয়ে উঠে। সংসারের গুরুত্বপূর্ণ এ যন্ত্রটি তখন বিড়ম্বনার কারণ হয়ে যায়।
প্রতিদিনের বাজার, রান্না করা খাবারসহ নানা রকমের জিনিস রাখা হয় ফ্রিজে। অনেক খাবার একসঙ্গে থেকে ফ্রিজে দুর্গন্ধ হতে পারে। আবার খাবার নষ্ট হয়েও দুর্গন্ধ ছড়ায়। মাঝে মাঝে ফ্রিজের দরজা খুললেই দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে পুরো ঘরে। যা খুবই অস্বস্তিকর। এই অবস্থা থেকে রেহাই পেতে নিয়মিত ফ্রিজের যত্ন করা প্রয়োজন। ফ্রিজে দুর্গন্ধ যেন না ছড়ায় কিংবা দুর্গন্ধ হয়ে গেলে যা করতে হবে তা নিয়ে কিছু ধারণা নিন এই আয়োজনে।
- সাধারণত ফ্রিজে খাবার সংরক্ষণের প্রক্রিয়াটা সঠিকভাবে না হলেই দুর্গন্ধ ছড়ায়। ফ্রিজে রাখা খাবার নষ্ট হয়। তাই ফ্রিজে দুর্গন্ধ যেন না ছড়ায় সে জন্য এর তাপমাত্রা ঠিক রাখতে হবে। ফ্রিজের ‘নরমাল’ অংশের তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৩ দশমিক ৫ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখতে হবে। আর ডিপ ফ্রিজের তাপমাত্রা রাখতে হবে মাইনাস ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফ্রিজের খাবারের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে তাপমাত্রা ঠিক করতে হবে।
- সবজি-ফলমূল ফ্রিজে রাখা হয়। কাঁচা এই খাবারগুলো খোলা না রেখে আলাদা করে ছোট জিপার ব্যাগে রাখুন।
- ডিপ ফ্রিজে কাঁচা মাছ–মাংস আলাদা করে প্যাকেট করে রাখুন। জিপ টাইট ব্যাগে রাখলে দুর্গন্ধ হয় না। প্যাকেটগুলো গুছিয়ে রাখতে হবে।
- রান্না করা খাবার সংরক্ষণের জন্য বক্স ব্যবহার করুন। বক্সের ঢাকনা লাগিয়ে রাখুন। কিংবা প্লাস্টিকের র্যাপ দিয়ে মুড়িয়ে রাখুন।
- ‘ফ্রোজেন ফুড’ বা হিমায়িত খাবার কাঁচা মাছ-মাংসের সঙ্গে রাখবেন না।
- পেঁয়াজ-রসুন কেটে ফ্রিজে খোলা অবস্থায় রাখলে বেশি দুর্গন্ধ ছড়ায়। পাশাপাশি বিষক্রিয়াও হয়। তাই এগুলো খোলা অবস্থায় রাখা যাবে না। ব্লেন্ড করে এয়ারটাইট বক্সে সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
- ফ্রিজে নানা রকম খাবার থাকে। তাই জীবাণুও দ্রুত ছড়ায়। তাই ফ্রিজ ১৫ দিনে কিংবা মাসে একবার হলেও পরিস্কার করতে হবে। নিয়মিত ফ্রিজ পরিষ্কার করলে দুর্গন্ধ হবে না।
- ফ্রিজের দুর্গন্ধ দূর করতে গরম পানিতে ডিটারজেন্ট গুলিয়ে নরম কাপড় ভিজিয়ে পরিষ্কার করে নিন। এরপর লেবুর রস দিয়ে ফ্রিজের ভেতরটা মাখিয়ে রাখুন। এতে জীবাণু ও দুর্গন্ধ দুটোই দূর হবে।
- ফ্রিজে ক্রস-কন্টামিনেশন হয়। একাধিক খাবারের ক্ষুদ্র খাদ্যকণা ও জীবাণু একসঙ্গে মিশে এমনটা হয়। কাঁচা মাংস খোলা অবস্থায় ফ্রিজে রেখে দিলেই এটি হতে পারে। এই দূষণ থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকি হয়। তাই কাঁচা মাংস, মাছ এবং কাঁচা সবজি ও ফলমূল সবকিছুই আলাদা ব্যাগে রাখতে হবে।
- ফ্রিজে দুগ্ধজাত খাবার ভালোভাবে সিল করে রাখুন। এটি বেশিদিনের জন্য রাখা যাবে না। কারণ এতে দুর্গন্ধ ছড়াবে। আবার নষ্টও হয়ে যায়।
- শাকসবজি ধুয়ে ফ্রিজে সংরক্ষণ করা ভালো। এতে সংক্রমণ ছড়ায় না। ফ্রিজে খাবার রাখা ও বের করার সময় হাত ধুয়ে নিতে হবে। এতে হাতের জীবাণু খাবারে ছড়াবে না।
- একটি পাত্রে এক বেলার জন্য প্রয়োজনীয় খাবারের বেশি সংরক্ষণ করবেন না। খাবার বের করার সময় একটি পাত্র থেকে খানিকটা নিয়ে আবার তা ফ্রিজে ওঠাবেন না। এতে খাবার থেকে গন্ধ ছড়াতে পারে।
- বারবার ফ্রিজ খোলা-বন্ধ করা থেকে বিরত থাকুন। কোনো পচা খাবার কিংবা সবজি ফ্রিজে রয়েছে কিনা তা চেক করুন নিয়মিত।
- মাসে একবার ফ্রিজের বিদ্যুৎ-সংযোগ বন্ধ করে পরিষ্কার করুন। কুসুম গরম পানিতে ডিটারজেন্ট দিয়ে ফ্রিজ পরিষ্কার করতে হবে। যেসব খাবার পচে যাওয়ার বা দুর্গন্ধ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে তা বের করে নিন।
- দুর্গন্ধ তাড়াতে একটি বাটিতে কফি, ওটস, লেবু, ভিনেগার কিংবা বেকিং সোডা মিশিয়ে ফ্রিজে রেখে দিন। গন্ধ দূর হবে। একটি তুলায় ভ্যানিলা এসেন্সে ডুবিয়ে ১২ ঘণ্টার জন্য ফ্রিজে রেখে দিতকে পারেন। আবার এক ভাগ আপেল সিডার ভিনেগার তিন ভাগ পানির সঙ্গে মিশিয়ে জ্বাল দিয়ে। তা গ্লাসে ঢেলে ফ্রিজে রেখে দিন। ছয় ঘণ্টা পর ফ্রিজ খুলে দেখুন দুর্গন্ধ দূর হবে।