পরিবেশ বাঁচাতে গাছ লাগানো অপরিহার্য। শহরের কোলাহলে গাছ তেমন একটা দেখা যায় না। তবে গ্রাম বা মফস্বলে কিংবা শহর থেকে খানিকটা দূরে গেলেই দেখা মেলে বিভিন্ন ধরনের গাছের। রাস্তা দিয়ে চলার পথে এসব গাছ চোখে পড়ে। খেয়াল করলে দেখা যায়, রাস্তার ধারে কিংবা বাগানের ভেতরে দাঁড়িয়ে থাকা বড় গাছের গায়ে সাদা রংয়ের প্রলেপ দেওয়া থাকে। জানেন কি, কেন গাছের গায়ে সাদা রং করা হয়? এর পেছনে একটি কারণ নয় বরং বেশকিছু কারণ রয়েছে।
সাধারণত বৈজ্ঞানিক কারণেই গাছের গায়ে সাদা রং করা হয়। তবে প্রধান কারণ হচ্ছে গাছের সুরক্ষা। রং করা থাকলে গাছ সুরক্ষিত থাকে। গাছের গায়ে সাদা রংয়ের প্রলেপ গাছকে সানস্কাল্ড (অতিরিক্ত তাপ ও আলো) থেকে মুক্তি দেয়। সূর্যের অতিরিক্ত তাপদাহের ফলে গাছের বহিরাবরণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটাই সানস্কাল্ড।
তাই কোনো গাছ সূর্যের আলোকরশ্মির অতিরিক্ত তাপে থাকলে তা থেকে রক্ষা করার জন্য সাদা রং দেওয়া হয়। এতে গাছের বাকল খসে পড়া কিংবা গাছের বহিরাবরণ ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। সাদা রং সবচেয়ে কম মাত্রায় আলোকরশ্মি শোষণ করে। তাই সাদা রংয়ের প্রলেপ থাকলে সূর্যরশ্মি শোষিত না হয়ে প্রতিফলিত হয়। এতে গাছ রক্ষা পায়।
ক্ষতিকর পোকামাকড় থেকে গাছকে সুরক্ষা দিতেও সাদা রং করা হয়। বিশেষ করে সাদা রঙের জন্য় চুন ব্যবহার করা হয়। যার কারণে উইপোকা গাছের গায়ে এবং বাকলের নিচে বাসা বাঁধতে পারে না। চুন পোকামাকড়ের কোষকে শুষ্ক করে তোলে এবং নিঃশ্বাসে বাধা দেয়। এতে পোকামাকড় বাসা বাঁধতে পারে না।
গাছকে বিভিন্ন রোগবালাই থেকে সুরক্ষা দিতেও সাদা রং করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, রোডেন্ট এবং বোরার রোগ থেকে সুরক্ষা দিতে গাছের গায়ে সাদা রংয়ের প্রলেপ দেওয়া জরুরি। এছাড়াও সূর্যরশ্মি থেকে গাছের নতুন কুঁড়িকে সুরক্ষা দিতেও সাদা রং করা আবশ্যক। যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানান, গাছের নতুন কুঁড়ির সুরক্ষা করতে সাদা রঙের প্রলেপ কার্যকরী হয়।
এদিকে, রাস্তার ধারে যেসব গাছ থাকে তাতে রাতের অন্ধকারে দুর্ঘটনা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। গাড়ি চালানোর সময় অন্ধকারে গাছগুলো দেখা যায় না। সাদা রং করা থাকলে সহজেই গাছের অবস্থান বোঝা যায়। আর নিরাপদে গাড়ি চালানো যায়। সাদা রং সবচেয়ে বেশি আলো প্রতিফলনে সক্ষম। তাই গাড়ির হেডলাইটের আলো গাছের গায়ের সাদা রংয়ের ওপর পড়ে এবং পুরোটাই প্রতিফলিত হয়। যা নিরাপদে গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে সুবিধা দেয়।