• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরকীয়ায় কেন জড়াচ্ছেন সঙ্গী?


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ১, ২০২৪, ০৮:৩১ পিএম
পরকীয়ায় কেন জড়াচ্ছেন সঙ্গী?
ছবি: সংগৃহীত

সুন্দর দাম্পত্য জীবন সবারই কাম্য। স্বামী স্ত্রী দুজনেরই প্রচেষ্টা আর যত্নে সুন্দর দাম্পত্য গড়ে উঠে। সম্পর্কের সফরকে সুন্দর করতে দুজনেরই চেষ্টা থাকতে হয়। একে অপরের পাশে দাড়িয়ে, হাতে হাত রেখে এই সফরকে উপভোগ করতে হয়। সারা জীবন একসঙ্গে কাটিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি যেমন নেন, তেমনই এর কদরও করেন অনেকে। ভালোবসায় পূর্ণ থাকে তাদের সম্পর্ক। কিন্তু এরই মাঝে কোনো কোনো সম্পর্কে ফাটল ধরে। মুখ ফিরিয়ে নেন সঙ্গী। অন্য কারো প্রতি আকৃষ্ট হয়ে দাম্পত্যজীবনকে অবহেলা করেন। সঙ্গীর প্রতি অবহেলা করেন। সেই সম্পর্ক থেকে সম্মান, কদর সবই হারিয়ে যায়। জড়িয়ে পড়েন বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে। যার নামই হচ্ছে পরকীয়া।

পরকীয়া কিন্তু অনিচ্ছাকৃত কোনো ভুল নয়। বরং ইচ্ছে করেই সঙ্গীর সঙ্গে প্রতারণা করা হয়। হয়তো কোনো কারণে, কিংবা কোনো কারণ ছাড়াই পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে মানুষ। আবার মানসিক সমস্যা থেকেও অনেকে পরকীয়ায় জড়াতে পারেন বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

ভারতের বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা: দেবাঞ্জন পান স্থানীয় এক গণমাধ্যমকে জানান, দাম্পত্যে সুখ অটুট রাখার জন্যে স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই সমান শ্রম দিতে হয়। সম্পর্কটিকে মজবুত বানাতে একে অপরকে সময় দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু প্রত্যেকে সেই সময়টুকু দিতে পারেন কি?  সম্পর্কের বন্ধন মজবুত করতে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ এবং সময় দুটোই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ব্যস্ত জীবনে দম্পতিরা তা দিতে পারেন না। অফিস থেকে বাড়ি ফিরেই টুকটাক কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এরপর মোবাইল ফোন নিয়েই সময় কাটাচ্ছেন। সেখানেই সম্পর্কের শূন্যতা তৈরি হচ্ছে। যদি বাড়ি ফিরে অন্তত এক কাপ চা নিয়ে মুখোমুখি বসে দুজন কথা বলেন তবে বৈবাহিক সম্পর্ক মজবুত হবে।

ডাঃ পান আরও বলেন, সাময়িক মোহে মানুষ ছুটে যায়। যারা অস্থির প্রকৃতি কিংবা যাদের  ধৈর্য্য কম, তারা মোহের পেছনে ছুটি বেড়ায়। দাম্পত্যে শূন্যতা তৈরি হলেই তারা বাইরের মোহের দিকে তাড়িত হয়। এরপরই পরকীয়ার জড়িয়ে যায়।

সম্পর্কে এমন পরিস্থিতি আসার আগে নিজেদের দিকে আগে নজর দেওয়া জরুরি। নিজের প্রতিশ্রুতি এবং সঙ্গীর কথা চিন্তা করে সময় দেওয়া জরুরি। তবেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে পরামর্শ দেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা: দেবাঞ্জন পান।

এছাড়াও পরকীয়া সম্পর্কে জড়ানোর পেছনে আরও কিছু কারণকে নির্দেশ করেছেন এই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। যেমন_

প্রাক-বিবাহ সম্পর্ক

অধিকাংশ মানুষই বিয়ের আগে সম্পর্কে জড়ান। দীর্ঘ বছর একসঙ্গে থাকেন। একে অপরকে যথেষ্ট সময় দেন। কিন্তু বিয়ের পরেও প্রাপ্তির পর সেই সময়টুকু আর দেওয়া হয় না। বিয়ের পর সঙ্গীকে নতুন করে চেনার কিছুই থাকে না। তাই সম্পর্কের প্রতি আগ্রহ কমে যায়। যা পরবর্তী সময়ে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক বা পরকীয়ার দিকে ঠেলে দেয়। তাই বিয়ের পরও নিজেদের এবং সম্পর্ককে আলাদা করে চেনার সুযোগ দিন। এমন অনেক দিকই থাকে যা অজানা। তাই নিজেদের জন্য় সময় বের করুন।

মানসিক সমস্যা

কারও মধ্যে যদি বাইপোলার ডিসঅর্ডারের কোনও বৈশিষ্ট্য থাকে তবে সঙ্গীকে ঠকানো স্বাভাবিক ঘটনা। এই ধরনের ব্যক্তিত্বের মানুষের হঠাৎ করেই মন বদলে যায়। নিজের অনুভূতির উপর নিয়ন্ত্রণও থাকে না। তাই সম্পর্কে প্রতারণা করার সম্ভাবনাও থাকে। সঙ্গীকে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও অন্য সম্পর্কের দিকে এগিয়ে যান।

এডিএইচডি (ADHD)

এডিএইচডি হলো অ্যাটেনশন ডেফিসিট/হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার। যা প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্য়েও থাকে। এই ধরনের সমস্যায় ভুক্তভোগীরা অজান্তেই ভুল করে বসেন। তারাও সঙ্গীর সঙ্গে  প্রতারণা করার কিংবা বারবার নতুন নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা থাকে।

অভ্যাস

প্রতারণা করা কিংবা বারবার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া মস্তিষ্ককেও বারবার বার্তা দেয়। যা অভ্যাসে পরিণত হয়। মনের এই চক্রব্যূহ্ থেকে বেরিয়ে আসতে অনেক বছর সময় লাগে। তাই বিয়ের পরও এই অভ্যাস থেকে যায়।

পরকীয়া থেকে বেরিয়ে আসতে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। যেমন_

·        একটি সম্পর্কে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছেন তা ভুলে যাবেন না।

·        সঙ্গীকে যতটা সম্ভব সময় দিন। নিজের প্রতিও নজর ফেরান।

·        সম্পর্ককে সুন্দর করতে নতুন নতুন চিন্তাভাবনা করুন।

·        মোবাইল ফোন, ল্যাপটপের সঙ্গে সময় না কাটিয়ে সঙ্গীর সঙ্গে সময় কাটান।

·        সঙ্গীকে স্বাধীনতা দিন। বেশি আটকে রাখবেন না। নিজস্ব সময় কাটালে সঙ্গীর সম্পর্কের প্রতি একঘেয়েমি কেটে যাবে।

·        সঙ্গীর পছন্দের কদর করুন। তার ভালো লাগা, খারাপ লাগাকে প্রাধান্য দিন। কথায় কথায় ঝগড়া করবেন না।

 

সূত্র: এবিপি নিউজ

Link copied!