• ঢাকা
  • বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫, ১২ চৈত্র ১৪৩০, ২৫ রমজান ১৪৪৬

জাকাত কাকে দেবেন, কাকে দেবেন না


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ২৪, ২০২৫, ১০:৩৬ পিএম
জাকাত কাকে দেবেন, কাকে দেবেন না
ছবি: সংগৃহীত

ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের একটি হলো জাকাত। এটি একটি ধর্মীয় আর্থিক বাধ্যবাধকতা। যা নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের মালিক মুসলমানদের জন্য ফরজ। জাকাত সমাজের দরিদ্র, অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কল্যাণে ব্যয় করা হয়। তবে জাকাত দেওয়ার ক্ষেত্রে ইসলামের সুস্পষ্ট কিছু বিধান রয়েছে, যা অনুসরণ করা জরুরি। সঠিক ব্যক্তিকে জাকাত না দিলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই জাকাত দেওয়ার যোগ্য ব্যক্তিরা কারা এবং যাদের জাকাত দেওয়া নিষিদ্ধ তা জেনে নিন।

জাকাতের উপযুক্ত ব্যক্তি কারা

আল-কুরআনে (সুরা আত-তাওবা, আয়াত ৬০) জাকাত প্রদানের জন্য আট শ্রেণির মানুষকে নির্ধারণ করা হয়েছে। তারা হলেন_

 

  • অত্যন্ত গরিব ও নিঃস্ব ব্যক্তি। যাদের সম্পদ ও আয় নেই বা খুব সীমিত, তারা জাকাত পাওয়ার যোগ্য। এমন ব্যক্তিকে জাকাত দিতে হবে যার মৌলিক চাহিদা পূরণের সামর্থ্য নেই।
  • মিসকিন দরিদ্র ব্যক্তিকে জাকাত দিতে হবে। মিসকিন এমন ব্যক্তি, যার কিছু আয় আছে, তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম। ফকির ও মিসকিনের মধ্যে পার্থক্য হলো, ফকিরদের কোনো সম্পদ ও উপার্জন থাকে না।কিন্তু মিসকিনদের কিছু থাকে, তবে তা প্রয়োজনীয় জীবনযাত্রার জন্য যথেষ্ট নয়।
  • জাকাত আদায় ও বণ্টনের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মচারীদেরকে দেওয়া যাবে। যারা জাকাত সংগ্রহ ও বিতরণের দায়িত্বে থাকে, তারা তাদের কাজের বিনিময়ে জাকাত গ্রহণ করতে পারে। এটি ইসলামী সরকারের অধীনে পরিচালিত হলে সরকার নিযুক্ত কর্মচারীরাও এতে অন্তর্ভুক্ত হবে।
  • নবমুসলিম বা ইসলাম গ্রহণে আগ্রহী ব্যক্তিদে জাকাত দেওয়া যাবে। নবমুসলিম যারা নতুন ইসলামে প্রবেশ করেছে এবং আর্থিক দুর্বলতার কারণে ইসলাম থেকে দূরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তাদেরকে জাকাত দেওয়া যেতে পারে।এছাড়া, অমুসলিমদের মধ্যে যারা ইসলামের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং মুসলমানদের সাহায্যকারী, তাদেরও জাকাত দেওয়া বৈধ।
  • দাস মুক্তির জন্য জাকাত দেওয়া যাবে। ইসলাম দাসপ্রথা মুক্তির জন্য উৎসাহিত করেছে। অতীতে দাস মুক্ত করার জন্য জাকাত ব্যবহার করা হতো, তবে আধুনিক সময়ে এটি প্রায় বিলুপ্ত। বর্তমান সময়ে জাকাত ব্যবহার করা যেতে পারে জেলখানায় আটক নিরপরাধ মুসলমানদের মুক্তির জন্য।
  • ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে জাকাত দেওয়া যাবে। কেউ যদি বৈধ কারণে ঋণে পড়েন এবং তা শোধ করতে অপারগ হন, তাহলে তাকে জাকাত দেওয়া বৈধ। তবে শর্ত হলো, ঋণ নেওয়া হারাম কোনো কাজের জন্য যেন না হয়।
  • আল্লাহর পথে – জিহাদ বা ইসলামের জন্য কাজ করা ব্যক্তিদের জাকাত দেওয়া যাবে। ইসলামের প্রচার, প্রতিরক্ষা এবং কল্যাণমূলক কাজের জন্য জাকাত ব্যবহার করা যেতে পারে। বর্তমানে এর অর্থ হতে পারে ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দাওয়াহ সংস্থা, মাদ্রাসা ও গরিব ছাত্রদের শিক্ষার জন্য জাকাত দেওয়া।
  • মুসাফির বা পথচারী, যার কাছে পথের খরচ নেই তাদেরকে যাকাত দেওয়া যাবে। যদি কোনো মুসাফির তার ভ্রমণের সময় সম্পদহীন হয়ে পড়ে এবং গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য অর্থের প্রয়োজন হয়, তবে তাকে যাকাত দেওয়া যেতে পারে। তবে শর্ত হলো, সে প্রকৃত মুসাফির হতে হবে এবং ধনী হওয়া সত্ত্বেও তার কাছে কোনো সম্পদ না থাকা উচিত।

জাকাত গ্রহণে অনুপযুক্ত ব্যক্তি কারা

 

  • ধনী ব্যক্তি কিংবা নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক যারা তাদেরকে যাকাত দেওয়া যাবে না। যেসব ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক (সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে ৫২.৫ তোলা রুপার সমপরিমাণ সম্পদ), তারা যাকাত গ্রহণ করতে পারবে না।
  • সামর্থ্যবান ব্যক্তি, যারা উপার্জনে সক্ষম, শারীরিকভাবে সক্ষম ও উপার্জনক্ষম ব্যক্তি, যারা কাজ করতে পারে, তারা যাকাতের উপযুক্ত নয়।শুধুমাত্র তাদের জন্য যাকাত বৈধ, যারা কাজের সুযোগ পাচ্ছে না বা কোনো বৈধ কারণে কাজ করতে পারছে না।
  • নিজের পরিবার ও দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের যাকাত দেওয়া যাবে না। পিতা-মাতা, দাদা-দাদি, নানি-নানি (উর্ধ্বতন আত্মীয়), নিজের সন্তান, নাতি-নাতনি (অধস্তন আত্মীয়) এবং স্বামী তার স্ত্রীকে যাকাত দিতে পারবে না, কারণ স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব স্বামীর ওপর ফরজ। তবে স্ত্রী তার স্বামীকে যাকাত দিতে পারবে যদি স্বামী নিঃস্ব হয় এবং স্ত্রী স্বেচ্ছায় সাহায্য করতে চায়।
  • হাশেমি বা নবী মুহাম্মদ (সা.) এর বংশধরকে (আহলে বায়ত) যাকাত দেওয়া যাবে না। রাসূল (সা.) বলেছেন, তার বংশধরেরা (হাশেমি পরিবার) যাকাত গ্রহণ করতে পারবে না। কারণ এটি মুসলমানদের পবিত্র সম্পদ।
  • অবৈধ কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি, যেমন_ কেউ যদি মাদক ব্যবসা, চুরি, সুদখোর বা হারাম ব্যবসায় লিপ্ত থাকে, তাহলে তাকে যাকাত দেওয়া বৈধ নয়। যাকাতের টাকা যেন পাপকাজে ব্যবহৃত না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত।
Link copied!