• ঢাকা
  • বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫, ১২ চৈত্র ১৪৩০, ২৫ রমজান ১৪৪৬

প্রকৃত স্বাধীনতা কোথায়!


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ২৫, ২০২৫, ০৯:২৯ পিএম
প্রকৃত স্বাধীনতা কোথায়!
ছবি: সংগৃহীত

স্বাধীনতা হচ্ছে বহুমাত্রিক ধারণা। যা ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিভিন্নভাবে প্রতিফলিত হয়। এটি শুধু ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে আবদ্ধ কোনো বিষয় নয়। বরং মানসিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রশ্ন ওঠে, প্রকৃত স্বাধীনতা কোথায়? প্রকৃত স্বাধীনতা কি শুধু শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের মধ্যে সীমাবদ্ধ, নাকি এটি ব্যক্তি ও সমাজের অভ্যন্তরীণ অবস্থার সাথেও যুক্ত?

স্বাধীনতা মানে হলো মুক্তি—বাধাবন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা। যেমন_

রাজনৈতিক স্বাধীনতা

রাজনৈতিক স্বাধীনতা বলতে বোঝায় জনগণের শাসন ব্যবস্থার ওপর নিয়ন্ত্রণ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা। একটি রাষ্ট্র যখন পরাধীন থাকে, তখন তার জনগণ বিদেশি শক্তির শাসনে নিপীড়িত হয়। বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করে, কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—এই স্বাধীনতা পূর্ণতা পেয়েছে কি না?

অর্থনৈতিক স্বাধীনতা

একটি দেশের প্রকৃত স্বাধীনতা তখনই অর্জিত হয়, যখন তার জনগণ দারিদ্র্যের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে পারে। যদি মানুষ অর্থনৈতিকভাবে পরনির্ভরশীল হয়, তাহলে রাজনৈতিক স্বাধীনতাও পূর্ণতা পায় না। বাংলাদেশ স্বাধীনের পর অনেক এগিয়েছে, কিন্তু এখনও অনেক মানুষ দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত। তাহলে কি, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা পুরোপুরি এসেছে?

সামাজিক স্বাধীনতা

সমাজে যখন মানুষ জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ বা বর্ণের কারণে বৈষম্যের শিকার হয়, তখন প্রকৃত স্বাধীনতা অপূর্ণ থেকে যায়। একজন নারী যদি রাস্তায় নিরাপদে চলাফেরা করতে না পারেন, একজন সংখ্যালঘু যদি সমাজে ন্যায্য অধিকার না পান, তাহলে কি তারা প্রকৃত অর্থে স্বাধীন?

মানসিক ও চিন্তার স্বাধীনতা

যদি কেউ তার মতামত প্রকাশ করতে ভয় পায়, তাহলে সে প্রকৃত স্বাধীন নাও হতে পারে। মানসিক দাসত্ব অনেক সময় ভৌত দাসত্বের চেয়েও ভয়ংকর। একজন মানুষ যদি নিজের চিন্তা-ভাবনা স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে না পারেন, তাহলে তার স্বাধীনতা সীমিত হয়ে যায়।

স্বাধীনতা অর্জন ও বাস্তবতা

স্বাধীনতা অর্জন একটি কঠিন কাজ, কিন্তু তা সংরক্ষণ ও বাস্তবায়ন করা আরও কঠিন। আমরা দেখেছি, অনেক দেশ স্বাধীনতা অর্জন করলেও রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, দুর্নীতি এবং সামাজিক বৈষম্যের কারণে প্রকৃত স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত থাকে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতা

বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি দুঃশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করে স্বাধীনতা অর্জন করে। কিন্তু স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং সামাজিক অনাচারের কারণে অনেক মানুষ প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ পায়নি।

স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সময়ে সামরিক শাসন, রাজনৈতিক হানাহানি ও গণতান্ত্রিক অবক্ষয় স্বাধীনতাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।

দেশে দারিদ্র্যের হার কমলেও ধনী-গরিবের বৈষম্য প্রকট। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা তখনই আসবে, যখন প্রতিটি নাগরিক তার মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারবে।

দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা, জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য এখনও বিদ্যমান।

স্বাধীনতার অন্তর্নিহিত বাধা

দুর্নীতি ও প্রশাসনিক ব্যর্থতা
যেখানে দুর্নীতি থাকে, সেখানে স্বাধীনতার পূর্ণতা আসে না। দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসন জনগণের অধিকারকে খর্ব করে এবং বৈষম্য তৈরি করে।

শিক্ষা ও সচেতনতার অভাব
যদি জনগণ শিক্ষিত না হয় এবং নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন না থাকে, তাহলে স্বাধীনতা শুধু কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থেকে যায়।

গণতন্ত্রের অপব্যবহার
গণতন্ত্রের নামে যদি একদলীয় শাসন বা স্বৈরাচার কায়েম হয়, তাহলে প্রকৃত স্বাধীনতা হারিয়ে যায়। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, মুক্ত চিন্তার চর্চা এবং সমালোচনার অধিকার না থাকলে স্বাধীনতা অপূর্ণ থাকে।

সামাজিক ও ধর্মীয় কুসংস্কার
কিছু সমাজে কুসংস্কার ও রক্ষণশীল চিন্তাধারা মানুষের স্বাধীনতাকে সীমিত করে দেয়। নারীর অধিকার, ব্যক্তিস্বাধীনতা ও মুক্ত চিন্তা অনেক সময় ধর্মীয় বা সামাজিক গোঁড়ামির কারণে বাধাগ্রস্ত হয়।

প্রকৃত স্বাধীনতা কোথায়?

প্রকৃত স্বাধীনতা তখনই পাওয়া সম্ভব, যখন ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র সকল স্তরে ন্যায়বিচার, সমান অধিকার এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়।

প্রকৃত স্বাধীনতা পেতে হলে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ পেতে হলে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। শিক্ষিত ও সচেতন জনগণ স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারে।
দারিদ্র্য বিমোচনে ব্যবস্থা নিতে হবে। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত হলে মানুষ প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ পাবে। কুসংস্কার, ভ্রান্ত ধারণা ও ভীতির শৃঙ্খল ভেঙে মুক্তচিন্তা চর্চা করতে হবে। পাশাপাশি নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করা, সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত করা এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

Link copied!