ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা নেকী লাভের আশায় নফল ইবাদত করেন। নফল ইবাদতের মাধ্যমে মহান আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের প্রার্থণা করেন। নামাজ, রোজা, সাদকা কিংবা অন্য কোনো মানতের মাধ্যমে নফল ইবাদত করা হয়। এসব নফল আমলের মধ্যে যেগুলো নিজের ওপর আবশ্যক করে নেওয়া হয় সেগুলোই মানত। অর্থাত্ মহান আল্লাহ্ তাআলার দয়া লাভের জন্য ব্যক্তি যখন নিজের উপর কোনো আমল আবশ্যক করে নেন তখনই তা মানত হয়ে যায়। সেই মানত ব্যক্তিতে পূরণ করতে হয়।
ইসলামের হাদিসের তথ্য অনুযায়ী, শরিয়ত আবশ্যক করেনি এমন নফল কোনো আমল নিজের ওপর আবশ্যক করে নেওয়াই হচ্ছে মানত। মানত দুই ধরণের হতে পারে। শর্তযুক্ত এবং শর্তমুক্ত। বিশেষ উদ্দেশ্য পূরণের শর্তে কোনো আমল করার প্রতিজ্ঞা করাই হচ্ছে শর্তযুক্ত মানত। অন্যদিকে শর্ত ছাড়া কোনো আমল নিজের ওপর আবশ্যক করা হচ্ছে শর্তমুক্ত মানত। যা পূরণ করা ওয়াজিব।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, “তারপর তারা যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়, তাদের মানতসমূহ পূরণ করে এবং প্রাচীন ঘরের তাওয়াফ করে। (সুরা হজ: ২৯)”
আল্লাহ প্রিয় বান্দাদের বর্ণনায় আরও বলেছেন,”তারা মানত পূর্ণ করে এবং সেদিনকে ভয় করে যার অকল্যাণ হবে ব্যাপক। (সুরা দাহর: ৭)”
এবার প্রশ্ন হচ্ছে মানত করা টাকা কোথায় দান করা যাবে। হাদিসের তথ্য অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি উদ্দেশ্য পূরণের পরিপ্রক্ষিতে টাকা পয়সা দান করবেন বলে শর্তযুক্ত মানত করেন, তবে মানতের সময় খাত উল্লেখ করতে হবে। যেমন উদ্দেশ্যটি পূরণ হলে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা মসজিদে দান করবেন কিংবা দরিদ্রদের দান করবেন বলে মানত করেন তবে সেই অনুযায়ী তা পূরণ করতে হবে।
কিন্তু কোনো ব্যক্তি যদি মানত করার সময় খাত নির্ধারণ করে উল্লেখ না করেন তবে সেই টাকা মসজিদে দান করা যাবে না। বরং ওই নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা যাকাতের খাতে দান করতে হবে। এক্ষেত্রে নি:স্ব-দরিদ্রের মধ্যে দান করা যেতে পারে।
প্রিয় রাসুল (সা.) বলেছেন, কেউ ভালো কাজের মানত করলে সে যেন তা পূর্ণ করে। আর কেউ গুনাহের মানত করলে সে যেন তা পূর্ণ না করে। (সহিহ বুখারি: ৬৬৯৬)
আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে মানত করা যাবে না। অন্যের নামে মানত করলে শিরক হবে। অনেক মুসল্লি মাজারে টাকা দেওয়ার মানত করেন। এক্ষেত্রে কোনো নেক কাজের উদ্দেশ্যে মানত করতে হবে। কোনো ধরণের গুনাহ বা গুনাহের কাজের নিয়তে মানত করা যাবে না। হাদিসের তথ্যমতে, কেউ যদি শিরক বিদআত হয় এমন কোনো মাজারে টাকা দান করার মানত করে, তবে এটা গুনাহের কাজ এবং তা পূরণ করা ওয়াজিব হবে না। এক্ষেত্রে মানত পূরণ না করাই উত্তম।
মানত ভঙ্গের জন্য কাফফারা আদায় করতে হবে। মানতের কাফফারা কসম ভঙ্গের কাফফারার মতো। আর তা হচ্ছে, ১০ জন মিসকিনকে খাদ্য অথবা বস্ত্র দেওয়া অথবা একজন দাস বা দাসী মুক্ত করা। সামর্থ্য না থাকলে ৩ দিন সিয়াম পালন করা। (সুরা মায়েদা, আয়াত : ৮৯)