প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় অনেককিছুই গুরুত্বপূর্ণ। এর একটি হচ্ছে বালিশ। সারাদিনের ক্লান্ত শরীরের বিশ্রাম পেতে বালিশের ভূমিকা অন্যতম। যত আরামের বালিশ, তত আরামের ঘুম। আরামের বালিশে মাথা রাখলেই যেন প্রশান্তির ঘুম পাওয়া যায়। অনেকের তো পৃথক বালিশে ঘুমানোর অভ্যাস। নিজের বালিশ ছাড়া অন্যের বালিশে অনেকের ঘুমও আসে না। তাই জীবনযাত্রায় বালিশের ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না।
বালিশ নিয়ে একেকজনের পছন্দ একেক রকম। কেউ শিমুল তুলার বালিশে ঘুমাতে পছন্দ করেন তো, কেউ আবার ফোম বা ফাইবারের বালিশ পছন্দ করেন। মোট কথা আরামদায়ক বালিশ হতেই হবে। বালিশ নিয়ে এতো মাতামাতি যাদের, তারা জানেন কি এটির উত্পত্তি কবে কখন হয়েছিল? কোথা থেকেই বা এলো বালিশে ঘুমানোর রীতি।
আজ থেকে প্রায় ৯ হাজার বছর আগে বালিশের ব্যবহার শুরু হয়। ওই সময় মেসোপটেমিয়া নামক স্থানের বসবাসকারী মানুষেরা প্রথম বালিশের ব্যবহার করেন। সেই মেসোপটেমিয়া হচ্ছে বর্তমানের ইরাক।
বর্তমান সময়ে আরামদায়ক বালিশ পাওয়া যায় সহজেই। কিন্তু আবিস্কারের শুরুতে সেই প্রাচীন ইতিহাসে বালিশ এতোটা আরামদায়ক বা নরম ছিল না। কারণ ওই সময় বালিশ বানাতে ব্যবহার হতো না তুলা। বরং বালিশ তৈরি হতো শক্ত পাথর দিয়ে। পাথরের তৈরি বালিশ দিয়েই ঘুমাতেন প্রাচীন মানুষ।
বিশ্বের প্রথম বালিশটি ছিল এমনই। পাথরের মাঝের অংশকে অর্ধেক চাঁদের মতো আকার দেওয়া হতো। সেই খাঁজে মাথা রেখে ঘুমাতেন প্রাচীন মানুষেরা। প্রাচীন মিশরেও এই বালিশের ব্যবহার ছিল। মিশরের বাসিন্দাদের ধারণা ছিল, মানুষের মস্তিষ্ক এক আধ্যাত্মিক অংশ। যার কারণে শক্ত পাথরের অর্ধ চন্দ্র আকৃতির বালিশে ঘুমাতেন। কারণ এই আধ্যাত্মিক অংশকে কোনোভাবেই মাটিতে রাখা যাবে না।
কালের বিবর্তনে চীনে বালিশের ব্যবহার শুরু হয়। সেখানে বালিশ বানানো হতো কাঠ দিয়ে। কাঠে নানা ধরণের নকশা করে বালিশ বানানো হতো। ওই সময় চীনের মানুষেরা শক্ত বালিশ পছন্দ করতেন। তাদের ধারণা ছিল, শক্ত বালিশে মাথা রাখলে শরীরে শক্তির সঞ্চার করে। পরবর্তী সময়ে তারা বাসন, বাঁশ এবং ব্রোঞ্জ বা জেডের মতো মূল্যবান উপকরণ দিয়েও বালিশ বানানো শুরু করে। যা ছিল অত্যন্ত শক্ত।
একে একে বালিশের ব্যবহার শুরু হয় প্রাচীন গ্রিস ও রোমে। এসব দেশে প্রথম কাপড়ের বালিশের চল শুরু হয়। কাপড়ের বালিশের ভেতরে দেওয়া হতো পাখির পালক ও খড়। এতে বালিশ নরম হতো। এদিকে গ্রীস এবং রোমের পুরুষরা বালিশ ব্যবহার করতে আপত্তি জানাতেন। কারণ তারা বালিশ ব্যবহার করাকে দুর্বলতার লক্ষণ মনে করতেন। গর্ভবতী নারীরা শুধু সেই নরম বালিশ ব্যবহার করতেন। তাদের জন্য নরম কুশনও বানানো হতো।
বালিশের ব্যবহার থাকলেও তা শুধু ধনীদের মধ্যেই ছিল। রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর এবং মধ্যযুগের সময় বালিশ তেমন ব্যবহার হতো না। যারা সমাজে ধনী ছিলেন তারাই বিশেষভাবে দামি কাপড় দিয়ে বালিশ তৈরি করে নিয়েছেন। সেই সময় বালিশ ছিল আভিজাত্যের অংশ।
শিল্প বিপ্লবের পর বালিশের ব্যবহার আর তৈরিতে বিশাল পরিবর্তন আসে। ১৯৬০ এর দশকে পলিয়েস্টার কাপড়ে উদ্ভব হয়। সেই সময় থেকে বালিশ তৈরিতে ব্যবহার হতে থাকে সিন্থেটিক কাপড়। এর ভেতরে ফোম, স্টাইরোফোম পেলেট এবং কুলিং জেল দেওয়া হতো। বালিশকে আরামদায়ক করতে ভেতরে দেওয়া হতো বাকউইট হুল এবং শুকনো ল্যাভেন্ডার পড। সেই বালিশে আরামে ঘুমানো যেত এবং ঘাড়ের ব্যথাও উপশম হতো।
কালের বিবর্তনে এখন অনেক পরিবর্তন এসেছে বালিশে। বালিশ তৈরিতে এখন শিমুল তুলা, উন্নতমানের ফাইবারের ব্যবহার হয়। এমনকি বালিশের সৌখিনতার ছোঁয়াও দেখা যায় আধুনিক যুগে। ছোট-বড়, চারকোণা-গোলসহ বিভিন্ন আকৃতির বালিশ এখন লোকপ্রিয় হয়েছে। অনেক রকম পরিবর্তন হয়ে বর্তমান আকার ধারণ করে এখন জীবনযাত্রার অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে বালিশ।
সূত্র: ভেরল ম্যাট্রিক্স