• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১, ৭ রবিউস সানি ১৪৪৬

সপ্তমী পূজার আচার-রীতিতে যা যা থাকে


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ১০, ২০২৪, ০১:০০ পিএম
সপ্তমী পূজার আচার-রীতিতে যা যা থাকে
ছবি: সংগৃহীত

দুর্গাপূজার সপ্তমী তিথি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দিন থেকেই মূল পূজার কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হয়। ষষ্ঠীর পর সপ্তমী তিথিতে দেবী দুর্গার পূজার উৎসব আরও বেশি মহিমায় উদযাপিত হয়। সপ্তমী পূজা দেবীর মহিষাসুরমর্দিনী রূপের পূজা হিসেবে পরিচিত। যেখানে তাকে অসুর শক্তি ধ্বংস করার প্রতীক হিসেবে পূজা করা হয়। এ দিনটিতে বিভিন্ন আচার, পুজোপাঠ, এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেবীর প্রতি ভক্তি নিবেদন করা হয়। নবপত্রিকা স্থাপন থেকে শুরু করে প্রাণ প্রতিষ্ঠা এবং মহাস্নান পর্যন্ত প্রতিটি আচার দেবীর পূজাকে পূর্ণতা দেয়। পূজার আনন্দ, উৎসব এবং ভক্তির মেলবন্ধন এই দিনটিকে করে তোলে বিশেষ এবং মহিমান্বিত। সপ্তমী পূজার আচার ও রীতিতে যা যা থাকে_

নবপত্রিকা স্নান ও স্থাপন

সপ্তমীর দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আচার হলো নবপত্রিকা স্নান ও স্থাপন। নবপত্রিকা হলো দেবী দুর্গার  প্রতীকী রূপ। যেখানে নয়টি বিশেষ পাতা একসঙ্গে বেঁধে দেবীকে পূজা করা হয়। এর মধ্যে কলাগাছটি সবচেয়ে প্রধান, যাকে "কলাবউ" বলা হয়। এই নবপত্রিকাকে সূর্যোদয়ের আগে নদী বা পুকুরে নিয়ে স্নান করানো হয়। যা একটি পবিত্র আচার হিসেবে পালন করা হয়। এরপর নবপত্রিকাকে শাড়ি পরিয়ে, দেবীর প্রতিমার পাশে স্থাপন করা হয়। নবপত্রিকা স্থাপন দেবী দুর্গার নব রূপের প্রতীক, এবং এটি আর্দশভাবে সপ্তমী পূজার সূচনা করে।

প্রাণ প্রতিষ্ঠা

সপ্তমীর দিনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আচার হলো প্রাণ প্রতিষ্ঠা, যেখানে দেবীর মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এটি হলো দেবীকে মূর্তির মাধ্যমে বাস্তবিক রূপে আনার আচার। মন্ত্রপাঠ এবং বিশেষ পূজার মাধ্যমে দেবীকে আহ্বান করা হয়, যাতে তিনি পূজা গ্রহণ করতে মণ্ডপে উপস্থিত হন। এই আচার দেবী দুর্গার উপস্থিতির সূচনা হিসেবে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

মহাস্নান

প্রাণ প্রতিষ্ঠার আগে দেবীর প্রতিমায় মহাস্নান করা হয়। মহাস্নানের মাধ্যমে দেবীকে পবিত্র পানি, দুধ, মধু এবং বিভিন্ন ফলের রস দিয়ে স্নান করানো হয়। এই আচার দেবীর প্রতি ভক্তি এবং তার পবিত্রতা রক্ষার প্রতীক। মহাস্নানের পর দেবীকে নতুন পোশাক ও অলংকার পরানো হয়, যা তাকে নব রূপে সাজিয়ে তোলে।

শোধশোপচার পূজা

দুর্গাপূজার অন্যতম মূল আচার হলো শোধশোপচার পূজা। এটি একটি পূর্ণাঙ্গ পূজার রীতি, যেখানে দেবীকে ষোলটি উপাদান দিয়ে পূজা করা হয়। এর মধ্যে ফুল, ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য (ভোগ), পানীয়, বস্ত্র, অলংকার, এবং পুষ্পাঞ্জলির মতো উপকরণ ব্যবহার করা হয়। এই পূজার মাধ্যমে দেবী দুর্গাকে সসম্মানে পূজা করে তাকে ভক্তির সঙ্গে আহ্বান করা হয়।

পুষ্পাঞ্জলি ও আরতি

সপ্তমীর দিনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আচার হলো পুষ্পাঞ্জলি ও আরতি। ভক্তরা দেবীর সামনে গিয়ে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করেন। যা দেবীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ রীতি। এছাড়াও, সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় ধূপ-ধুনো এবং প্রদীপ জ্বালিয়ে দেবীর আরতি। ঢাকের শব্দ এবং শঙ্খধ্বনির মধ্যে ভক্তরা আরতি করে দেবীকে নিবেদন করেন। এই সময়ে ভক্তরা দেবীর কাছে প্রার্থনা করেন এবং নিজেদের মঙ্গল কামনা করেন।

 সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আনন্দ উদযাপন

সপ্তমীর দিনে পূজা মণ্ডপগুলোতে শুধুমাত্র পূজা আচার নয়, বরং বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও অনুষ্ঠিত হয়। মণ্ডপে নাচ, গান, এবং নাটক মঞ্চস্থ করা হয়, যা পূজার আনন্দকে আরও বাড়িয়ে তোলে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সপ্তমীর রাতে সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের একটি বড় অংশ দেখা যায়। ভক্তরা পূজা মণ্ডপ ঘুরে ঘুরে দর্শন করেন, যা ‘প্যান্ডেল হপিং’ নামে পরিচিত।

ভোগ ও প্রসাদ বিতরণ

সপ্তমীর দিন দেবী দুর্গার উদ্দেশ্যে বিশেষ ভোগ নিবেদন করা হয়। সাধারণত খিচুড়ি, পায়েস, নিরামিষ তরকারি, এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার দেবীকে নিবেদন করা হয়। পূজা শেষে এই প্রসাদ ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়, যা সবাই ভাগাভাগি করে গ্রহণ করে। এই ভোগ ভক্তদের জন্য একটি বিশেষ ধর্মীয় উপাদান, যা তাদের মধ্যে সম্প্রীতি ও ঐক্যের বার্তা বহন করে।

Link copied!