বন্যা একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। প্রতিবছরই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যার পানি ভাসিয়ে দেয় সাধারণ মানুষকে। বন্যার সময় এবং এর পরবর্তী সময়ে বন্যাদুর্গতদের সাহায্যে ত্রাণ বিতরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে কিংবা বন্যা চলাকালীন প্রাণ বাঁচাতে ত্রাণ বিতরণের বিকল্প নেই। বন্যা পরবর্তী সময়ে দুর্গত মানুষেরা তাদের ঘরবাড়ি, খাদ্য, পোশাক, চিকিৎসা ইত্যাদি মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য ত্রাণের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। এইসব ত্রাণ সামগ্রী বন্যাদুর্গতদের চাহিদা অনুযায়ী বিতরণ করলে তারা প্রাথমিকভাবে তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার কিছুটা হলেও পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হবে। তাই ত্রাণ সামগ্রী সঠিকভাবে নির্বাচন এবং বিতরণ করতে হবে। যাতে তা তাদের প্রকৃত চাহিদা মেটাতে পারে। বন্যাদুর্গতদের জন্য জরুরি ত্রাণ উপকরণের তালিকা এবং তাদের ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হলো।
খাদ্যসামগ্রী
বন্যার পর সবচেয়ে জরুরি ত্রাণ উপকরণ হলো খাদ্যসামগ্রী। দুর্গত এলাকায় খাদ্যের অভাব দেখা দেয়। পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই ত্রাণ হিসেবে এমন খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করতে হবে, যা সহজে খাওয়া যায় এবং দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। চাল, ডাল এটি প্রধান খাদ্য এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য সংরক্ষণ করা যায়। চিড়া, গুড়, মুড়ি, বিস্কুট এগুলো দ্রুত খাওয়ার উপযোগী এবং সহজে বহনযোগ্য। এছাড়াও শুকনো খাবার যেগুলো সহজে নষ্ট হয় না এমন খাবার ত্রান হিসেবে দেওয়া যায়। শিশুদের জন্য দুধের গুঁড়া ও সেরেল্যাক সরবরাহ করা যেতে পারে।
বিশুদ্ধ পানি কিংবা পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট
বন্যার সময় বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দেয়। ফলে পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি বাড়ে। তাই দুর্গতদের জন্য বোতলজাত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে। এছাড়াও যদি বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ করা সম্ভব না হয়, তাহলে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা যেতে পারে। এটি সহজে ব্যবহৃত হয় এবং দূষিত পানি পানযোগ্য করতে সহায়ক।
পোশাক
বন্যার পানির কারণে দুর্গত মানুষের পোশাক নষ্ট হয়ে যায়। নতুন বা ভালো মানের পুরাতন পোশাক বিতরণ করা যেতে পারে। এছাড়াও পানির কারণে কিছু স্থানে ঠাণ্ডার মৌসুম থাকে। সেখঅনে কম্বল, সোয়েটার, জ্যাকেট ইত্যাদি শীতবস্ত্র বিতরণ করা যেতে পারে।
প্রাথমিক চিকিৎসা সামগ্রী
বন্যার পরে দুর্গত মানুষেরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। তাই প্রাথমিক চিকিৎসা সামগ্রী বিতরণ করা জরুরি। সাধারণ কিছু ওষুধ যেমন জ্বর, ব্যথা বা গ্যাস্ট্রিকের জন্য প্যারাসিটামল, এন্টাসিড ট্যাবলেট দেওয়া যেতে পারে। কাটা, ছেঁড়া বা ক্ষত নিরাময়ের জন্য অ্যান্টিসেপ্টিক ক্রিম এবং লোশন দেওয়া যেতে পারে। পানিশূন্যতার জন্য অত্যন্ত কার্যকর ওআরএস (ওরাল রিহাইড্রেশন সল্ট) সরবরাহ করা যেতে পারে। এছাড়াও সংক্রমণ প্রতিরোধে মুখোশ এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করা যায়। সবচেয়ে জরুরি ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গুর মতো রোগ প্রতিরোধে মশারী এবং মশা নিরোধক ক্রিম বিতরণ করতে হবে।
স্যানিটারি ন্যাপকিন এবং বাচ্চাদের ডায়াপার
নারীদের জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন এবং শিশুদের জন্য ডায়াপার অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সামগ্রী। বন্যার সময় স্যানিটেশন সমস্যা প্রকট হয়ে ওঠে। তাই এই উপকরণগুলো বিতরণ করা জরুরি।
রান্নার সরঞ্জাম এবং জ্বালানী
দুর্গত এলাকায় রান্নার জন্য সরঞ্জামের প্রয়োজন হতে পারে। হাড়ি, পাতিল, চুলা, ম্যাচ ইত্যাদি সরবরাহ করা যেতে পারে। এছাড়াও জ্বালানির অভাবে রান্না করা কষ্টকর হয়ে পড়ে, তাই শুকনো কাঠ বা কয়লার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
আশ্রয় সামগ্রী
বন্যায় যারা ঘরবাড়ি হারিয়েছেন, তাদের জন্য আশ্রয় সামগ্রী খুবই প্রয়োজন। প্লাস্টিকের ত্রিপল, তাবু, চটের বস্তা ইত্যাদি সামগ্রী দিয়ে অস্থায়ীভাবে তাদের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
শিশুদের খাদ্য এবং খেলনা
শিশুদের জন্য পুষ্টিকর খাবার যেমন দুধের গুঁড়া, সেরেল্যাক, চকলেট ইত্যাদি প্রদান করা যেতে পারে। এছাড়াও শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য কিছু খেলনা বিতরণ করা যেতে পারে।
শিক্ষা উপকরণ
যেসব এলাকায় বন্যার কারণে শিক্ষা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়েছে, সেখানে বন্যা পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের জন্য বই, খাতা, কলম, পেন্সিল, রং পেনসিল ইত্যাদি উপকরণ বিতরণ করা যেতে পারে। যাতে তারা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে।