কর্মব্যস্ত এই সময়ে কাজের চাপ অনেক। চাকরির কারণে দিনের বেশিরভাগ সময় বাইরে কাটে। সে ক্ষেত্রে দিনের অনেকটা সময়েই বাবা কে অথবা মা কে অথবা উভয়কে সন্তানের কাছ থেকে দূরে থাকতে হয়। এসময় আপনার সন্তান হয়ত বাড়ির অন্যদের কাছে থাকে। কিন্তু সন্তানের জীবনে বাবা-মা গুরুত্ব অনেক বেশি। তাই যতই কাজ থাকুক না কেন সন্তানের সঙ্গে আপনার ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে হবে। আপনার সন্তান যেন মানুষের মত মানুষ হতে পারে সে চেষ্টা আপনাকেই করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সন্তানের সঙ্গে আপনার বন্ধন দৃঢ় হতে হবে। আর সন্তানের সঙ্গে আপনার বন্ধন বাড়াতে কিছু কৌশল খেয়াল রাখতে হবে-
শিশুর কথা শুনুন
শিশুদের পৃথিবীতে আগমন খুব বেশি দিনের না। এই অল্প সময়ে সব কিছু তাদের কাছে নতুন। ছোট ছোট জিনিসও তাদের কাছে খুব জরুরি ও গুরুত্বের বিষয় হতে পারে। সেসব বিষয় হয়ত আপনার কাছে তুচ্ছ। তুচ্ছ মনে হলেও সেগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনুন। তার প্রশ্নের উত্তর ধৈর্য ধরে দিন। আপনি বিরক্ত হয়ে কথা বললে সে হয়ত আপনার কাছে আর এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে আসবে না। তাই বন্ধন বাড়াতে চাইলে সন্তানের কথা ধৈর্য্য ধরে শুনুন।
নিজের কথা বলুন
সারাদিন বাইরে থাকেন। বাসায় ফিরে শুয়ে পড়লেন বা মোবাইলে ব্যস্ত হয়ে গেলে হবে না। বাড়িতে আসার পর সন্তানকে নিজের সারাদিনের কর্মকাণ্ডের কথা বলুন। আপনি বাইরে কী কী কাজ করেছেন, কীভাবে ফিরেছেন– সবই তাকে জানাতে হবে। তাহলেই দেখবেন সেও আপনাকে নিজের সারাদিনের সব ঘটনা একবারে ঠিক ঠিক ভাবে বলবে। তার কথা শোনার পর প্রয়োজন মনে হলে কিছু পরামর্শও দিতে পারেন। তাহলেই ধীরে ধীরে আপনার সঙ্গে তার বন্ধন আরও কয়েকগুণ পোক্ত হয়ে উঠবে। এবং এই অভ্যাস বড় হলেও থাকবে। আপনার কাছে তার ভালো খারাপ সব বিষয় শেয়ার করবে।
একসঙ্গে সময় কাটান
সারাদিনে অফিসে কাজের অনেক চাপ থাকে, বাড়ি ফেরে ক্লান্ত হয়ে যান। তবে তারপরও রাতে বাড়িতে আসার পর অবশ্যই সন্তানের সঙ্গে সময় কাটান। এই সামান্য কাজটা করলেই তার সঙ্গে আপনাদের বন্ধন দৃঢ় হবে। সে বুঝতে পারবে যে আপনাদের কাছে তার গুরুত্ব ঠিক কতটা! তারপর ধীরে ধীরে সে নিজের ভালো-মন্দ সমস্ত কিছু ভাগ করে নেবে। আর বাবা-মা হিসাবে আপনার আর কী চাওয়া-পাওয়া থাকতে পারে বলুন তো
খেলতে যান
বাচ্চারা খেলতে ভালোবাসে। তাই বাড়ি ফেরে তার সঙ্গে একটু খেলা করুন। ছুটির দিন গুলোতে বাইরে নিয়ে যান, আউট ডোর গেইমস চর্চা করুন।
সন্তানের কাছেও পরামর্শ চান
আপনার সন্তান ছোট তাই বলে তাকে কোন কিছু জানাবেন না বা তার কাছে জানতে চাইবেন না তা ঠিক না। চেষ্টা করুন ছোটখাট বিষয়ে তার পরামর্শ নেওয়ার। যেমন ধরুন, তাকে আপনি আজ বাড়িতে কী রান্না হবে, এই বিষয়টা জিজ্ঞেস করতেই পারেন। তারপর তার মতামত মেনে নিয়ে রান্না হোক বাড়িতে। তাহলেই সন্তান বুঝবে তার মতামতও আপনাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। তারপরই আপনাদের মধ্যে ভালোবাসার বন্ধন আরও পোক্ত হবে।
জড়িয়ে ধরুন
আলিঙ্গন মস্তিষ্কের বিকাশে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে, অক্সিটোসিন ও সেরোটোনিনের মাত্রা বাড়ায়, শিশুদের সামাজিক ও মানসিক বিকাশের উন্নতি ঘটায়, স্বাস্থ্যকর অভ্যাস ও আচরণকে উৎসাহিত করে। যে শিশুরা বেশি আলিঙ্গন পায় তারা নিরাপদ বোধ করে এবং দেখা যায়, পরবর্তী বয়সে তারা বিভিন্ন আবেগ আরও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়।
পড়ুন
সারাদিন কাজের অনেক ব্যস্ততা থাকলেও চেষ্টা করুন বাড়িতে ফেরে তার সঙ্গে একটা বই পড়তে। তাকে পড়ে শুনান। বা তাকে পড়তে বলুন। শৈশব থেকে সন্তানকে নিয়ে লাইব্রেরিতে যান। ভালো বই কিনুন। এতে যেমন তার বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠবে তেমনি আপনার সঙ্গেও তার বন্ধন দৃঢ় হবে।