প্রতিবছর বজ্রপাতে বহু মানুষ নিহত ও আহত হন। বিশেষ করে এপ্রিল থেকে জুন মাসে বজ্রপাতের সংখ্যা ও তীব্রতা বেড়ে যায়। খোলা মাঠ, কৃষিকাজ, জেলেদের নদীতে থাকা, মোবাইল ফোন ব্যবহার এসবই ঝুঁকি বাড়ায়। তাই সচেতনতা ও সঠিক প্রস্তুতি বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অত্যন্ত জরুরি। চলুন জেনে নিই, বজ্রপাত থেকে বাঁচতে কী কী করণীয়:
খোলা মাঠ ও উঁচু স্থানে অবস্থান নয়
বজ্রপাত মূলত উঁচু ও খোলা জায়গায় বেশি আঘাত হানে। তাই মাঠে কৃষিকাজ করা অবস্থায় বজ্রপাত শুরু হলে যতদ্রুত সম্ভব নিচু জায়গা বা বাড়ির ভেতরে আশ্রয় নিন। কোনো গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি বা টাওয়ারের নিচে দাঁড়াবেন না। এগুলো বজ্রপাত আকর্ষণ করে।
বজ্রপাত হলে ঘরের ভেতর থাকুন
বজ্রপাতের সময় সবচেয়ে নিরাপদ স্থান হলো সুরক্ষিত ঘরের ভেতর। জানালা-দরজা বন্ধ রাখুন। ঘরের ভেতর ধাতব বা বৈদ্যুতিক কিছু স্পর্শ করবেন না। টিভি, ফ্রিজ, মাইক্রোওভেন ইত্যাদি বৈদ্যুতিক যন্ত্র বন্ধ রাখুন এবং সম্ভব হলে মূল সুইচ অফ করুন।
মোবাইল ফোন ও ইয়ারফোন ব্যবহার বন্ধ রাখুন
অনেকে বজ্রপাতের সময় মোবাইল ফোন কানে নিয়ে কথা বলেন বা ইয়ারফোনে গান শোনেন, যা বিপজ্জনক হতে পারে। খোলা জায়গায় মোবাইল ব্যবহার না করাই ভালো। ঘরের ভেতরে থাকলেও বজ্রপাত চলাকালে চার্জে দেওয়া ফোন ব্যবহার করা উচিত নয়।
গাড়ি বা বাসে থাকলে কী করবেন
যদি বজ্রপাতের সময় আপনি কোনো গাড়ি বা বাসে থাকেন তবে জানালা বন্ধ রাখুন। গাড়ির ধাতব অংশ স্পর্শ করবেন না। গাড়ির রাবার চাকা ভূমির সঙ্গে সম্পূর্ণ সংযোগ না থাকায় অনেক সময় এটি অপেক্ষাকৃত নিরাপদ হয়, তবে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় এটি বজ্রপাত আকর্ষণ করতে পারে।
জলাশয়ের পাশে না থাকা
বজ্রপাতের সময় নদী, পুকুর বা জলের ধারে থাকা খুব ঝুঁকিপূর্ণ। জল বিদ্যুৎ পরিবাহক, তাই মাছ ধরার সময় বজ্রপাত শুরু হলে যত দ্রুত সম্ভব পানি থেকে উঠে নিরাপদ স্থানে যান। বজ্রপাত শুরু হলে নৌকা তীরে ভেড়ান।
বজ্রপাতের পূর্বাভাস জানুন
বর্তমানে আবহাওয়া অফিস বজ্রপাতের সম্ভাব্য এলাকা ও সময় সম্পর্কে পূর্বাভাস দিয়ে থাকে। টিভি, রেডিও, মোবাইল অ্যাপ বা অনলাইন সংবাদমাধ্যমে নজর রাখুন। হঠাৎ বাতাস ঠান্ডা হয়ে গেলে, আকাশ ঘন মেঘে ছেয়ে গেলে এবং বিদ্যুৎ চমক দেখা দিলে ধরে নিতে পারেন বজ্রপাত হতে পারে।
বজ্রপাত হলে নিজেকে গুটিয়ে রাখুন
খোলা জায়গায় থাকলে একদম শুয়ে পড়বেন না। বরংহাঁটু মুড়ে বসে দুই হাত কানে চাপা দিয়ে মাথা নিচু করুন। নিজেকে যতটা সম্ভব ছোট রাখুন এবং মাটির সঙ্গে সংযোগ কমিয়ে দিন।
আহতদের সাহায্য করুন
বজ্রপাতের শিকার ব্যক্তিকে দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা দিন। যদি হৃদস্পন্দন বা শ্বাস না থাকে, CPR দিন (প্রশিক্ষিত হলে)। যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যান।