কালী পূজা হিন্দু ধর্মাম্বলীদের অন্যতম উত্সব। এই পূজা মানেই ভক্তি এবং শ্রদ্ধার সঙ্গে দেবী কালীর আরাধনা করা। সঠিক নিয়মে পূজা করতে এবং পূজার উত্সবকে সফল করতে এখনই প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। পূজার দিনটিকে উত্সবমুখর করতে কিছু নির্দিষ্ট জিনিসপত্রের প্রয়োজন হয়। যা আগেই কিনে রাখা জরুরি। প্রতিমা থেকে শুরু করে পূজার উপকরণ, সাজসজ্জা, প্রসাদ এবং সামাজিক আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুর সঠিক পরিকল্পনা করলে পূজার আয়োজন সুন্দরভাবে সফল হয়। পূজার কেনাকাটা মানে শুধুমাত্র দ্রব্য কেনা নয়, এটি একটি গভীর ভক্তির প্রকাশ।
কালী পূজার জন্য় কেনাকাটায় কী কী থাকবে, তা পরিকল্পনা করে নিতে পারেন। চলুন জেনে আসি, পূজার আগেই কী কী কিনতে হবে।
মূর্তি ও প্রতিমা
কালী পূজার প্রধান আকর্ষণ দেবী কালীর মূর্তি। সাধারণত, কুমোরটুলির মতো জায়গা থেকে বা স্থানীয় দোকান থেকে প্রতিমা কেনা হয়। প্রতিমা মাটি, ধাতু, বা ফাইবার দিয়ে তৈরি হতে পারে। বর্তমান সময়ে ছোট আকারের বা ইকো-ফ্রেন্ডলি প্রতিমারও চাহিদা রয়েছে। যা পরিবেশের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়। প্রতিমার আকার ও ধরণ পুজার স্থান এবং আয়োজনের ওপর নির্ভর করে ঠিক করা হয়।
পূজার সামগ্রী
পূজা সামগ্রী কেনাকাটার ক্ষেত্রে কিছু প্রধান উপকরণ যা অবশ্যই লাগবে। পূজার ধোঁয়া দেবীকে নিবেদন করার এক বিশেষ উপায়। ধুনো বা ধূপ জ্বালানোর জন্য ধূপকাঠি এবং ধুনুচি ব্যবহৃত হয়। গঙ্গাজল থাকতে হবে। যা শুদ্ধতার প্রতীক। যা দেবীর আরাধনায় অপরিহার্য। কুমকুম, সিঁদুর ও চন্দন দিয়ে মূর্তিকে সাজাতে হবে। আরতির সময় দেবীর পায়ে প্রলেপ দিতে হবে। পঞ্চপ্রদীপে ঘি বা তেল দিয়ে প্রদীপ জ্বালানো হয়। ঘি বাতি পূজায় শুভ লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়। কাঁচা সুতো পূজার একাধিক কাজে ব্যবহৃত হয়। দেবীর আরাধনার সময় সুতো বাধা বা পূজার আসনে সুতো দেওয়া হয়। কলা, নাড়ু, নারকেল, বেলপাতা, হিবিস্কাস ফুল, মল্লিকা, এবং তুলসী পাতা পূজায় অপরিহার্য। এগুলি দিয়ে দেবীকে অর্ঘ্য নিবেদন করা হয়। এছাড়াও পূজার সময় শঙ্খ বাজানো শাস্ত্রীয়ভাবে শুভ মনে করা হয়।
মিষ্টি ও প্রসাদ
পূজার শেষে ভক্তদের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। কালী পূজার ক্ষেত্রে নাড়ু, নারকেল মিষ্টি, রসগোল্লা, সন্দেশ এবং কচুরি বিশেষভাবে জনপ্রিয়। বিভিন্ন ধরণের মিষ্টি পূজা শেষে দেবীকে নিবেদন করা হয়। এছাড়া বাড়ির রান্না করা ভোগও প্রসাদ হিসেবে নিবেদন করা হয়। চিড়া, মুড়ি, খিচুড়ি ইত্যাদিও প্রসাদের মধ্যে রাখা হয়। তাই পূজা শুরুর আগেই এসব খাবার কিনে রাখুন।
পূজার বস্ত্র ও সাজসজ্জা
দেবী কালীর পূজায় সঠিক সাজসজ্জা এবং পোশাক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাধারণত, দেবীর মূর্তিতে লাল বেনারসি বা কালো বেনারসি শাড়ি পরানো হয়। এছাড়া, সোনালি গয়না এবং মালা দিয়ে মূর্তিকে সাজানো হয়। পূজার আয়োজনকর্তা বা পরিবারের সদস্যরা পূজার সময়ে নতুন পোশাক পরেন। নারীরা শাড়ি এবং পুরুষরা ধুতি ও পাঞ্জাবি পরতে পছন্দ করেন। তাই কালী পূজা উপলক্ষে নতুন পোশাকের কেনাকাটা এখনই সেরে নিন।
পুজোর আসন ও স্থানসজ্জা
দেবীর প্রতিমা স্থাপনের জন্য একটি সুন্দর ও সজ্জিত আসন প্রয়োজন। এটি সাধারণত মাটি, কাঠ, বা প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি হয় এবং ফুল ও আলো দিয়ে সাজানো হয়। পুজোর স্থানকে সুন্দরভাবে সাজাতে নানা রঙের তোরণ ও প্যান্ডেল তৈরি করা হয়। আলোকসজ্জা পূজার পরিবেশকে আরও সুন্দর করে তোলে। মোমবাতি, রঙিন লাইট এবং ডেকরেটিভ আলো কালী পূজার মণ্ডপ সাজানোর প্রধান উপাদান। এগুলো কিনে রাখুন।
আরতি ও সঙ্গীত উপকরণ
কালী পূজায় ধুনুচি নাচ ও আরতি প্রধান উৎসবের অংশ। এর জন্য ঢাক, ঢোল, শাঁখ, করতাল, কাঁসি, ঘণ্টা এসব বাজনা লাগে। ঢাকিরা ধুনুচি নাচের সময়ে বিভিন্ন সুরে বাজিয়ে পরিবেশ আরও জীবন্ত করে তোলেন। ঢাক ও শঙ্খধ্বনি পূজার বিশেষ পরিবেশ তৈরি করে। এগুলোর ব্যবস্থা আগেই করে রাখুন।
সামাজিক আয়োজন
আজকাল অনেকেই কালী পূজার সঙ্গে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য মঞ্চ, সাউন্ড সিস্টেম, মাইক্রোফোন এসবও কেনাকাটার তালিকায় রাখা যায়। এই আয়োজন পূজার আনন্দকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
পুজোর পাণ্ডুলিপি ও বই
পূজা সঠিক নিয়ম মেনে করতে হলে পাণ্ডুলিপি বা পূজার বই অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এতে দেবীর মন্ত্র, পূজার নিয়মাবলী এবং প্রণাম পাঠ করা থাকে, যা পুরোহিত বা পূজারীরা অনুসরণ করেন।
নিরাপত্তা ও পরিষেবা সামগ্রী
পুজোর মণ্ডপে নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য আগুন নিভানোর সরঞ্জাম, পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা এবং প্যান্ডেলের যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক।