সন্তান বড় হলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার শুরু হয়। বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তির প্রস্তুতি নিতে হয়। ছোট থেকেই এখন বাচ্চারা স্কুলে যাওয়া শুরু করে। অনেকে বাচ্চাকে প্রি স্কুলেও পাঠাচ্ছেন। সন্তানকে কোন বয়সে তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু করবেন সেই সিদ্ধান্ত বাবা মা নিবেন। তবে সঠিক বয়সে স্কুলে পাঠাতে আগেই কিছু প্রস্তুতি নিতে হবে। কারণ বাচ্চার স্কুলজীবন শুরুর মুহূর্তটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকটা চ্যালেঞ্জিংও বটে।
শিশুকে নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া, নতুন বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা, লেখাপড়ার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া সবকিছুই অভ্যস্ত করাতে হয়। স্কুলে ভর্তির পূর্ব প্রস্তুতি থাকলে পরিস্থিতি সামলে নেওয়া কিছুটা সহজ হয়। স্কুলে ভর্তি শিশুর সামাজিক, মানসিক এবং শারীরিক বিকাশও ঘটায়। তাই সবদিক থেকেই বাচ্চাকে প্রস্তুত করে নেওয়া বাবা-মায়ের দায়িত্ব।
বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তির আগে যেভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে, চলুন জেনে আসি এই আয়োজন-
স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও টিকাদান
বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তির আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো উচিত। শিশুর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক আছে কিনা, তা পরীক্ষা করে দেখা জরুরি। যেকোনো সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। টিকাদানের নিয়মিত আপডেটও নিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন রোগ থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য বাচ্চার প্রয়োজনীয় টিকা যেমন, ডিপথেরিয়া, টিটানাস, হেপাটাইটিস-বি, হুপিং কফের টিকা দিতে হবে। এতে শিশু পড়াশোনায় মনোযোগী হতে পারবে।
মানসিক প্রস্তুতি
স্কুলে ভর্তির আগে বাচ্চাকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর বয়স ও বিকাশ অনুযায়ী তাকে স্কুলের পরিবেশ সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে। শিশু যদি প্রথমবার স্কুলে যায়, তাকে স্কুলের নিয়ম কানুন, শিক্ষক, সহপাঠী এবং ক্লাসের পরিবেশ সম্পর্কে জানাতে হবে। কিছু গল্প বা কার্টুনের মাধ্যমে স্কুলের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বাচ্চাকে আগ্রহী করে তোলা যেতে পারে। এছাড়াও অন্যান্য শিশুদের সঙ্গে খেলতে দেওয়া, শেয়ার করা এবং একে অপরকে সম্মান করা শেখাতে হবে। এতে শিশুর আত্মবিশ্বাস এবং সহযোগিতার মনোভাব গড়ে উঠবে, যা তার স্কুলজীবনে সাহায্য করবে।
স্কুলের নির্দিষ্ট প্রস্তুতি
স্কুলে যাওয়ার আগেই প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নিতে হবে। বাচ্চার জন্য স্কুল ইউনিফর্ম, সঠিক সাইজের ব্যাগ, পানির বোতল, খাতা-কলম, পেন্সিল, ইরেজার, রুলার ইত্যাদি প্রস্তুত রাখতে হবে। কিছু স্কুলে শিশুর বাবা-মায়ের পরিচয়পত্র বা অন্যান্য নথিপত্র জমা দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। তাই আগেই এগুলো ঠিক করে রাখুন। স্কুলের অভ্যন্তরীণ নীতিমালা এবং কীভাবে স্কুলে যাবেন তা জানার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন।
সময়সূচি ও ঘুমের রুটিন
স্কুলে যাওয়ার সময়সূচি অনুযায়ী বাচ্চার ঘুমের রুটিন তৈরি করতে হবে। শিশুরা স্কুলে যাওয়ার জন্য সকাল বেলা ওঠে, তাই রাতের ঘুমের সময়টা ঠিক রাখতে হবে। বাচ্চাকে রাতে আগে আগে ঘুমানোর অভ্যাস করতে হবে। সকালে একই সময় ওঠার অভ্যাস করতে হবে। এটি বাচ্চার শরীরের স্বাভাবিক বিকাশকে সুসংগত রাখবে। তার মনোযোগ বৃদ্ধি করবে।
শিক্ষামূলক খেলা
স্কুলে যাওয়ার আগে শিশুর বুনিয়াদি কিছু শিক্ষামূলক দক্ষতা থাকা উচিত। যেমন অক্ষর এবং সংখ্যা চিনতে পারা, সাধারণ শারীরিক দক্ষতা (যেমন, চলাফেরা, লাফানো ইত্যাদি) এবং হাতের কাজে সক্ষমতা। কিছু পাজল, রঙ করা বা ছবি আঁকা শিশুর মনোযোগ এবং সৃজনশীলতা বাড়াবে। এভাবে শিশুর অঙ্ক, পড়া, লেখার দক্ষতা বাড়ানোর জন্য কিছু সহজলভ্য খেলা বা কার্যকলাপ চালু রাখা উচিত।
বাবা-মায়ের মানসিক প্রস্তুতি
বাচ্চাকে স্কুলে পাঠানোর আগে বাবা-মায়ের মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়া জরুরি। প্রথমদিন স্কুলে যাওয়ার সময় শিশুরা উদ্বিগ্ন থাকতে পারে। বাবা-মাকে ধৈর্য নিয়ে শিশুকে বোঝাতে হবে। এক্ষেত্রে সহানুভূতিশীল থাকা প্রয়োজন। কখনো কখনো শিশুরা প্রথম দিন স্কুলে গিয়ে কাঁদতে পারে। সেক্ষেত্রে তাদের শান্ত রাখতে সহনীয় আচরণ করতে হবে।
শিশুদের সঙ্গে আলোচনা
স্কুলের প্রথম দিনটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটা শিশুর জন্য একটি নতুন অভিজ্ঞতা হতে পারে। শিশুদের সঙ্গে স্কুলের অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলুন। তাদের উদ্বেগ দূর করতে আলোচনা করুন। স্কুলে যাওয়ার অভিজ্ঞতা কতটা মজার হবে, স্কুলে অনেক বন্ধু পাওয়া যাবে, নতুন নতুন জিনিস শেখাবে এসব বিষয়ে শিশুকে জানাতে হবে। শিশুদের ভয় কাটাতে সাহায্য করুন। আপনি যে সবসময় তার সঙ্গে থাকবেন, তা আশ্বস্ত করুন।