পরিবার বা আত্মীয় স্বজনদের কেউ অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া মানবিক দায়িত্ব। তবে রোগীকে দেখতে যাওয়ার সময় সতর্ক থাকাও জরুরি। রোগী এবং হাসপাতালের পরিবেশ সংবেদনশীল হওয়ায় আপনার সামান্য অসচেতনতা রোগীর শারীরিক ও মানসিক অবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই হাসপাতালে রোগী দেখতে গেলে কিছু আচরণ বা কাজ এড়িয়ে চলা উচিত।
বেশি মানুষ নিয়ে যাবেন না
রোগীর কক্ষ বা ওয়ার্ড সাধারণত ছোট জায়গায় হয়। বেশি মানুষ ভিড় করলে রোগী এবং অন্যান্য রোগীর অস্বস্তি হয়। সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।হাসপাতালের কর্মীদের কাজ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
তাই খুব কম সংখ্যক মানুষ রোগী দেখতে যান।
জোরে কথা বলবেন না
রোগী শারীরিক দুর্বলতায় ভুগেন এবং আরাম চান।
জোরে কথা বললে রোগীর বিশ্রামে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। অন্যান্য রোগী এবং হাসপাতালের পরিবেশ বিরক্ত হতে পারে। তাই জোরে কথা বলবেন না।
অপ্রয়োজনীয় আলাপ এড়িয়ে চলুন
রোগী সম্পর্কে নেতিবাচক কিছু বলবেন না
রোগী ইতোমধ্যেই মানসিক চাপের মধ্যে থাকতে পারেন। নেতিবাচক মন্তব্য তাদের আত্মবিশ্বাস এবং মনোবল দুর্বল করতে পারে। রোগীর অবস্থা সম্পর্কে নেতিবাচক বা দুঃখজনক কিছু বলবেন না। বরং তাকে উৎসাহ দিন। ইতিবাচক কথা বলুন।
বেশি সময় ধরে থাকবেন না
রোগী সাধারণত বিশ্রাম চান। বেশি সময় ধরে থাকা তাদের বিশ্রামের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
দীর্ঘ সময় উপস্থিত থাকলে হাসপাতালের নিয়ম ভঙ্গ হতে পারে। অল্প সময়ের মধ্যে রোগীর খোঁজখবর নিয়ে চলে যান। রোগী ক্লান্ত দেখালে তাদের কথা বলার জন্য চাপ দেবেন না।
সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াবেন না
হাসপাতালের রোগীরা সাধারণত সংক্রমণের প্রতি বেশি সংবেদনশীল। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব বা সংক্রমিত অবস্থায় রোগী দেখতে গেলে এটি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। রোগী দেখতে যাওয়ার আগে ও পরে হাত ধুয়ে নিন। সর্দি, কাশি বা অন্য কোনো সংক্রমণ থাকলে রোগী দেখতে যাওয়ার আগে পুনর্বিবেচনা করুন।
রোগীর খাবার-পানীয় নিয়ে বাড়াবাড়ি করবেন না
রোগীর খাদ্য বা পানীয় নির্দিষ্ট ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী দেওয়া হয়। অনুমতি ছাড়া খাবার বা পানীয় নিয়ে গেলে তা রোগীর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। ডাক্তারের অনুমতি ছাড়া কোনো খাবার বা পানীয় নিয়ে যাবেন না।
রোগীর সঙ্গে ব্যক্তিগত বা অপ্রাসঙ্গিক আলোচনা করবেন না
রোগী মানসিক ও শারীরিকভাবে দুর্বল থাকতে পারেন। ব্যক্তিগত আলোচনা তাদের মনোবল ভেঙে দিতে পারে। অপ্রাসঙ্গিক বা গুরুতর বিষয়ে কথা বললে তারা উদ্বিগ্ন হতে পারেন। রোগীকে মানসিক চাপ বা উদ্বেগ তৈরি করে এমন কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন না। ইতিবাচক এবং আনন্দদায়ক আলোচনা করুন।
হাসপাতালের নিয়ম ভঙ্গ করবেন না
হাসপাতালের নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন রোগীর সুরক্ষা এবং আরামের জন্য তৈরি করা হয়। নিয়ম ভঙ্গ করলে রোগী বা হাসপাতালের অন্যান্য রোগীদের ক্ষতি হতে পারে। তাই ভিজিটিং আওয়ারের বাইরে রোগী দেখতে যাবেন না। হাসপাতালের নীতিমালা মেনে চলুন।
রোগীর উপর কোনো চাপ প্রয়োগ করবেন না
রোগী ইতোমধ্যেই মানসিক ও শারীরিক চাপের মধ্যে থাকেন। অতিরিক্ত প্রশ্ন বা অপ্রয়োজনীয় অনুরোধ রোগীর জন্য কষ্টকর হতে পারে। রোগীকে কথা বলার জন্য জোর করবেন না। তাদের কোনো কাজ করানোর জন্য চাপ প্রয়োগ করবেন না।
রোগীর অবস্থা তুলনা করবেন না
প্রতিটি রোগীর অবস্থা ভিন্ন। তাদের অবস্থার সঙ্গে অন্য কারো অবস্থা তুলনা করা মানসিক কষ্ট দিতে পারে। রোগীর অসুস্থতাকে ছোট বা বড় করে দেখাবেন না।
বেশি সময় ধরে বসে থাকা
রোগীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকলে তা রোগীর বিশ্রামে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। বিশেষ করে যদি রোগীর সঙ্গে একাধিক দর্শনার্থী একসঙ্গে দেখা করতে চান। সময় বাঁচিয়ে প্রয়োজনীয় কথা বলে চলে আসুন।
হাসপাতালে ধূমপান বা দুর্গন্ধযুক্ত কিছু ব্যবহার করবেন না
হাসপাতালের পরিবেশে ধূমপান বা যেকোনো ধরনের তীব্র দুর্গন্ধযুক্ত জিনিস (যেমন পারফিউম) ব্যবহার করা উচিত নয়। এটি শুধু রোগীর নয়, আশেপাশের অন্য রোগীদের জন্যও ক্ষতিকর হতে পারে।
শিশুদের নিয়ে যাবেন না
ছোট শিশুদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন। তারা পরিবেশের প্রতি সংবেদনশীল নয় এবং তাদের আওয়াজ বা অস্থিরতা রোগী ও আশেপাশের মানুষের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।