• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আম সম্পর্কে যা জানেন না অনেকেই


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ২৯, ২০২৪, ০৬:৩০ পিএম
আম সম্পর্কে যা জানেন না অনেকেই
ছবি: সংগৃহীত

বছরের এই সময়েও আম খাওয়ার ধুম কমেনি। ঋতু চক্রের সুবাদে একেক সময় একেক জাতের আমের ফলন হয়। স্বাদের ভিন্নতাও রয়েছে এসব আমের। ভিন্ন স্বাদের কারণেই নামও হয় ভিন্ন। আকৃতি, ধরণেও থাকে ভিন্নতা।

আমকে ফলের রাজা বলা হয়। কারণ ছোট-বড়, তরুণ-বৃদ্ধ সবারই ফলের ক্ষেত্রে  প্রথম পছন্দ আম। গ্রীষ্মকালীন ফল হলেও সারাবছরই এখন আম পাওয়া যায়। যা নিয়মিত খেলে স্বাস্থ্যের উপকারিতা পাওয়া যায়। আমে একাধিক পুষ্টি উপকরণ, খনিজ উপাদান ও ভিটামিন রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ফলকে কমপ্লিট ফুড বলা হয়।

আমে রয়েছে ২০ টি ভিন্ন ভিন্ন ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ। যার মধ্যে অধিক পরিমাণে ভিটামিন এ, পটাশিয়াম এবং ভিটামিন বি এর একটি উপাদান ফোলাইট রয়েছে। ভিটামিন এবং পুষ্টি উপকরণে ভরপুর আমের ফল শুরু হয় প্রায় ৪০০০ বছর আগে। হিমালয় পর্বতমালার পাদদেশে ভারত এবং মিয়ানমারে প্রথম বন্য আম উৎপন্ন হয়। প্রথমদিকে আমের চাষ করা হয় ভারতের দক্ষিণ অংশ, মিয়ানমার এবং আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে।

কাঁচা আম বা সবুজ আমে মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। যুক্তরাজ্যে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস-এর প্রস্তাব অনুযায়ী, ১৯ থেকে ৬৪ বছরের পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ৪০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি প্রয়োজন। এক কাপ আমে ৬০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে।

আপেল বা বরই-এর মতোই আমে নানা বৈচিত্র্য থাকে। বহু বৈচিত্র্যময় জাতের আম রয়েছে। অঞ্চল ভেদে রয়েছে স্বতন্ত্র জাতও। আম তিনটি দেশের জাতীয় ফল। পাকিস্তান, ভারত আর ফিলিপাইনের জাতীয় ফল এটি।

"ম্যাঙ্গো" শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে ভারতে। তামিল ‍‍`ম্যানকেই‍‍` কিংবা তামিল ‍‍`মানগা‍‍` শব্দ থেকে এসেছে। ১৫০০ শতকে পর্তুগিজ শাসনে  ভারতের গোয়া রাজ্যের রাজধানী ছিল পানজিম। সেখানেই ইউরোপিয়ানরা আমের স্বাদ গ্রহণ করে। পর্তুগিজ ব্যবসায়ীরা ওই সময় দক্ষিণ ভারতে বসবাস শুরু করে। তারাই নাম হিসেবে ‍‍`ম্যাংগা‍‍` শব্দটির ব্যবহার শুরু করে। এরপর ব্রিটিশরা ১৫শ এবং ১৬শ শতকের দিকে ভারতে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে ব্যবসা শুরু করে। ওই সময় ‍‍`ম্যাঙ্গো‍‍` শব্দটির জন্ম হয়।

সারাবিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৪৬ মিলিয়ন টন আম উৎপন্ন হয়। যা অধিকাংশই টমি এটকিন্স জাতের আম। যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। আকারে বড় এবং রঙ সুন্দর হয়।

ভারতে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আম উৎপন্ন হয়। সেখানে বছরে ১৮মিলিয়ন টন আম উৎপন্ন হয়। যা বিশ্বের মোট আম উৎপাদনের ৪০%। আন্তর্জাতিকভাবে বাণিজ্যে এক শতাংশেরও কম আম তারা রপ্তানি করে। আর বেশিরভাগই দেশের অভ্যন্তরের চাহিদায় লাগে।

দশম শতাব্দীর শুরুর দিকে আফ্রিকাতে আমের চাষ হয়। সবচেয়ে প্রাচীন আম গাছটি বেঁচে আছে শতাব্দী পর শতাব্দী জুড়ে। সেই গাছটির  বয়স প্রায় ৩০০ বছর। মধ্য ভারতের পূর্ব কান্দেশে আছে গাছটি। প্রাচীনতম এই গাছটিতে এখনও ফলন হয়।

এছাড়াও আম  ‍‍`নাট‍‍` গোত্রের ফল। কাজুবাদাম, পেস্তা- এই দুই বাদামের নিকটতম প্রতিবেশী হলো আম। কারণ এই তিনটি উপাদানের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে।

গিনেস বুক রেকর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালে ফিলিপাইনের সার্জিও ও মারিয়া সিকোরো বোডিওনগানের বাগানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আমের ফলন হয়। যার ওজন ৩.৪৩৫ কেজি। আর দৈর্ঘ্য ৩০.৪৮ সেন্টি মিটার। পরিধি ৪৯.৫৩ সেমি এবং প্রস্থ ছিল ১৭.১৮ সেমি।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা আম গাছকে পবিত্র বলে মনে করেন। বলা হয়, বুদ্ধ তার সঙ্গী সন্ন্যাসীদের নিয়ে এক শান্তিময় আম বাগানে বসে ধ্যানরত ছিলেন। সেখানেই বিশ্রাম নিয়েছিলেন। তাই বৌদ্ধদের কাছে আম গাছ পবিত্র বৃক্ষ হিসেবে বিবেচিত।

Link copied!