বিশ্বজুড়ে প্রতিনিয়তই নতুন নতুন ভাইরাসের আবির্ভাব ঘটে। গন্ডি পেরিয়ে ভাইরাসের সংক্রমণ দেশেও ছড়িয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে আক্রান্ত হতে থাকে সাধারণ মানুষ। একপর্যায়ে তা মহামারি আকার ধারণ করে। থেমে যায় জীবনযাত্রা। অনিশ্চিত হয়ে পড়ে কর্মজীবন। সবমিলিয়ে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়। কোভিড ১৯ এর পর এমনই চিত্র দেখা গেছে। সম্প্রতি নতুন ভাইরাসের সংক্রমণ চড়াও হয়ে উঠছে। যার উত্পত্তিও হয়েছে চীন থেকেই। ইতোমধ্যে এই ভাইরাসের সংক্রমণ বাংলাদেশেও দেখা যাচ্ছে। তাই ভয়বহতা ছড়িয়ে পড়ার আগেই সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা জানান, যেকোনো ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে দৈনন্দিন জীবনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়মকানুন ও অভ্যাস মেনে চলা প্রয়োজন। ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা থেকে শুরু করে সামাজিক আচরণ এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা
এটি ভাইরাস প্রতিরোধের প্রথম ধাপ। এই ধাপ মেনে চললে শরীরে ভাইরাস প্রবেশের ঝুঁকি কমে যায়। নিয়মিত সাবান ও পানি দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া অত্যন্ত জরুরি। বাইরে থেকে ফিরে, খাবার খাওয়ার আগে এবং নাক-মুখ স্পর্শ করার পর অবশ্যই হাত ধুতে হবে। হাত ধোয়ার সুযোগ না থাকলে অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। হাত অপরিষ্কার হলে মুখ, নাক বা চোখ স্পর্শ করবেন না। কারণ এসব অঙ্গ ভাইরাস প্রবেশের প্রধান পথ। এছাড়াও মোবাইল ফোন, চশমা, ঘড়ি, এবং অন্যান্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।
সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা
ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব অত্যন্ত কার্যকর। এটি রোগের বিস্তার রোধ করে। জনবহুল স্থান, বাজার, বা যেকোনো ধরনের জমায়েত এড়িয়ে চলুন। অন্যের সঙ্গে কথা বলা বা লাইনে দাঁড়ানোর সময় কমপক্ষে ১-২ মিটার দূরত্ব বজায় রাখুন। করমর্দন, আলিঙ্গন বা অন্য কোনো সরাসরি শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলুন। সবর্দা মাস্ক ব্যবহার করুন। এটি ভাইরাস প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর উপায়। মাস্ক পরার সময় নাক ও মুখ পুরোপুরি ঢেকে রাখা জরুরি। মাস্ক পুনরায় ব্যবহার করার আগে ভালোভাবে ধুয়ে নিন। একবার ব্যবহারযোগ্য মাস্ক ব্যবহারের পর সঠিকভাবে নিষ্পত্তি করুন।
বাইরে থেকে আসার পর সুরক্ষা ব্যবস্থা
বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর সঠিকভাবে সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। বাইরে ব্যবহৃত জুতা ঘরের বাইরে রাখুন। বাইরে থেকে আসার পর ব্যবহৃত পোশাক ধুয়ে ফেলুন। বাইরে থেকে এসে হাত-মুখ ধোয়া বা গোসল করার অভ্যাস করুন।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টি বজায় রাখা
ভাইরাস প্রতিরোধে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। এই সময় সুষম খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার যেমন শাকসবজি, ফলমূল, বাদাম, এবং দুধ খাওয়ার অভ্যাস করুন। ডিম, মাছ, মাংস এবং ডাল খান। পর্যাপ্ত পানি পান করুন। প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।
পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা
ভাইরাস প্রতিরোধে মানসিক স্বাস্থ্য এবং সঠিক বিশ্রাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। মেডিটেশন, যোগব্যায়াম বা প্রিয় কাজে মনোযোগ দিন। এটি মানসিক চাপ কমাবে।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বজায় রাখা
পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা সংক্রমণ রোধে সহায়ক। নিয়মিত জীবাণুনাশক দিয়ে ঘর মোছা এবং দরজার হাতল, সুইচ বোর্ড ইত্যাদি পরিষ্কার করা। ব্যবহৃত টিস্যু বা মাস্ক নির্ধারিত স্থানে ফেলে দিন।
সঠিক তথ্য জানা ও গুজব এড়িয়ে চলা
ভাইরাস সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানুন। যেকোনো গুজবে কান দিবেন না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) পরামর্শ অনুসরণ করুন। ভুয়া তথ্য বা অপপ্রচার থেকে দূরে থাকুন এবং সঠিক উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করুন।
টিকা গ্রহণ
ভাইরাস প্রতিরোধে টিকা অত্যন্ত কার্যকর। সরকার অনুমোদিত টিকা সময়মতো গ্রহণ করুন। নির্ধারিত সময়ে টিকার দ্বিতীয় বা বুস্টার ডোজ গ্রহণ করুন।
বিশেষ পরিস্থিতিতে করণীয়
বিশেষ পরিস্থিতিতে যেমন মহামারি বা প্রাদুর্ভাব চলাকালীন সময় কিছু অতিরিক্ত সতর্কতা মেনে চলা প্রয়োজন। সরকারের নির্দেশিত লকডাউন বা কোয়ারেন্টাইন নিয়ম মেনে চলুন। কোনো ব্যক্তি অসুস্থ হলে তাকে আলাদা রাখুন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দিন। অসুস্থ হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন।