১ থেকে ৯-কে ধরা হয় মৌলিক সংখ্যা। এর সঙ্গে সংখ্যা যোগ করে গণনা বাড়তে থাকে। এই ৯টি সংখ্যার মধ্যে ৫ সংখ্যাটি কোনো সাধারণ সংখ্যা নয়। এটি শুধুমাত্র গণনার মাধ্যম নয়। বরং এর মাঝে প্রকৃতি, বিজ্ঞান আর আধ্যাত্মিকতার অদ্ভুত সংযোগ লুকিয়ে রয়েছে। যার উপলব্ধি করেছিলেন প্রাচীন দার্শনিকরা। তাদের মতে, ৫ সংখ্যাটি ভারসাম্যের প্রতীক, মানবজীবনের প্রতিটি স্তরে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু কীভাবে? এর ব্যাখ্যাও দিয়েছেন প্রাচীন দার্শনিকরা।
প্রাচীন দার্শনিকদের মতে, মহাবিশ্ব গড়ে উঠেছে ৫টি মৌলিক উপাদানের ওপর ভিত্তি করে। হিন্দু দর্শন ঋগ্বেদ, (১৫০০-১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) থেকে বৌদ্ধমত (৫ম-৬ষ্ঠ শতাব্দী খ্রিস্টপূর্বাব্দ), গ্রিক দর্শন এম্পিডোক্লেস, (৪৯০-৪৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) থেকে চীনা সংস্কৃতি ঝৌ রাজবংশ, (১০৪৬-২৫৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) এই সব ক্ষেত্রেই ৫টি মৌলিক উপাদান অর্থাৎ মাটি, পানি, আগুন, বায়ু ও আকাশের অস্তিত্ব স্পষ্ট রয়েছে। যা চারপাশের জগতসহ আধ্যাত্মিক সত্তার মধ্যেও গভীরভাবে মিশে রয়েছে।
প্রাচীন জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে, শুক্র গ্রহ মহাকাশে পাঁচটি পাপড়ির মতো একটি আকৃতি তৈরি করে। এটি শুক্র গ্রহের সৌর কেন্দ্রিক অয়নচক্র (venus synodic cycle)-এর ফল। শুক্র গ্রহ আর পৃথিবীর অয়নচক্র (synodic cycle) আট বছর পরপর একটি পেন্টাগ্রাম বা পঞ্চভুজ তৈরি করে। এই আট বছরের মধ্যে শুক্র গ্রহ ৫ বার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। যা মহাজাগতিক জ্যামিতির এক অনন্য নিদর্শন।
শুধু তাই নয় ৫ সংখ্যাটির বিশেষত্ব লক্ষ্য করা যায় প্রকৃতির মধ্যেও। অনেক ফুলের রয়েছে পাঁচটি পাপড়ি, স্টারফিশের রয়েছে পাঁচটি হাত। আপেলের ভেতরের অংশও পঞ্চভুজাকৃতির হয়ে থাকে। আপেল আড়াআড়ি করে কাটলে বীজের ঘরগুলো পঞ্চকোণ আকৃতির দেখায়।
প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় ৫-এর উপস্থিতি আরও সক্রিয়। মানুষ ৫ ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে পৃথিবীর সৌন্দর্য অনুভব করে। মানুষের চিন্তাধারাতেও ৫ প্রশ্ন সারাক্ষণ ভাবিয়ে তোলে। কে, কী, কখন, কোথায়, কেন এই ৫টি প্রশ্নেই জড়িয়ে থাকে মানুষের কৌতুহল। তাই সর্বদিক বিবেচনায় বলা যায়, সংখ্যা ৫ কেবলমাত্র গণনা নয়, জীবন-জগতের প্রতিটি স্তরেই এর গভীর বার্তা ছড়িয়ে রয়েছে।