আসছে ঈদ উল আযহা অর্থাত্ কোরবানির ঈদ। পশু কোরবানির মাধ্যমে মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভ করবেন মুসলিমরা। ইসলামের অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ ইবাদত হচ্ছে পশু কোরবানি। আত্মত্যাগের ঐতিহাসিক মহিমায় এই ইবাদত আদায় করা হয়।
মহান আল্লাহর নামে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পশু জবাই করার নামই কোরবানি। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন,‘বলো, আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন-মরণ সমস্ত সৃষ্টি জগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই নিবেদিত।’ (সুরা আন‘আম: ১৬২)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় ১০ বছর অবস্থান করেছেন এবং প্রতিবছর কোরবানি দিয়েছেন।’ (তিরমিজি)
পবিত্র কোরআনের নির্দেশ অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কের প্রত্যেক মুসলিম নারী-পুরুষকে কোরবানি দিতে হবে। ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে পশু কোরবানি করতে হবে। তবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেই তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব হবে।
জানেন কি, কতটুকু সম্পদ থাকলে কোরবানি করা ওয়াজিব হবে? পবিত্র কোরআনের নির্দেশ অনুযায়ী, কোরবানির নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য পণ্য হলো টাকা-পয়সা, সোনা-রুপা, অলংকার, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজন আসে না- এমন জমি, প্রয়োজনের অতিরিক্ত বাড়ি-গাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সব আসবাব, স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৮৭ দশমিক ৪৫ গ্রাম) ভরি, রুপার ক্ষেত্রে সাড়ে ৫২ (৬১২ দশমিক ১৫ গ্রাম) ভরি। টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে এর মূল্য সাড়ে ৫২ ভরি রুপার মূল্যের সমপরিমাণ হলে তা নেসাব পরিমাণ হবে।
প্রয়োজনের অতিরিক্ত একাধিক বস্তু মিলে যদি সাড়ে ৫২ তোলা রুপার মূল্যের সমপরিমাণ হয় তবুও কোরবানি ওয়াজিব হবে। তাই কোরবানি কার উপর ওয়াজিব হয়েছে তা জানতে প্রতিবছরই রুপার মূল্য জেনে নেওয়া জরুরি।
চলতি বছর ২ জুন রোববার বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) দর অনুযায়ী, সাড়ে ৫২ তোলা ২২ ক্যারেট রুপার দাম হলো ১ লাখ ১০ হাজার ১৮৭ টাকা। সাড়ে ৫২ তোলা ২১ ক্যারেট রুপার দাম ১ লাখ ৫ হাজার ২৯০ টাকা। আর ১৮ ক্যারেট রুপা সাড়ে বায়ান্ন তোলার দাম পড়ে প্রায় ৯০ হাজার টাকা। সনাতন পদ্ধতির রুপা সাড়ে ৫২ ভরির দাম ৬৭ হাজার ৩৩৭ টাকা।
সেই অনুযায়ী, কারো কাছে ন্যূনতম যদি সাড়ে ৬৭ হাজার টাকা বা এর সমমূল্যের প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থাকে, তাকে কোরবানি দিতে হবে। তবে ১০ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ সময়ের মধ্যে রুমার দাম হিসাব করে নিতে হবে। কারণ এই সময়ের মধ্যে সাড়ে ৫২ ভরি রুপার যে দাম থাকবে, তার ওপর ভিত্তি করে কোরবানি দেওয়া ওয়াজিব হবে। (বাদায়েউস সানায়ে: ৪/১৯৬,আলমুহীতুল বুরহানি: ৮/৪৫৫)