• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৪, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১১ রবিউস সানি ১৪৪৬

বিজয়া দশমীর রীতিতে যা যা থাকে


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৩, ২০২৪, ১২:১৫ পিএম
বিজয়া দশমীর রীতিতে যা যা  থাকে
ছবি: সংগৃহীত

দুর্গাপূজার দশমী, যাকে বিজয়া দশমীও বলা হয়। হিন্দু ধর্মের একটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ দিন। এটি দুর্গাপূজার শেষ দিন এবং মাতৃপ্রতিমা বিসর্জনের দিন হিসেবে পরিচিত। দুর্গাপূজার প্রথম দিন থেকে শুরু করে মহা দশমী পর্যন্ত প্রতিদিন বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হয়। তবে দশমীর দিনটি সবচেয়ে আবেগঘন ও আনুষ্ঠানিকতায় ভরপুর।

দশমী মূলত দেবী দুর্গার মহিষাসুর নামক অসুরের বিরুদ্ধে বিজয়ের প্রতীক। এই দিনটি দেবী দুর্গার মর্ত্যলোক থেকে কৈলাসে ফিরে যাওয়ার দিন হিসেবে ধরা হয়। সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, এই দিনে দেবী দুর্গা স্বর্গলোকে ফিরে যান এবং তার বিদায়কে কেন্দ্র করে বিশেষ আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হয়। দুর্গাপূজার দশমীর রীতি শুধুমাত্র ধর্মীয় আচার নয়, এটি সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং পারিবারিক বন্ধনকে দৃঢ় করে। দেবীর প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে বিদায় জানানো হয়, তবে মনের গভীরে দেবীর আশীর্বাদ রয়ে যায়। দশমীর দিনটি মানুষের মধ্যে আনন্দ, ভালোবাসা ও সম্প্রীতির বার্তা বহন করে। যা সারা বছর ধরে জীবনের নানা ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হয়।

দশমীর দিনটি বিভিন্ন আচার ও উৎসবের মাধ্যমে উদযাপিত হয়। এই রীতিতে মূলত দেবী দুর্গার বিসর্জন এবং বিদায় পর্ব থাকে, যা খুবই আবেগপ্রবণ এবং স্নেহময়ী। সাধারণত, দশমীর দিনে পূজা ও অঞ্জলির পর প্রতিমাকে বরণ করা হয় এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। এরপর প্রতিমা বিসর্জনের আচার শুরু হয়।

দেবী বরণ
দশমীর দিন সকালেই দেবী দুর্গাকে সিঁদুর, ফুল, ধান ও দুর্বা দিয়ে বরণ করা হয়। মহিলারা সিঁদুর পরিয়ে দেন এবং তাঁকে মিষ্টি প্রদান করেন। এই বরণ পর্বে দেবীকে বিদায় জানানো হয়, যাতে তিনি আবার পরের বছর মর্ত্যলোকে ফিরে আসেন। মহিলাদের মধ্যে সিঁদুর খেলার আয়োজনও করা হয়, যা বিশেষ আনন্দের মাধ্যমে উদযাপিত হয়। এই সময় মহিলারা একে অপরকে সিঁদুর পরিয়ে দেন, যা সিঁদুর খেলা নামে পরিচিত।

প্রতিমা বিসর্জন
প্রতিমা বিসর্জন দশমীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্ব। দেবী দুর্গার মূর্তিকে একটি শোভাযাত্রার মাধ্যমে গঙ্গা, পুকুর, বা নদীতে নিয়ে যাওয়া হয়। এই শোভাযাত্রায় ঢাকের আওয়াজ, উলুধ্বনি ও শঙ্খধ্বনির মধ্যে দেবীর মূর্তিকে বিসর্জন দেওয়া হয়। বিসর্জন পর্ব খুবই আবেগঘন, কারণ এটি দেবীর মর্ত্য ত্যাগের প্রতীক।

বিসর্জনের সময় ভক্তরা দেবীকে বিদায় জানাতে বিভিন্ন প্রার্থনা ও আরতি করেন। মন্ত্রোচ্চারণ ও শঙ্খধ্বনির মধ্য দিয়ে দেবীকে গঙ্গায় বা নিকটবর্তী জলাশয়ে বিসর্জন দেওয়া হয়। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটে, এবং ভক্তরা দেবীর আশীর্বাদ নিয়ে বাড়ি ফেরেন।

কোলাকুলি ও মিষ্টিমুখ
বিসর্জনের পর বিজয়া দশমীর আরেকটি বিশেষ রীতি হলো কোলাকুলি ও মিষ্টিমুখ। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব এবং পরিচিতজনেরা একে অপরকে কোলাকুলি করেন এবং মিষ্টি বিতরণ করেন। এই সময় মানুষজন একে অপরের মঙ্গল কামনা করেন এবং বছরের শেষের দিকে নতুন শুরুর আশীর্বাদ চান।

সন্ধিপুজো
সন্ধিপুজো হলো অষ্টমী এবং নবমীর সন্ধিক্ষণে অনুষ্ঠিত বিশেষ পূজা। এটি চণ্ডী পূজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সন্ধিপুজোর সময় ১০৮টি প্রদীপ এবং ১০৮টি পদ্মফুল দিয়ে দেবীর পূজা করা হয়। সন্ধিপুজোর মাধ্যমে দেবী দুর্গার অসুর নিধনের বিজয়গাথা স্মরণ করা হয়।

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক
দশমীর রীতির সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিকগুলোও গুরুত্বপূর্ণ। এই সময় মানুষজনের মধ্যে সম্প্রীতি ও মৈত্রীবোধ বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও, এটি একটি পুনর্মিলনী সময় হিসেবে দেখা হয়। দুর্গাপূজা এবং বিজয়া দশমী শুধু ধর্মীয় আচার নয়, এটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মিলনের উৎসবও। অনেকে এই সময় দীর্ঘদিন পর আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে আসেন এবং পূজার আনন্দ ভাগাভাগি করেন।

বিজয়া দশমী হিন্দু ধর্মের বিশ্বাস ও মূল্যবোধের প্রতীক হলেও এটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিরও উদাহরণ। দুর্গাপূজার আনন্দ শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং অন্যান্য ধর্মের মানুষও এই উৎসবে সামিল হন। এ সময় অনেক অঞ্চলেই নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যেমন নাচ-গান, নাটক ও আলোকসজ্জার আয়োজন করা হয়, যা পুরো সমাজকে একত্রিত করে।

Link copied!