• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৪, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১, ৭ রবিউস সানি ১৪৪৬

দুর্গাপূজার মহাষ্টমীর রীতিতে যা যা রয়েছে


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ১১, ২০২৪, ০১:২৫ পিএম
দুর্গাপূজার মহাষ্টমীর রীতিতে যা যা রয়েছে
ছবি: সংগৃহীত

দুর্গাপূজার অষ্টমী তিথি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশেষভাবে পূজিত হয়। অষ্টমীকে ‘মহাষ্টমী’ বলা হয়।  কারণ এটি দেবী দুর্গার এক মহিমান্বিত দিন। এদিন দেবী দুর্গার পূজা বিশেষ ধর্মীয় আচার ও রীতির মাধ্যমে পালন করা হয়। যা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ। দুর্গাপূজার অষ্টমী তিথি দেবী দুর্গার শক্তির আরাধনার দিন। এই দিনে মহাষ্টমী পূজা, পুষ্পাঞ্জলি, সন্ধিপূজা, কুমারী পূজা এবং ভোগ নিবেদনের মাধ্যমে দেবীকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। অষ্টমীর পূজার মাধ্যমে ভক্তরা দেবীর আশীর্বাদ লাভ করেন এবং সমাজের সকলের মধ্যে উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি হয়। অষ্টমীর দিন কী কী করতে হয়, কীভাবে পূজা করা হয় চলুন জেনে আসি।

মহাষ্টমী পূজা

মহাষ্টমীর দিন দেবী দুর্গাকে পূজা করার মাধ্যমে শক্তির আরাধনা করা হয়। দেবী দুর্গা শত্রুনাশিনী ও মহাশক্তির প্রতীক, তাই এই দিনে তাঁর পূজা বিশেষ মাহাত্ম্যপূর্ণ। পূজার দিনের শুরুতেই ঘট স্থাপন করা হয়। ঘটের মধ্যে জল ভরে সেটিকে পূজার আসনে স্থাপন করা হয় এবং দেবী দুর্গার উপস্থিতি সেই ঘটের মাধ্যমে আহ্বান করা হয়। দেবী দুর্গার কাছে অর্ঘ্য, ফল, ফুল, বেলপাতা, ধূপ, প্রদীপ ইত্যাদি নিবেদন করা হয়। পণ্ডিত বা পুরোহিতের নেতৃত্বে মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার মাধ্যমে ভক্তরা দেবীর আশীর্বাদ কামনা করেন। অষ্টমীর পূজায় দেবী দুর্গার আদ্যাশক্তি বা মহাশক্তির পূজা করা হয়। এই সময় দেবীর আটটি অস্ত্রসহ চিত্রায়িত মূর্তিকে বিশেষভাবে পূজা করা হয়।

পুষ্পাঞ্জলি

অষ্টমীর দিন সকালে দেবী দুর্গাকে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া অন্যতম প্রধান আচার। প্রথমে উপবাস রাখা হয় এবং শুদ্ধভাবে স্নান করার পর পূজার আসনে বসে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া হয়। ভক্তরা হাতে ফুল ও বেলপাতা নিয়ে মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে দেবীর কাছে প্রার্থনা করেন। এটি দেবীর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভক্তির প্রকাশ। পুষ্পাঞ্জলির সময় অনেক ভক্ত উপবাস পালন করেন। এটি ভক্তির একটি নিদর্শন এবং মানসিক শুদ্ধতার প্রতীক। তবে শারীরিকভাবে দুর্বল বা অসুস্থ ব্যক্তিরা ফলাহার করতে পারেন।

সন্ধিপূজা

অষ্টমী ও নবমীর সংযোগস্থলে যে সময়টি আসে, তাকে বলা হয় "সন্ধিক্ষণ" এবং এই বিশেষ মুহূর্তে অনুষ্ঠিত হয় সন্ধিপূজা। এটি অষ্টমীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আচার এবং অত্যন্ত পবিত্র সময় হিসেবে বিবেচিত। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, এই সন্ধিক্ষণেই দেবী দুর্গা অসুরের সেনাপতি মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন। তাই সন্ধিপূজা মহাশক্তির বিজয়ের প্রতীক। সন্ধিপূজার সময় ১০৮টি প্রদীপ প্রজ্বলন করা হয় এবং ১০৮টি পদ্মফুল দিয়ে দেবীকে পূজা করা হয়। এর সঙ্গে দেবীর হাতে দেওয়া হয় অর্পণ হিসেবে নির্দিষ্ট অস্ত্র। অনেক জায়গায় সন্ধিপূজার সময় পশুবলির প্রথা ছিল। তবে আধুনিক সময়ে এটি প্রতীকীভাবে চালকলার বলি দিয়ে সম্পন্ন করা হয়। এর মাধ্যমে দেবীকে তার বীরত্বপূর্ণ বিজয়ের জন্য শ্রদ্ধা জানানো হয়।

কুমারী পূজা

অষ্টমীর দিন বিশেষ এক আচার হলো কুমারী পূজা। কুমারী পূজা হলো অল্পবয়সী এক কন্যার মধ্যে দেবী দুর্গার প্রতিরূপ দেখে তাঁকে পূজা করা। এটি বিশেষত বেলুড় মঠ এবং অন্যান্য বহু মঠে বেশ আড়ম্বর সহকারে পালন করা হয়। সাধারণত ৮-১২ বছর বয়সী একটি কন্যাকে কুমারী হিসেবে বাছাই করা হয়। তাঁকে শুদ্ধ স্নান করানো হয়, দেবীর মতো সাজানো হয় এবং পূজার আসনে বসানো হয়। পূজার সময় দেবী দুর্গার মন্ত্র উচ্চারণ করে কুমারীকে পূজা করা হয়। পূজার পর তাকে উপহার এবং প্রসাদ দেওয়া হয়। কুমারী পূজার মাধ্যমে নারীত্বের শক্তি, পবিত্রতা এবং দেবী দুর্গার শক্তিকে সম্মান জানানো হয়। দেবী দুর্গার প্রতীক হিসেবে কুমারীকে পূজা করা শক্তির আরাধনার অন্যতম রূপ।

ভোগ ও প্রসাদ বিতরণ

অষ্টমীর দিন দেবীর কাছে ভোগ নিবেদন করা হয় এবং তারপর সেই ভোগ প্রসাদ হিসেবে ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। সাধারণত ফল, মিষ্টি, খিচুড়ি, লাবড়া, বেগুন ভাজা, চাটনি ইত্যাদি ভোগ হিসেবে দেবীকে নিবেদন করা হয়। কিছু কিছু জায়গায় নিরামিষ খাবারের পাশাপাশি পাঁচ পদের খাবারের আয়োজন করা হয়। পূজা শেষে সেই ভোগকে প্রসাদ হিসেবে ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। প্রসাদ গ্রহণ করার মাধ্যমে ভক্তরা দেবীর আশীর্বাদ লাভ করেন এবং নিজেদের মধ্যে উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করেন।

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

অষ্টমীর দিন পূজা মণ্ডপগুলোতে শুধু পূজা নয়, বরং নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও অনুষ্ঠিত হয়।  পূজার শেষে অনেক জায়গায় ধর্মীয় গান এবং আরতির আয়োজন করা হয়, যা ভক্তদের দেবীর প্রতি নিবেদিত ভক্তি আরও বৃদ্ধি করে। সন্ধ্যায় নাটক, গান, নৃত্য ইত্যাদি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়, যা পূজার পরিবেশকে আরও উৎসবমুখর করে তোলে। এ সময়ে পরিবারের সবাই একত্রিত হয়ে পূজার আনন্দ উপভোগ করেন।

Link copied!