প্রতিটি ধর্মেই বিয়েকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ইসলাম ধর্মেও এর ব্যতিক্রম নয়। বিয়ের পবিত্রতা নিয়ে কিছু নির্দেশনাও রয়েছে এই ধর্মে। সহজ নীতি অনুসরণ করেই পাত্র-পাত্রীর বিয়ে সম্পন্ন হয়। ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার জন্য প্রাপ্তবয়স্ক কনের অনুমতি নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। বিয়ের আকদের সময় কনেপক্ষ থেকে ইজাব করা হলে বা প্রস্তাব দেওয়া হলেই বরের ‘কবুল করলাম’ বলে তা গ্রহণ করার রীতি রয়েছে। তবেই বিয়ে সম্পন্ন হবে।
অনেকেই পারিবারিক চাপে পড়ে বিয়েকে কবুল বলে। এক্ষেত্রে তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য বা তাতে কি বিয়ে সম্পন্ন হবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরও ইসলামে স্পষ্টভাবে দেওয়া রয়েছে। ইসলামের রীতি অনুযায়ী, কনের সম্মতি নিয়ে দুজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে কনের অভিভাবক যদি নিজে বা যিনি বিয়ে পড়াবেন তার মাধ্যমে প্রস্তাব দেয় এবং বর তা ‘কবুল করলাম’ বলে, তাহলেই বিয়ে হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে মুখে ‘কবুল’ বলাটাই বরের সিদ্ধান্ত ধর্তব্য হবে।
তবে মুখে কবুল করার পর ‘অন্তরের অনিচ্ছা’ বা ‘চাপ থাকা’র দাবিটি গ্রহণযোগ্য হবে না। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “তিনটি বিষয় এমন যে, ইচ্ছেকৃত করলে ইচ্ছেকৃত এবং ঠাট্টা করে করলেও ইচ্ছেকৃত বলে ধর্তব্য হয়; সেগুলো হলো তালাক, বিবাহ এবং তালাকে রাজঈর পর স্ত্রীকে পুনরায় গ্রহণ করা। (সুনানে ইবনে মাজাহ)”
পারিবারিক কিংবা অন্য কোনো চাপের কারণে বিয়েতে অনিচ্ছা থাকলেও তা আকদের আগে বা আকদের সময় প্রকাশ করতে হবে। তবে অভিভাবকদেরও উচিত নয় বর ও কনেকে জোরপূর্বক বিয়ে করানো। এতে সংসারে অশান্তি হয়। আর মূল্যবান জীবন নষ্ট হয়।
ইসলামে আরও বর্ণিত রয়েছে, বরের কবুল বলা ছাড়া এবং মেয়ের সম্মতি ছাড়া বিয়ে শুদ্ধ হবে না। নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “কোন বিধবা নারীকে তার স্পষ্ট সম্মতি বা নির্দেশনা ছাড়া বিয়ে দেওয়া যাবে না এবং কুমারী নারীকে তার অনুমতি ছাড়া বিয়ে দেওয়া যাবে না।“
হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, বিয়ের বিষয়ে সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করেন, “হে আল্লাহর রাসুল! কীভাবে অনুমতি নেব?” উত্তরে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “তার চুপ থাকাটাই অনুমতি গন্য হবে।“ (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)।
সুতরাং বিয়েতে প্রাপ্তবয়স্ক কনে স্পষ্টভাবে অসম্মতির কথা জানিয়ে দেওয়ার পর অভিভাবক যদি তা গোপন করে বিয়ে সম্পাদন করে, তবে তা শুদ্ধ হবে না। তবে বাবা মায়ের মন রক্ষার্থে কনের অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও যদি মুখে সম্মতি দেয় সেই বিয়ে ইসলামিক দৃষ্টিতে শুদ্ধতা পাবে।