• ঢাকা
  • রবিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩০, ১৩ রজব ১৪৪৬

দীর্ঘদিনের সম্পর্কে তিক্ততা কেন আসে


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১২, ২০২৫, ০৫:১১ পিএম
দীর্ঘদিনের সম্পর্কে তিক্ততা কেন আসে
ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘদিনের সম্পর্কে কারো গভীরতা বাড়ে, আবার কারো বাড়ে তিক্ততা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সম্পর্ক যেমন গভীরতা লাভ করে, তেমনই একে অপরের প্রতি প্রত্যাশা, ভুল বোঝাবুঝি এবং মানসিক দূরত্বের কারণে তিক্ততা দেখা দিতে পারে। এই তিক্ততা সম্পর্ককে ধীরে ধীরে দুর্বল করে দিতে পারে। দীর্ঘদিনে৷ সম্পর্কে তিক্ততা কেন ধরে, জানেন? এর পেছনেও রয়েছে কয়েকটি কারণ।

অতিরিক্ত প্রত্যাশা
দীর্ঘদিনের সম্পর্কে সাধারণত একে অপরের প্রতি প্রত্যাশা বেড়ে যায়। এই প্রত্যাশা কখনও কখনও বাস্তবতার বাইরে চলে যায়। একজন সঙ্গী যখন অন্যজনের কাছ থেকে কোনো বিষয় নিয়ে নির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়া বা আচরণ আশা করেন, কিন্তু তা পূরণ হয় না, তখন হতাশা তৈরি হয়। বারবার এমন হলে তা তিক্ততায় রূপ নিতে পারে। তাই বাস্তবসম্মত প্রত্যাশা স্থাপন করা এবং সঙ্গীর সীমাবদ্ধতাগুলো বুঝতে চেষ্টা করা এর সমাধান হতে পারে।

ভুল বোঝাবুঝি এবং অপর্যাপ্ত যোগাযোগ
সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হলো যোগাযোগ। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক সময় এটি দুর্বল হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিনের সম্পর্কের মধ্যে অনেক সময় সঙ্গীরা মনে করেন, তারা একে অপরকে পুরোপুরি জানেন। ফলে তারা স্পষ্ট করে কথা বলার প্রয়োজন অনুভব করেন না। এতে ভুল বোঝাবুঝির সম্ভাবনা বেড়ে যায়। একজন সঙ্গী হয়তো মনে করেন যে তার সমস্যাগুলো অপরজন বুঝতে পারছে, কিন্তু সরাসরি না বলার কারণে বিষয়টি পরিষ্কার হয় না। তাই খোলামেলা এবং নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখা জরুরি। সমস্যাগুলো আলোচনা করার জন্য সঠিক সময় এবং পরিবেশ নির্বাচন করতে হবে।

একঘেয়েমি ও রুটিনের একাকিত্ব
দীর্ঘ সম্পর্কে অনেক সময় একঘেয়েমি তৈরি হয়, যা তিক্ততার একটি বড় কারণ। দীর্ঘ সম্পর্কের ক্ষেত্রে রুটিনমাফিক জীবনযাত্রা অনেক সময় উত্তেজনা বা নতুনত্বের অভাব সৃষ্টি করে। সঙ্গীদের মধ্যে রোমান্টিক আকর্ষণ কমে যেতে পারে। একই রকম দিনযাপন, একই ধরনের আড্ডা বা মুভি দেখা—এই একঘেয়েমি থেকে সম্পর্কের উষ্ণতা হারিয়ে যেতে পারে। তাই সম্পর্কে নতুন কিছু করার চেষ্টা করা, যেমন—একসঙ্গে ভ্রমণ, নতুন শখ গ্রহণ, বা বিশেষ মুহূর্ত উদযাপন করতে হবে।

দোষারোপ ও অতীতের ঘটনা মনে রাখা
দীর্ঘদিনের সম্পর্কে অতীতের ভুল বা ব্যর্থতা অনেক সময় সঙ্গীদের মধ্যে তিক্ততার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
মানুষ প্রায়ই অতীতের ভুলগুলোর জন্য অপরজনকে দোষারোপ করে এবং তা ভুলতে পারে না। এটি নতুন সমস্যা তৈরির ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখে।
কোনো পুরনো ঝগড়ার প্রসঙ্গ বারবার তোলা বা পুরনো ঘটনাগুলো মনে করিয়ে দেওয়া সম্পর্কে আরও তিক্ততা এনে দেয়। তাই অতীতকে ভুলে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া এবং নতুন করে শুরু করার মনোভাব থাকা জরুরি।

সময়ের অভাব এবং দূরত্ব
বর্তমান ব্যস্ত জীবনযাত্রায় সময়ের অভাব দীর্ঘ সম্পর্কে তিক্ততা আনতে পারে। পেশাগত জীবন, পরিবার এবং অন্যান্য দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সঙ্গীরা একে অপরকে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেন না। এতে তিক্ততা বাড়তে থাকে। তাই সঙ্গীর জন্য নিয়মিত সময় বের করা এবং একসঙ্গে মানসম্পন্ন সময় কাটানো জরুরি।

স্বার্থপরতা এবং ব্যক্তিগত সমস্যা
স্বার্থপর মনোভাব এবং ব্যক্তিগত সমস্যাগুলো দীর্ঘদিনের সম্পর্কে তিক্ততার জন্ম দেয়।
যখন একজন সঙ্গী তার নিজের চাহিদা বা ইচ্ছাগুলোকে প্রাধান্য দেয়, তখন অপরজন উপেক্ষিত বোধ করেন। সঙ্গী তার নিজের ক্যারিয়ার বা শখে এতটাই ব্যস্ত যে, অন্যজনের চাহিদা বা অনুভূতিকে অগ্রাহ্য করে। তাই সঙ্গীর অনুভূতিকে গুরুত্ব দেওয়া এবং উভয়ের প্রয়োজনের মধ্যে ভারসাম্য তৈরি করা জরুরি।

বিশ্বাসের অভাব
বিশ্বাসের অভাব সম্পর্কের স্থায়িত্বকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। যদি একজন সঙ্গী অপরজনের প্রতি সন্দেহ পোষণ করেন বা অতীতে বিশ্বাসঘাতকতা হয়ে থাকে, তবে তা দীর্ঘদিনের সম্পর্কে তিক্ততার কারণ হতে পারে। সঙ্গীর ফোন চেক করা, সবসময় সন্দেহ প্রকাশ করা বা গোপনীয়তার অভাব আরও তিক্ততা এনে দেয়। উভয়ের মধ্যে বিশ্বাসের সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং সন্দেহ দূর করার জন্য খোলামেলা আলোচনা করতে হবে।

পরিবার ও বন্ধুদের হস্তক্ষেপ
দীর্ঘদিনের সম্পর্কে অনেক সময় তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ তিক্ততা সৃষ্টি করতে পারে। সঙ্গীদের মধ্যে সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে তৃতীয় পক্ষের মিশ্রণ সম্পর্ককে আরও জটিল করে তোলে। পরিবার বা বন্ধুরা যদি একজন সঙ্গীর সিদ্ধান্তে অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ করেন তাহলে সম্পর্কে তিক্ততা আসতে পারে। তাই ব্যক্তিগত বিষয়গুলো নিজেরা সমাধান করার চেষ্টা করুন। সীমা নির্ধারণ করুন।

পারস্পরিক সম্মানের অভাব
সম্পর্কের মধ্যে সম্মানের অভাব থাকলে তা তিক্ততা সৃষ্টি করে। যদি সঙ্গীরা একে অপরের মতামত, ব্যক্তিত্ব, এবং চাহিদাকে মূল্যায়ন না করেন, তবে সম্পর্কের ভারসাম্য নষ্ট হয়। তুচ্ছ মন্তব্য করা বা সঙ্গীর সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব না দেওয়া এর অন্যতম কারণ। তাই পারস্পরিক সম্মান বজায় রাখা এবং একে অপরের চিন্তাভাবনা মূল্যায়ন করতে হবে।

Link copied!