প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। অসহায় গরিব দুঃখীর ন্যায্য় পাওনার নামই হচ্ছে ফিতরা। ঈদের আনন্দ অসহায় প্রতিবেশির সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া অন্যতম মাধ্যম। পবিত্র রমজান মাসে ফিতরা প্রত্যেক মুসলমানদেরই আদায় করতে হয়। প্রতি বছর রমজানে নির্ধারিত সাদকা দিতে হয়। যা ঈদের নামাজের আগে অসহায় গরিব-দুঃখীদের মধ্যে বিতরণ করা সওয়াব বলে বিশ্বাস করেন ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা।
জাকাতুল ফিতর মানে হলো প্রকৃতি। যার মাধ্যমে মানুষ তার পালণীয় রোজার যাবতীয় ভুলগুলো থেকে আত্মশুদ্ধি পায় এবং আত্মার আমলকে নির্মল করার জন্য অসহায়দের মাঝে বিলিয়ে দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়া যায়। মুসলিমদের রোজা পালনে কোনোভাবে যদি রোজা রাখার ত্রুটি-বিচ্যুতি হয় এর থেকে মুক্তি পেতে ফিতরা আদায় করতে হয়। যা অসচ্ছল, অসহায় ব্যক্তিদের মধ্যে সাদকা হিসাবে দান করতে হয়। নাবালক ছেলে-মেয়ের পক্ষ থেকে বাবাকে এ ফিতরা আদায় করে দিতে হবে।
হজরত ইমাম আজম আবু হানিফা রাহমাতুল্লাহি আলাইহির মতে, অধিক মূল্যের দ্রব্য দ্বারা ফিতরা আদায় করা উত্তম; অর্থাৎ যা দ্বারা আদায় করলে গরিবদের বেশি উপকার হয়, সেটাই উত্তম ফিতরা।
এ বছরের ফিতরার পরিমাণ
১৪৪২ হিজরির জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক নির্ধারিত ফিতরার পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন জনপ্রতি সর্বনিম্ন ৭০ টাকা ও সর্বোচ্চ ২ হাজার ৩১০ টাকা।
ফিতরা কেন আদায় করবেন
- ফিতরা হচ্ছে রোজার ভুল-ত্রুটির ঘাটতির ক্ষতির পরিপূরক। এটি আদায় করলে সওয়াব হবে। এছাড়াও এর মাধ্যমে মানুষের পাপ তথা গোনাহ ধ্বংস হবে।
- ঈদের দিন গরিব ও মিসকিনদের আনন্দ-বিনোদন, উত্তম পোশাক ও খাবারের সহজলভ্যতার জন্য ফিতরা আদায় গুরুত্বপূর্ণ। সবাই একসঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করার উদ্দেশ্যেই এই সাদকা দেওয়া আবশ্যক। হজরত মুহাম্মাদুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফিতরার প্রচলন করে গেছেন। হাদিসে এসেছে- হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলিমদের স্বাধীন ও ক্রীতদাস পুরুষ ও নারী এবং ছোট ও বড় সবার জন্য এক সা’ (প্রায় সাড়ে ৩ কেজি) খেজুর বা যব খাদ্য (আদায়) ফরজ করেছেন। (বুখারি, মুসলিম) তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সাদকাতুল ফিতর আদায় করতাম এক সা খাদ্যবস্তু। যেমন- এক সা যব, এক সা খেজুর, এক সা পনির, এক সা কিশমিশ। (বুখারি)
- ফিতরা আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা হয়। দীর্ঘ এক মাস ফরজ ইবাদত রোজা রাখার তাওফিক দান করেছেন তার জন্য় আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে ফিতরা আদায় করা হয়।
- পবিত্র রমজান মাসে আত্মশুদ্ধি প্রক্রিয়া পরিপূর্ণ এবং আত্মাকে বিশুদ্ধ ও পবিত্র করার লক্ষ্যে আল্লাহর পথে মাল (অর্থ) খরচের মাধ্যমে নিজেদের পবিত্র করার জন্যই ফিতরা আদায় করা হয়।