প্লাস্টিক বিষক্রিয়া একটি ভয়াবহ পরিবেশগত ও স্বাস্থ্যগত সমস্যা। প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণাগুলো, বিশেষ করে মাইক্রোপ্লাস্টিক পরিবেশে প্রবেশ করে এবং মানুষের শরীরে সমস্যা সৃষ্টি করে। এরপরও প্লাস্টিকের ব্যবহার হচ্ছে সর্বত্র। প্লাস্টিক বিষক্রিয়া এড়াতে ব্যক্তিগত এবং সামাজিক উদ্যোগ প্রয়োজন।
প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে নিজেকে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে এর ব্যবহার কমানো, সচেতনতা বৃদ্ধি, পুনর্ব্যবহার ও বিকল্প ব্যবহারে মনোযোগ দিতে হবে। প্লাস্টিকের বিকল্প ব্যবহারকে উৎসাহিত করা। প্লাস্টিক বিষক্রিয়া প্রতিরোধে করণীয় কিছু পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করা হলো।
প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো
প্রথম করণীয় হলো, দৈনন্দিন জীবনে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো। বিশেষ করে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্য যেমন প্লাস্টিকের বোতল, প্লাস্টিক ব্যাগ, ফুড প্যাকেজিং ইত্যাদির ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে। এই ধরনের প্লাস্টিকের পণ্যগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুনঃব্যবহার করা যায় না। যা পরিবেশে ফেলে দিলে মাটিতে বা পানিতে বিষাক্ত পদার্থ মিশিয়ে দেয়। এজন্য পুনঃব্যবহারযোগ্য এবং পরিবেশবান্ধব পণ্য ব্যবহার করতে হবে। কাগজ বা কাপড়ের ব্যাগ, স্টিল বা কাচের বোতল ইত্যাদির ব্যবহার বাড়াতে হবে।
পুনর্ব্যবহার এবং পুনঃব্যবহার
প্লাস্টিকের বিষক্রিয়া প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ হলো পুনর্ব্যবহার এবং পুনঃব্যবহারের প্রক্রিয়া। প্লাস্টিক পণ্যগুলো যদি পুনঃব্যবহার এবং পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে সঠিকভাবে পরিচালিত করা হয়, তবে প্লাস্টিকের বর্জ্য কমিয়ে আনা সম্ভব। বিভিন্ন দেশে প্লাস্টিকের পণ্যের পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই ধরনের উদ্যোগে অংশগ্রহণ করা এবং পুনঃব্যবহারযোগ্য পণ্যগুলোর ব্যবহারকে উৎসাহিত করলে বিষক্রিয়া থেকে মুক্ত থাকা যাবে।
পরিবেশবান্ধব পণ্য ব্যবহারে উৎসাহিত হওয়া
প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে পরিবেশবান্ধব পণ্য ব্যবহার করা যায়। বায়োডিগ্রেডেবল প্যাকেজিং, কাগজের ব্যাগ, বাঁশ বা কাঠের তৈরি পণ্য ইত্যাদি ব্যবহার করতে হবে। এই ধরনের পণ্যগুলো দ্রুত পরিবেশে মিশে যায় এবং ক্ষতি করে না। বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে মানুষকে প্লাস্টিকের পরিবর্তে এই ধরনের পণ্য ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
সচেতনতা বৃদ্ধি
প্লাস্টিকের বিষক্রিয়া সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। স্কুল, কলেজ এবং অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে হবে। গণমাধ্যমে প্রচার করে মানুষকে সচেতন করতে হবে। পাশাপাশি, বিভিন্ন সামাজিক এবং পরিবেশবাদী সংগঠনও প্লাস্টিকের ব্যবহার হ্রাস এবং বিকল্প উপায়গুলো সম্পর্কে প্রচারণা চালাতে পারে।
সরকারি নীতিমালা ও আইনি ব্যবস্থা
প্লাস্টিকের বিষক্রিয়া প্রতিরোধে সরকারকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে সঠিক নীতিমালা তৈরি করা এবং সেই নীতিমালাগুলো বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। কিছু দেশ ইতোমধ্যে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্য নিষিদ্ধ করেছে। এ ধরনের পদক্ষেপ সারা পৃথিবীতে কার্যকর হলে প্লাস্টিক বিষক্রিয়া হ্রাস করা সম্ভব।
প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিক এবং কার্যকর পদ্ধতি গ্রহণ করা জরুরি। প্লাস্টিকের বর্জ্যগুলো সঠিকভাবে সংগ্রহ, পুনর্ব্যবহার এবং নিষ্পত্তি করার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট কাঠামো থাকা দরকার। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সঠিক পরিকল্পনা এবং প্রযুক্তির ব্যবহার করলে প্লাস্টিকের কারণে সৃষ্ট দূষণ কমিয়ে আনা সম্ভব।
সমুদ্র এবং জলাভূমি সংরক্ষণ
প্লাস্টিক বিষক্রিয়ার একটি বড় উৎস হলো সমুদ্র ও জলাভূমি। প্লাস্টিকের বর্জ্যগুলো নদী ও সমুদ্রের মাধ্যমে পরিবেশে প্রবেশ করে এবং সামুদ্রিক প্রাণী ও মানবস্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। সুতরাং, সমুদ্র এবং জলাভূমি সংরক্ষণে সরকার এবং নাগরিকদের সক্রিয়ভাবে কাজ করতে হবে। প্লাস্টিকের বর্জ্য সরাসরি পানিতে ফেলা বন্ধ করতে হবে এবং নিয়মিতভাবে নদী ও সমুদ্র পরিষ্কার করতে হবে।