বনের হিংস্র প্রাণী বাঘ। বাঘের গর্জনেই যেন গোটা জঙ্গল কেঁপে উঠে। সামনে থেকে বাঘ দেখার দু:সাহসও কেউ করে না। খাঁচায় বন্দি বাঘ দেখেই যেন কৌতুহলী মানুষের ইচ্ছে পূরণ হয়। সেই হিংস্র প্রাণীর মূত্র পাওয়া যাচ্ছে বোতলে। বিক্রিও হচ্ছে চড়া দামে। অবাক হচ্ছেন? হ্যা, এটি সত্যিই ঘটছে। বাঘের মূত্র বোতলে ভরে বিক্রি হচ্ছে। মানুষ সেই মূত্র কিনে নিজেদের চিকিত্সা করছে।
প্রাচীন আয়ুর্বেদ চিকিত্সায় বিভিন্ন ধরণের গাছ গাছালি ব্যবহার করা হয়। এবার চিকিত্সার কাজে বাঘের মূত্রের ব্যবহার যেন সবাইকে অবাক করে দিচ্ছে। হ্যা, রোগ সারাতে ব্যবহার হচ্ছে বাঘের মূত্র! আর এই আশ্চর্য ঘটনা ঘটছে ‘ড্রাগনের দেশ’ চীনে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সিচুয়ান প্রদেশের ইয়ান বিফেংজিয়া ওয়াইল্ডলাইফ জু নামে একটি চিড়িয়াখানায় পাওয়া যাচ্ছে বাঘের মূত্র। সেখানে সাইবেরিয়ান বাঘের মূত্র বোতলে ভরে বিক্রি করা হচ্ছে। চিড়িয়াখানায় ঘুরতে আসা পর্যটকরাই এই মূত্র কিনছেন।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, বাঘের মূত্র ব্যবহার করা হচ্ছে বাতের চিকিত্সায়। আর্থ্রাইটিস, পেশিতে ব্যথার মতো সমস্যা সারাতে এই মূত্র কার্যকর বলে দাবি বিক্রেতাদের। তাদের দাবি, বাঘের মূত্র আর্থ্রাইটিস, মোচকে যাওয়া এবং পেশী ব্যথা থেকে অলৌকিক ত্রাণ দিতে পারে।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রতি বোতল বাঘের মূত্র কিনতে পর্যটকদের ৫০ ইউয়ান (প্রায় ৬০০ টাকা) খরচ করতে হচ্ছে। একটি বোতলে ২৫০ গ্রাম বাঘের মূত্র থাকে। ব্যথা এবং বাত থেকে মুক্তি পেতে এর ব্যবহার সম্পর্কেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেখানে বলা হয়, বাঘের মূত্রের সঙ্গে সাদা ওয়াইন ও আদার টুকরো মিশিয়ে ব্যথা স্থানে লাগাতে হবে। তবেই দ্রুত ব্যথা নিরাময় হবে।
শুধু তাই নয়, বাঘের মূত্র ব্যথার অংশে লাগানোর পাশাপাশি, এটি পানও করছেন অনেকে। এতে দ্রুত কাজ হবে বলে দাবি সেই চিড়িয়াখানার বিক্রেতাদের। তবে সতর্ক বার্তায় বলা হচ্ছে, যাদের অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে তাদের এই মূত্র পানে দূরে থাকতে হবে।
যদিও বাঘের মূত্র ব্যবহারে স্বাস্থ্য উপকারিতার কথা বিজ্ঞানে প্রমাণিত নয়। তাই এই ঘটনা প্রকাশিত তোলপাড় শুরু হয় নেটদুনিয়ায়। চিড়িয়াখানার এক কর্মী জানান, বাঘ প্রস্রাব করার পর একটি বেসিন থেকে তা সংগ্রহ করা হয়। এটিকে জীবাণুমুক্ত করতে কোনো বিশেষ প্রক্রিয়ায় পরিশোধিত করা হয় না।
এমন তথ্যের ভিত্তিরে বাঘের মূত্র কতটা স্বাস্থ্যসম্মত তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বিজ্ঞানে প্রমাণিত নয়, এমন চিকিৎসার প্রচার অনেকের স্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ঠেলে দিতে পারে।