দুটি মানুষকে সম্পর্কের বাধনে বাধতে বিয়ে করা হয়। এরপর পরিবার শুরু। ধীরে ধীরে সন্তান আসে। একটি সন্তানকে বড় করে তুলতে তুলতেই আরও একটি সন্তানের আগমনের বার্তা জানান দেয়। বড় ও ছোট সন্তানকে নিয়ে পরিপূর্ণ হয় পরিবার। কেউ কেউ আরও অধিক সন্তানও নেন। যদিও সরকার দুটি সন্তানেই খুশি থাকতে বলেছেন। তবে মানুষ এখন ইচ্ছে করেই তিন- চারটি সন্তানও নিচ্ছেন। আগের দিনে দাদী নানীরা অনেক সন্তান জন্ম দিতেন। তবে বর্তমান সময়ে অনেক সন্তান না নিলেও বাবা মা তিন থেকে চারটি সন্তানও নিচ্ছেন। বলা যায়, একাধিক সন্তান নেওয়া এখন ট্রেন্ডেও চলে এসেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষ একাকিত্ব কাটাতে এবং নিজের একান্ত বিশ্বস্ত বন্ধু পেতে একাধিক সন্তান নিচ্ছেন। বড় হলে সন্তানরা বাবা মায়ের ভালো বন্ধু হয়। আবার বাবা মায়ের বৃদ্ধ বয়সের নিশ্চয়তা পেতেও বেশি সন্তান থাকা ভালো বলে মনে করেন। সন্তানকে একা হাতেই সামলাচ্ছেন অনেকে। কিন্তু সন্তান জন্ম দিলেই তো হয় না এর সঙ্গে আরও অনেককিছুই জড়িত। সন্তানের ভবিষ্যত নিশ্চিত করার দায়িত্ব থাকে বাবা মায়ের উপর। তাই একের অধিক সন্তান নেওয়ার আগে কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরি।
সময় নিন
সন্তানধারণ আর সন্তান পালন জটিল প্রক্রিয়া। এখন অধিকাংশ ক্ষেত্রে সিজারিয়ান বেবি জন্ম নিচ্ছে। এমন অবস্থায় মা হওয়ার পর জরায়ু, আলগা হয়ে যাওয়া পেটের পেশি ও লিগামেন্ট আগের অবস্থায় ফিরতে অন্তত ২ বছর সময় নেয়। এই সময়টা নিজেকে দিতেই হবে। এরপর দ্বিতীয় সন্তানের পরিকল্পনা করুন।
নিজেকে প্রস্তুত করুন
মা হওয়ার পর আগের মতো অনেককিছুই থাকবে না। সন্তানের লালন পালনে নিজের জীবনযাত্রা পুরোই পাল্টে যাবে। খাওয়া দাওয়া ঘুম অনেক কিছুর উপরই প্রভাব পড়বে। তাই আগে নিজেকে প্রস্তুত করুন। প্রথম সন্তানের ধকল সামলে নিয়ে আগে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুন। এরপর দ্বিতীয় সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিন।
অর্থনৈতিক অবস্থা
প্যারেন্টিং সামলাতে মানসিক ও আর্থিক সবদিকেই ভাবতে হবে। এই যুগে সন্তানকে বড় করে তোলা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। কারণ নিত্যদিনই সবকিছুই দাম বাড়ছে। স্বাভাবিক জীবনযাপন করা যায় এমন অর্থনৈতিক অবস্থা রয়েছে কিনা তা বিবেচনায় নিন। সন্তানের আনুষাঙ্গিক অনেক খরচই রয়েছে। দুধ, প্যাম্পার্স, চিকিৎসা, স্কুল, পোশাকসহ আরও অনেক খরচ রয়েছে। তাই আর্থিক দিকেও খেয়াল রাখুন। সন্তানকে ভালো ও সুস্থ জীবন দেওয়া বাবা মায়ের দায়িত্ব।
দাম্পত্য সম্পর্ক
নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়াটা কেমন তা দেখুন। যদি দাম্পত্য সম্পর্ক ভালো হয় তবে সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিন। আর যদি দাম্পত্য কলহে পূর্ণ থাকে তবে একটি সন্তান নেওয়ার চিন্তাও করা ঠিক হবে না। সিদ্ধান্ত থেকেও বিরত থাকুন। কারণ সন্তানকে আপনাদের সময় দিতে হবে। কিন্তু দাম্পত্য কলহ থাকলে সন্তান আপনাদের মনোযোগ থেকে বঞ্চিত থাকবে। তাই আগে বৈবাহিক সম্পর্ক কেমন তা পরখ করে নিন। মনে রাখবেন, বিবাহ বিচ্ছেদে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় বাচ্চাদের।
ক্যারিয়ার পরিকল্পনা
ক্যারিয়ার নিয়ে বিশেষ কোন পরিকল্পনা থাকলে সন্তান নেওয়ার আগে ভেবে নিন। কারণ সন্তানকে তার প্রাপ্য সময়, যত্ন নিশ্চিত করা আপনার দায়িত্ব। যদি তা না পারেন তাহলে এখনই সন্তান নয়। আবার একাধিক সন্তান নেওয়ার আগেও ভেবে দেখুন। ক্যারিয়ারে স্থিতিশীল পরিস্থিতিতে গিয়ে এরপর সন্তান নিন।
বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ
দ্বিতীয়বার সন্তান নেওয়ার আগে নিজের বয়স উপযোগী কি না তা দেখে নিন। কোনো অসুখ থাকলে তা পরীক্ষা করে নিন। ওজন ঠিক রয়েছে কিনা দেখুন। বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন। যদি বিষণ্নতায় ভোগেন, তবে সন্তান লালন পালনে আপনি প্রস্তুত নন। আগে নিজেকে ফিট করুন।
সন্তানের নিরাপত্তা
সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বাবা মায়ের দায়িত্ব। প্রথম সন্তানের ক্ষেত্রে কী কী জটিলতা ছিল তা ভাবুন। প্রথম সন্তানের বিশেষ কোন অসুখ থাকলে দ্বিতীয় সন্তানের ক্ষেত্রেও তা হতে পারে কিনা দেখুন। বাচ্চার স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করুন। মনে রাখবেন, ছেলে হোক কিংবা মেয়ে সন্তান, একটি হোক কিংবা একাধিক একটি সুস্থ বাচ্চা জন্ম দেওয়াটাই বড় ব্যাপার।
সূত্র: প্যারেন্টস ডটকম