নিজের একটা ঠিকানা হবে, এমন স্বপ্ন কমবেশি সকলেই দেখেন। যার জমি নাই, তিনি জমি কিনে বাড়ি করবেন সেটা যেমন সময় সাপেক্ষ ব্যাপার, তেমনি অর্থের প্রয়োজনও অনেক। তাই কম খরচে কম সময়ে অনেকেই নিজের জন্য একটা ফ্ল্যাট কেনেন। আবার অনেকে বাড়ি করা ঝামেলা এড়াতেও ফ্ল্যাট কেনার দিকে ঝোঁকেন। ফলে অনেকেই ঢাকা বা ঢাকার বাইরে নিজের জন্য নিরাপদ ও আবাসযোগ্য সুন্দর ফ্ল্যাট কিনতে চান। তবে ফ্ল্যাট কিনব বললেই কেনা সহজ নয়। তাড়াহুড়ো করে মোটা অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করে ফল ভুগতে হয় অনেককেই।
তাই ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে কারও দ্বারা প্রলুব্ধ হয়ে তাড়াহুড়ো না করে ভালো করে খোঁজ খবর নিয়ে চুক্তি করুন। যেহেতু আপনি আপনার সঞ্চিত অর্থ দিয়ে একটি স্থায়ী ঠিকানা গড়তে চাচ্ছেন, তাই বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভালোভাবে খোঁজ-খবর নেওয়ার পাশাপাশি জমির দলিলপত্র, চুক্তিপত্রগুলো একজন আইনজীবীকে দেখিয়ে নেওয়া ভালো। এরপর ফ্ল্যাট বুকিং দিন।
চলুন জেনে নিই ফ্ল্যাট কেনার আগে আরও যেসব বিষয় দেখে নিতে হবে-
বাজেট
যে কোনও কিছু কেনার আগে একটা বাজেট ঠিক করা জরুরি। আর সেই বাজেট হবে আপনার সাধ্য অনুযায়ী। কারণ দেখা গেল আপনার সাধ্য ৭০ লাখ কিন্তু আপনি চুক্তি করেছেন ২ কোটি টাকার ফ্ল্যাটের। পরে পরিশোধ করতে পারলেন না। তখন ফ্ল্যাটটাই আপনার থাকবে কি না সন্দেহ। তাই আপনার বাজেট অনুযায়ী ফ্ল্যাট কেনার পরিকল্পনা করুন।
রাজউক কিংবা এলাকার প্রকল্পের অনুমোদন
ফ্ল্যাট কেনার সময় ভবনের নকশা নিজ নিজ এলাকার প্রকল্পের অনুমোদন নেওয়া আছে কিনা সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়া জরুরি। ঢাকায় হলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অনুমোদিত কিনা সেটি যাচাই করে নিতে হবে। অনুমোদন নেওয়া থাকলে নকশা অনুযায়ী ভবন তৈরি হয়েছে কিনা- জেনে নিন।
ফ্ল্যাটের মান যাচাই করুন
ফ্ল্যাট পছন্দ হলেই সঙ্গে সঙ্গে টাকাপয়সা মিটিয়ে দেবেন না। বরং কিছু দিন নির্মীয়মাণ বহুতল তৈরির কাজের সময়ে সেখানে উপস্থিত থাকুন। কাজের গতিপ্রকৃতির ওপর নজর রাখুন। ভবনের দেওয়াল, ছাদ, মেঝে মজবুত কি না, তা দেখে নিন। প্রয়োজনে এ বিষয়ে অভিজ্ঞ কারও সাহায্য নিন।
ফ্ল্যাটের অবস্থান
ফ্ল্যাট কেনার সময় আপনার জীবনধারা এবং প্রয়োজনের সাথে মানানসই একটি অবস্থান বেছে নিন। এমন জায়গায় ফ্ল্যাট কেনা উচিত, যেখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত। সে ক্ষেত্রে যদি খানিকটা বেশি দাম দিতে হয়, তা-ও ঠিক আছে। যেমন- আপনার কাজের স্থানের আশেপাশেই যাতে হয় সেটা খেয়াল করুন। এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, কেনাকাটা, বাজার, স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদি বিবেচনা করুন। এইসব বিবেচনায় নিয়ে একটি অবস্থান নির্বাচন করুন। আশেপাশের নিরাপত্তা, সুযোগ-সুবিধা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাকে বিবেচনায় রাখবেন।
ফ্ল্যাটের আকার ও বিন্যাস
ফ্ল্যাটের আকার/সাইজ, শয়নকক্ষ এবং বাথরুমের সংখ্যা আপনার বর্তমান ও ভবিষ্যত চাহিদা বিবেচনায় ঠিক আছে কিনা দেখবেন। সব ঠিক থাকলে সে অনুযায়ী লে-আউট প্ল্যান করবেন। প্রয়োজনের চাইতে ছোট এবং বড় ফ্ল্যাট দুটোই সমস্যা। প্রয়োজনের চেয়ে বড় ফ্ল্যাট ম্যানটেইন করতে টাকা এবং শ্রম দুটোই ব্যয় হয়। আবার ছোট হলেও সমস্যা। তাই বিবেচনা করে কিনুন। উত্তর ও দক্ষিণে দুইদিকে খোলা থাকলে ভালো। খালি জায়গা থাকলে ফ্ল্যাটের চাহিদা বেশি থাকে।
পানি ও গ্যাসের সুবিধা
ফ্ল্যাট যতই দামি ও সজ্জিত হোক না কেন; যদি এলাকায় পানি, ইলেক্ট্রিসিটি ও গ্যাসের সমস্যা থাকে, তাহলে কিন্তু পরবর্তীতে ভোগান্তি অপেক্ষা করছে আপনার জন্য।
আবাসন প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে যা জানা জরুরি
কেউ কম দামে অধিক সুযোগ-সুবিধাসহ ফ্ল্যাট দেওয়ার প্রলোভন দেখালেই সেটা কিনে ফেলবেন না। আবাসন প্রতিষ্ঠানের সুনাম ও বিশ্বাসযোগ্যতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার পর সিদ্ধান্ত নেন ফ্ল্যাট কেনা যাবে কি না।
নন্দনশৈলী
ফ্ল্যাট মানে তো শুধু বেডরুম, ড্রয়িং রুম, বারান্দা নয়। ফ্ল্যাটের নন্দনশৈলীও এখন বড় বিষয়। একটু সবুজের সমারোহ, একটু গৃহশৈলী (ইন্টেরিয়র) যেন থাকে। এসব থাকলে মন ভালো হয়ে যায়। ফ্ল্যাট কেনার আগে এসব ভাববেন। এ ছাড়া একই কমপ্লেক্সে অনেক ফ্ল্যাট থাকলে সেখানে ব্যায়ামাগার, হাঁটার জায়গা আছে কি না—দেখবেন। এ ধরনের কমপ্লেক্সে ইদানীং এসব নাগরিক সুবিধা রাখা হয়।
জরুরি রিহ্যাবের সদস্য হওয়াও
যে আবাসন প্রতিষ্ঠান থেকে ফ্ল্যাট কিনবেন, সেটি রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সদস্য কি না, সেটা নিশ্চিত হয়ে নেবেন। রিহ্যাবের সদস্য নয়, এমন প্রতিষ্ঠান থেকে ফ্ল্যাট কিনলে পরবর্তী সময়ে কোনও সমস্যা হলে রিহ্যাবের কাছে অভিযোগ করা যাবে না।
চুক্তিপত্রের খুঁটিনাটি দেখে নেবেন
কোম্পানির সঙ্গে ফ্ল্যাট কেনার যে চুক্তিটি করবেন, সেটি অবশ্যই একজন দক্ষ আইনজীবীকে দিয়ে যাচাই করে নেবেন। চুক্তির খুঁটিনাটি বিষয়গুলোও ভালোভাবে দেখে নিন।