কথায় আছে, বন্যরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে। তবে মানুষের হাজারো শখ। সেই শখ মেটানোর জন্য মাতৃস্নেহের মতো ভালবাসা ও যত্ন দিয়ে কেউ কেউ সেইসব বন্য প্রাণীকে ঘরে এনে পোষেন।
তবে সেক্ষেত্রে সাধারণত যেসব প্রাণী সহজেই ঘরে পোষ মানে তাদেরকেই গৃহপালিত করে রাখেন। এসব পোষা প্রাণী লালন পালন করতে গেলেও আছে হাজারো চিন্তা। কারণ মানব সন্তানের মতো করে এদের প্রতিপালন করা যায় না।
তাই পোষা প্রাণী পালনের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় হিসাব করতেই হয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক পোষা প্রাণী আনার আগে কী কী বিষয় বিবেচনা করবেন।
খরচ
পোষা প্রাণীকে প্রিয়সঙ্গী করতে চাইলে সবচেয়ে আগে খরচের দিক বিবেচনা করতেই হবে। প্রতি মাসে খাবার, চিকিৎসা, খেলনা ইত্যাদির জন্য আপনাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আলাদা করে রাখতে হবে। এ ছাড়া কোনো কিছু ভেঙে ফেললে তা মেরামত করার জন্যও বাড়তি খরচ করতে হয়।
বাড়ি প্রস্তুত করা
পোষা প্রাণী থাবা বসানোর আগেই বাড়ির জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলতে হবে। স্বল্প উচ্চতায় ঝুলন্ত ইনডোর প্ল্যান্ট বা ডেকোরেশন থাকলে তা নিরাপদ দূরত্বে রাখুন। যেকোনো বৈদ্যতিক তার ও কর্ড লুকিয়ে রাখুন। কারণ সেগুলো আপনার প্রিয় পোষা প্রাণীটির কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয় হতে পারে।
এ ছাড়া বসার ঘরে সেন্টার টেবিল থাকলে সেখানেই পোষা প্রাণী নিজের ঘর বানিয়ে ফেলবে। তাই তার জন্য আলাদা করে থাকার কোনো ব্যবস্থা করে রাখুন। অন্যদিকে এটিও মাথায় রাখুন সে ঘরটিও তার জন্য স্থায়ী নয়। আসলে তারা উন্মুক্ত জায়গায় থাকতেই বেশি পছন্দ করে।
গোসল করানো
দিনভর খেলাধুলা শেষে বিশ্রামের জন্য পোষা প্রাণীর একটি আরামদায়ক জায়গার প্রয়োজন পড়বে। তাই একটি নরম বিছানা বা কুশনের ওপর বিশ্রাম নেওয়ার অভ্যাস করানোই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। নয়তো আপনার বিছানা বেছে নিতে পারে। আর গোসলের সময় কিছুটা ধস্তাধস্তির জন্য মানসিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত রাখুন। কারণ বেশিরভাগ পোষা প্রাণী গোসল করতে পছন্দ করে না।
নির্দিষ্ট জায়গা তৈরি করা
পানি, খাবারের বাটি, লিটার বাক্স ও স্ক্র্যাচিং পোস্টের মতো প্রয়োজনীয় জিনিস এক জায়গায় রেখে পোষা প্রাণীর জন্য আলাদা একটি জায়গা তৈরি করুন। পোষা প্রাণী তাদের নিজস্ব জায়গা বুঝে গেলে সেখানেই খাবার খাওয়া, মলমূত্র ত্যাগ করা ও ঘুমানোর জন্য বেছে নেবে।
সময় দেওয়া
পোষা প্রাণী যেমন আপনার প্রয়োজনে আপনাকে সঙ্গ দেয়, তারাও বিনিময়ে ভালবাসা ও মনোযোগ পেতে চায়। তাই প্রাণী পোষার আগে নিজের দৈনন্দিন রুটিন পর্যালোচনা করা আবশ্যক। নিয়মিত হাঁটা, খেলার সময় এবং চাহিদা অনুযায়ী আদর করার জন্য আপনার সময় আছে কি না দেখুন। যথেষ্ট যত্ন ও মনোযোগ না পেলে পোষা প্রাণী বিষণ্নতায়ও ভুগতে পারে।
খাবার খাওয়ানো
পোষা প্রাণীদের প্রতিদিনের খাবারে কী দেবেন তা জেনে নিতে হবে। সেদ্ধ, টিনজাত বা কাঁচা খাবার যাই দেন না কেন, পোষা প্রাণী তা খেতে পছন্দ করছে কি না তা আপনাকেই বুঝে নিতে হবে। প্রথমে খেতে না চাইলে চিন্তার কিছু নেই। ধীরে ধীরে এসব খাবারে অভ্যস্ত হয়ে যাবে।
ব্যায়াম করানো
পোষা প্রাণী, বিশেষ করে কুকুর ব্যায়াম করলে সুস্থ থাকে। জিনিস কুড়িয়ে আনা এবং তাড়া করার পাশাপাশি কুকুরকে অবশ্যই হাঁটানোর অভ্যাস করাতে হবে। অন্যদিকে আপনার পোষা প্রাণীটি যদি বিড়াল হয়ে থাকে তাহলে তাদের নিজস্ব খেলাধুলার অপশন রয়েছে। বিড়াল নিশাচর হওয়ায় সন্ধ্যার দিকে খেলতে দেওয়া স্মার্ট কৌশল হতে পারে। এতে আপনার ঘুমানোর সময় হওয়ার আগেই তাদের খেলার শক্তি ব্যয় হয়ে যাবে।
ভেট কেয়ার
আপনার পোষা প্রাণীর স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য একজন নির্ভরযোগ্য পশুচিকিৎসক থাকা প্রয়োজন। কাছাকাছি কোনো ক্লিনিক খুঁজুন এবং টিকা দিতে হবে। নিয়মিত তাদের শারীরিক চেকআপ করাতে হবে। পশুচিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।
এই দায়িত্বগুলো পালন করতে হবে সেটি মাথায় রেখেই বাড়িতে পোষা প্রাণী আনার সিদ্ধান্ত নিন।