বৃষ্টি মানেই একদিকে মনোমুগ্ধকর পরিবেশ, আরেক দিকে কিছু চ্যালেঞ্জও বটে। বৃষ্টি যেমন পরিবেশকে ঠাণ্ডা ও সতেজ করে, তেমনি দৈনন্দিন জীবনে কিছু সমস্যারও সৃষ্টি করে। তবে সঠিক প্রস্তুতি থাকলে বৃষ্টির দিনে যেকোনো প্রতিকূলতা সহজেই মোকাবিলা করা যায়। আপনি বৃষ্টির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন এবং অপ্রত্যাশিত সমস্যাও এড়িয়ে চলতে পারবেন। কিছু বিষয় খেয়াল রাখলে বৃষ্টির দিনে এই সমস্যাগুলো সহজেই এড়িয়ে চলা সম্ভব। চলুন দেখে নেওয়া যাক, বৃষ্টির দিনে কী কী বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।
উপযুক্ত পোশাক এবং ছাতা
বৃষ্টির দিনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সঠিক পোশাক পরা এবং ছাতা বহন করা। যেহেতু বৃষ্টি কখন আসবে তা অনেক সময় আগেই অনুমান করা যায় না, তাই বৃষ্টির মৌসুমে বাইরে বের হওয়ার সময় একটি ছাতা বা রেইনকোট সঙ্গে রাখা জরুরি। বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে হালকা কিন্তু পানিরোধী কাপড় পরা ভালো। সাধারণত সুতির কাপড় খুব দ্রুত ভিজে যায়, তাই এই সময়গুলোতে সিনথেটিক বা মিশ্র কাপড়ের পোশাক বেছে নেওয়া উচিত।
জুতা নির্বাচন
বৃষ্টির দিনে সঠিক জুতা নির্বাচন করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। চামড়ার জুতা বা ক্যানভাসের জুতা সহজেই ভিজে গিয়ে পায়ে অস্বস্তিবোধ লাগবে। তাই এই সময় রাবারের তৈরি স্যান্ডেল বা ওয়াটারপ্রুফ বুটস পরা সবচেয়ে ভালো। এগুলো পা শুকনো রাখে এবং পিচ্ছিল রাস্তায় হাঁটার সময় কমফোর্ট দেয়। পা যেন ভিজে না যায় এবং সুরক্ষিত থাকে, তা নিশ্চিত করা জরুরি। কারণ ভেজা পায়ে সংক্রমণ বা পায়ের ত্বকের রোগ হতে পারে।
পথ চলার সময় সতর্কতা
বৃষ্টির দিনে পথঘাট পিচ্ছিল ও পানি জমার কারণে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। হাঁটার সময় বিশেষভাবে সাবধান থাকা উচিত। রাস্তায় পানি জমে থাকলে তার নিচে কি রয়েছে তা অনেক সময় বোঝা যায় না। ফলে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে। ফুটপাত দিয়ে হাঁটা নিরাপদ এবং যেকোনো পিচ্ছিল স্থান এড়িয়ে চলা উচিত। বৃষ্টির সময় গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রেও সাবধান থাকতে হবে। কারণ ভেজা রাস্তায় গাড়ি সহজেই স্কিড করতে পারে।
স্বাস্থ্য রক্ষা
বৃষ্টির দিনে ঠাণ্ডা, সর্দি-কাশি বা ভাইরাল জ্বরের প্রকোপ বাড়ে। বৃষ্টিতে ভিজে গেলে দ্রুত কাপড় পরিবর্তন করতে হবে এবং শুষ্ক থাকতে হবে। ঠাণ্ডা থেকে রক্ষা পেতে গরম পানীয় যেমন চা বা স্যুপ পান করা উপকারী। এছাড়া, বৃষ্টির দিনে রাস্তার খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। বৃষ্টির সময় খাদ্যে জীবাণু সংক্রমণ হতে পারে। তাই বাড়িতে তৈরি স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।
বাড়ির পরিচ্ছন্নতা
বৃষ্টির দিনে ঘর-বাড়িতে আর্দ্রতা বেড়ে যেতে পারে। যা ছত্রাকের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই বাড়ির পরিবেশকে শুষ্ক রাখতে নিয়মিত পরিষ্কার রাখা জরুরি। বিশেষ করে রান্নাঘর ও বাথরুমে আর্দ্রতা বেশি জমা হয়। সেগুলো ভালোভাবে শুকিয়ে রাখতে হবে। ছাদের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাও ঠিক রাখা জরুরি। যাতে বৃষ্টির পানি জমে না থাকে। এছাড়া, মশার উৎপাতও বেড়ে যায়। তাই মশারির ব্যবহার বা মশা তাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
ইলেকট্রনিক ডিভাইসের যত্ন
বৃষ্টির দিনে ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলো রক্ষা করাও গুরুত্বপূর্ণ। পানি ইলেকট্রনিক যন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর। তাই বাইরে বের হলে মোবাইল, ল্যাপটপ, বা অন্যান্য ডিভাইসকে ভালোভাবে প্যাকেট বা ওয়াটারপ্রুফ কভার দিয়ে রাখুন। এছাড়া ঘরে থাকাকালীন বিদ্যুৎ চলে গেলে ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি বন্ধ রাখা উচিত। এতে ক্ষতির সম্ভাবনা কমে।
বন্যা বা জলাবদ্ধতা মোকাবিলা
বৃষ্টির দিনে শহরাঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। যদি আপনার বাসস্থান বা কর্মস্থল জলাবদ্ধ এলাকার মধ্যে থাকে, তবে আগে থেকেই সতর্ক থাকতে হবে। পানি জমে গেলে সেই এলাকায় চলাফেরার জন্য বিকল্প রাস্তা বেছে নেওয়া ভালো। এছাড়া যদি পরিস্থিতি গুরুতর হয়, তবে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার প্রস্তুতি রাখুন।
মনের যত্ন
বৃষ্টির দিনগুলোতে ঘরে বসে একঘেয়েমি আসতে পারে, তাই নিজেকে বিনোদন দেওয়ার জন্য কিছু প্রস্তুতি রাখতে হবে। বই পড়া, সিনেমা দেখা বা সৃজনশীল কাজ করতে পারেন। বৃষ্টির স্নিগ্ধতা উপভোগ করার জন্য বারান্দায় বসে চা-কফির কাপে চুমুক দিয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখাও মনের প্রশান্তি এনে দিতে পারে।