হিজরি বছরের প্রথম মাস হলো মহররম। হযরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর প্রস্তাবনায় হিজরি বছরের প্রথম মাস হিসেবে মহররমকে সাব্যস্ত করা হয়। ফজিলতপূর্ণ মাসগুলোর মধ্যে অন্যতম এই মাস। এই মাসের ১০ তারিখে ইয়াওমে আশুরা।
মহররম মাসে পাপাচার নিষিদ্ধ। এটি হারাম মাস হলেও, এর ইবাদত ও আমল করার নির্দেশনা রয়েছে হাদিসে। ’মহররম’। এর অর্থ হলো সম্মানিত। হাদিসে এ মাসটিকে আল্লাহর মাস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। হাদিসে এসেছে-
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এটি (মহররম) শাহরুল্লাহ তথা আল্লাহর মাস।’ (মুসলিম)
মহররম মাসের রোজা রাখা হয়। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রমজানের পর সবচেয়ে উত্তম রোজা হলো মহররম মাসের রোজা।’ (মুসলিম)
এই মাসে রোজাদারদের ইফতার করাও ফজিলতপূর্ণ কাজ। আশুরার দিনে নিজে রোজা রাখতে হয়। পাশাপাশি রোজাদার অন্য ব্যক্তিকেও ইফতার করানো উত্তম।
মহররম মাসজুড়ে, বিশেষ করে আশুরার দিন বেশি তাওবা-ইসতেগফার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে হাদিসে। এই মাসের বিশেষ মুহূর্তে তাওবাহ-ইসতেগফার করলে আল্লাহ তাআলা পুরো জাতিকে ক্ষমা করে দেবেন। হাদিসে বলা হয়, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, মহররম হলো আল্লাহ তাআলার (কাছে একটি মর্যাদার) মাস। এই মাসে এমন একটি দিন আছে, যাতে তিনি অতীতে একটি সম্প্রদায়কে ক্ষমা করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অপরাপর সম্প্রদায়কে ক্ষমা করবেন।’ (তিরমিজি)
মহররম মাসে সাধ্যমত দান-সাদাকাহ করাও উত্তম। ইয়াতিমের প্রতি সদয় ব্যবহার ও সহযোগিতা করা উচিত। দরিদ্রদের সহায়তা করতে হবে। আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভে এই মাসে জিকির, ইবাদতও করা উত্তম।
মহররম মাসে কী করবেন তা নিয়ে যেমন হাদিসে বর্ণনা রয়েছে। তেমনই কী করা যাবে না তা নিয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়।
হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর স্মরণে কাল্পনিক তাযিয়া বা নকল কবর বানানো যাবে না। তাযিয়া বানিয়ে কাঁধে বা যানবাহনে বহন করা এবং মিছিলসহ সড়ক প্রদক্ষিণ করাও যাবে না। তাযিয়ার সামনে সম্মান প্রদর্শন করাতেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এছাড়্ও তাযিয়া বা নকল কবরে নজরানা স্বরূপ অর্থ দান করা থেকেও বিরত থাকতে হবে।
এছাড়াও হযরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর মৃত্যুর স্মরণে নিজেদের শরীরে আঘাত বা রক্তাক্ত করার বিষয়েও কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কোনো রকম শোক বা মাতম করা যাবে না। ‘হায় হুসেইন, হায় আলি’ ইত্যাদি বলে বিলাপ, মাতম কিংবা মর্সিয়া করা যাবে না। সেই সঙ্গে নিজেদের বুকে পেটে পিঠে ছুরি মেরে রক্তাক্ত করা থেকেও বিরত থাকতে হবে।
নকল তাযিয়া বা কবরের বাদ্যযন্ত্রের তালে প্রদর্শনী থেকে বিরত থাকতে হবে। এই দিনে অনেকেই হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহ আনহুর নামে ছোট বাচ্চাদেরকে ভিক্ষুক বানিয়ে ভিক্ষা করান। তাদের ধারণা, ওই বাচ্চা দীর্ঘায়ু হবে। এটি কু-প্রথা। এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকতে হবে। শোক প্রকাশের জন্য নির্ধারিত কালো ও সবুজ রঙের বিশেষ পোশাক পরাও ঠিক না।
১০ মহররম পৃথিবী সৃষ্টি করা হয়েছে, এই দিনেই কেয়ামত সংঘটিত হবে, হজরত আদম ও হাওয়া আলাইহিস সালামের সৃষ্টি হয়েছে, আরাফাতের ময়দানে একত্রিত করা হবে এই দিনে, হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের আগুন থেকে নাজাত দেওয়া হবে, হজরত নুহ আলাইহিস সালামকে মহাপ্লাবন থেকে নিষ্কৃতি ও পাপিষ্ঠ জাতিকে ধ্বংস করা হবে এবি এই দিনেই অত্যাচারী শাসক নমরূদের ধ্বংস হবে- এই ধরণের কথা বা বিষয়ের প্রচার থেকে বিরত থাকার কথাও বলা হয় হাদিসে।