বন্যা একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বাংলাদেশ প্রতিবছরই কম বেশি বন্যার মুখোমুখি হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পানিবন্দি হয়। তবে বৃষ্টিপাত ও জলোচ্ছ্বাস বেড়ে গেলে দেশের উঁচু অঞ্চলগুলোও বন্যার কবলে পড়ে। বন্যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা, সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি করে। বন্যার সময় সচেতনতা ও সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। তবে বন্যা মোকাবিলায় সঠিক প্রস্তুতি এবং পরিকল্পনা যেমন প্রয়োজন, তেমনি কিছু কার্যক্রম থেকে বিরত থাকাও আবশ্যক। বন্যার চলাকালীন ও এর পরবর্তী সময়ে যে বিষয়গুলোতে সতর্ক থাকতে হবে কিংবা যে কাজগুলো করা উচিত হবে না চলুন জেনে নেই।
পানির মধ্যে হাঁটাহাঁটি করা
বন্যার সময় পানির উচ্চতা কখনোই অনুমান করে বোঝা যায় না। কারণ পানি দেখতে স্বচ্ছ নাও হতে পারে। অনেক সময় পানির নিচে বিদ্যুৎ লাইন ছিঁড়ে গিয়ে বিপজ্জনক অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। পানির গভীরতা বুঝতে না পারলে চোরাবালির মধ্যে আটকা পড়ার সম্ভাবনাও থাকে। তাছাড়া দূষিত পানিতে হাঁটলে ফলে চর্মরোগ ও পানিবাহিত রোগের সংক্রমণ ঘটতে পারে। তাই প্রয়োজন ছাড়া বন্যার পানিতে না নামাই ভালো।
বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা
বন্যার সময় ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখাই শ্রেয়। বিদ্যুৎ সংযোগ চালু থাকলে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। বিশেষ করে যদি ঘর বা আশেপাশের কোনো অংশ পানির নিচে থাকে। পানি বিদ্যুতের ভালো পরিবাহক হওয়ায় বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার করলে তড়িতাহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়া বৈদ্যুতিক প্যানেল বা স্যুইচ বোর্ডের কাছে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
নিরাপদ স্থান ত্যাগ করা
বন্যার সময় মানুষ আতঙ্কিত হয়ে নিরাপদ স্থান ছেড়ে চলে যেতে চায়। কিন্তু এ ধরনের সিদ্ধান্ত বিপদ ডেকে আনতে পারে। সরকারি বা বেসরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার নির্দেশ না আসা পর্যন্ত নিরাপদ স্থানে অবস্থান করুন। যদি কোথাও আটকা পড়েন, তবে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়ে সাহায্য পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করুন।
আতঙ্কিত হওয়া
বন্যার সময় আতঙ্কিত হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু আতঙ্কিত হলে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়লে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে। তাই পরিস্থিতি যতই ভয়াবহ হোক না কেন, শান্ত থাকার চেষ্টা করুন। বন্যা মোকাবিলায় করণীয় সম্পর্কে সচেতন থাকুন।
প্যাকেটজাত খাবার ও পানীয় গ্রহণ না করা
বন্যার সময় খোলা পানীয় ও খাবার স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। দূষিত পানি ও খাবার থেকে পানিবাহিত রোগ যেমন কলেরা, ডায়রিয়া, টাইফয়েড ইত্যাদির ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই খোলা খাবার ও পানি খাওয়ার পরিবর্তে প্যাকেটজাত খাবার ও বিশুদ্ধ পানি পান করুন। সম্ভব হলে পানি ফুটিয়ে পান করুন।
সাহায্যকারী সংস্থার নির্দেশনা অমান্য করা
বন্যার সময় সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা থেকে নির্দেশনা মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু অনেকেই এগুলোকে উপেক্ষা করে নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নেন। যা বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই সাহায্যকারী সংস্থার নির্দেশনা মেনে চলুন এবং তাদের পরামর্শ অনুসারে কাজ করুন।
অনলাইনে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা
বন্যার সময় অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য শেয়ার করে থাকেন। এটি মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ায় এবং ভুল তথ্যের কারণে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। তাই বিভ্রান্তিকর বা যাচাইবিহীন তথ্য শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন। নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য শেয়ার করুন এবং অন্যদেরও সতর্ক করুন।
গাড়ি চালানো
বন্যার সময় পানি জমে গেলে গাড়ি চালানো অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে। পানির প্রবাহ গাড়ি ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে যদি পানি গভীর হয় বা স্রোত তীব্র হয়। বন্যার সময় গাড়ি চালানো থেকে বিরত থাকুন। যদি চালানো অত্যন্ত জরুরি হয়, তবে জলাবদ্ধ রাস্তা এড়িয়ে চলুন।
অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সঙ্গে রাখা
বন্যার সময় দ্রুত সরে যাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। তাই অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সঙ্গে নেওয়া থেকে বিরত থাকুন। শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র সঙ্গে রাখুন। যেমন- ঔষধ, প্রয়োজনীয় নথি, টাকা, মোবাইল ফোন ইত্যাদি। ভারী জিনিস সঙ্গে নিয়ে সরে যাওয়ার চেষ্টা বিপজ্জনক হতে পারে।
সাঁতার না জানলে পানিতে নামা
সাঁতার না জানলে বন্যার পানিতে নামা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। যদি পানির মধ্যে নামার প্রয়োজন হয়, তবে সাঁতার জানা লোকের সাহায্য নিন বা লাইফ জ্যাকেট পরুন। সাঁতার না জানলে বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। যা প্রাণহানির কারণ হতে পারে।