চরিত্র যেকোনো মানুষের গুণাবলী অন্যতম অংশ। মানুষের ব্যক্তিত্বের বিকাশ করে চরিত্র। যার চরিত্র যত উত্তম. তার লোকপ্রিয়তা ততই বেশি। ভালো মানুষকে বিচার করার ক্ষেত্রে সুন্দর আচার-ব্যবহার ও নেক চরিত্রের অধিকারী হতে হয়। ইসলামের মানদণ্ডে উত্তম চরিত্রের অধিকারীর ব্যক্তি মর্যাদা অনেকে উপরে।
ইসলাম ধর্মে নবিজি (সা.) উত্তম ও সুন্দর চরিত্রের অধিকারী মুসলমানদের সর্বোত্তম মুসলমান হিসেবে গণ্য করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আপনাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি, যে চরিত্রের দিক দিয়ে উত্তম।“ (সহিহ বুখারি: ৩৫৫৯, সহিহ মুসলিম: ২৩২১)
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) আরও বর্ণনা করেন, নবিজি (সা.) বর্ণিত আরেকটি হাদিসে উত্তম চরিত্রের ব্যক্তিদের বিষয়ে বলেন, “তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি আমার কাছে খুব প্রিয়, যার চরিত্র ভালো।“ (সহিহ বুখারি: ৩৭৫৯)
উত্তম চরিত্রের অধিকারীর ব্যক্তির মর্যাদার কথা উল্লেখ করে আয়েশা (রা.) বলেন, “আমি আল্লাহর রাসুলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতে শুনেছি, নিশ্চয়ই মুমিন ব্যক্তি তার ভালো চরিত্রের মাধ্যমে দিনে রোজা পালনকারী ও রাতে তাহাজ্জুদগুজারীর সমান মর্যাদা লাভ করতে পারে।“ (সুনানে আবু দাউদ: ৪৭৯৮)
ইসলামে আখলাকুল হাসানাহ্ তথা উত্তম চরিত্রের স্থান অনেক ঊর্ধ্বে। পৃথিবীতে আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নের নিমিত্তে আল্লাহ যুগে যুগে নবী-রসূলদের প্রেরণ করেছেন। প্রিয় নবী (সা) কে প্রেরণের অন্যতম কারণ সচ্চরিত্রের বিকাশ সাধন। এক ব্যক্তি রসূল (সা) কে দ্বীনের সংজ্ঞা জিজ্ঞেস করলে উত্তরে তিনি বলেন, `উত্তম চরিত্র`। এ কথায় বুঝা যায়, সচ্চরিত্রতা বা উত্তম চরিত্র দ্বীনের অন্যতম একটি রুকন। যা ব্যতীত দ্বীনের অস্তিত্বই কল্পনা করা যায় না।
ইসলাম ধর্মে উত্তম চরিত্রের অধিকারীর ব্যক্তির জন্য পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছে। আবু হোরায়রা (রা.) বলেন, “আল্লাহর রাসুলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রশ্ন করা হলো, কোন কাজ সবচেয়ে বেশি পরিমাণ মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাবে? তিনি বললেন, আল্লাহভীতি ও উত্তম চরিত্র। আবার তাকে প্রশ্ন করা হলো, সবচেয়ে বেশি পরিমাণ মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে কোন কাজ? তিনি বললেন, মুখ ও লজ্জাস্থান। (অর্থাৎ এ দুটি অঙ্গের গুনাহ) (সুনানে তিরমিজি: ২০০৪)
সুতরাং উত্তম চরিত্রের অধিকারী হতে হলে নিয়মিত আল্লাহর তওফিক ও সাহায্যও প্রার্থনা করতে হবে। নবিজি (সা.) আল্লাহর কাছে উত্তম চরিত্র চেয়ে দোয়া করতেন,” আল্লাহুম্মাহদিনী লিআহসানিল আমালি ওয়া আহসানিল আখলাকি লা ইয়াহদী লিআহসানিহা ইল্লা আনতা ওয়া কিনী সায়য়্যিয়াল আমালি ওয়া সায়য়্যিয়াল আখলাক্বি লা ইয়াক্বী সায়য়্যিয়াহা ইল্লা আনতা।” অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমাকে পরিচালিত করুন উত্তম কাজ ও উত্তম চরিত্রের পথে। আপনি ছাড়া উত্তম পথে আর কেউ পরিচালিত করতে পারবে না। আমাকে খারাপ কাজ ও বদ চরিত্র থেকে রক্ষা করুন। আপনি ছাড়া এর অকল্যাণ থেকে কেউ আমাকে বাঁচাতে পারবে না। (সুনানে নাসাঈ: ৮৯৬)
প্রত্যেক ব্যক্তিরই উত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়া আবশ্যক। এতে সমাজ ও পরিবারে শান্তি স্থাপিত হয়। আল্লাহ্ সন্তুষ্টি লাভ হয়। আখিরাতেও কল্যান পাওয়া যায়। সুন্দরভাবে জীবনযাপনের জন্য ও আখিরাতের সুখ শান্তি নিশ্চিতে জন্য উত্তম চরিত্রের অধিকারী হতে হবে।
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ রয়েছে, আল্লাহ তায়ালা কোন জাতির অবস্থার পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত না তারা নিজেদের অবস্থার পরিবর্তনে এগিয়ে আসে। (সূরা রা’দ : ১১)