এই বিশ্বে রহস্যের যেনো শেষ নেই। প্রকৃতির খেয়ালেই চলছে সবকিছু। সাগরের ঢেউ আর জোয়ার- ভাটার রূপের কথাও সবারই জানা। কিন্তু মৃত সাগরের রহস্যের কথা কি শুনেছেন কোথাও চলুন আজ জেনে নিই তেমনই একটি গল্প।
মধ্য প্রাচ্যে অবস্থিত একটি মৃত সাগর। সাগর বলা হলেও এটি মূলত একটি হ্রদ। যার সর্বোচ্চ গভীরতা ৩০৪ মিটার। মৃত সাগরের পূর্ব সীমান্তে রয়েছে জর্ডান এবং পশ্চিম সীমান্তে যথাক্রমে ইসরাইল ও প্যালেস্টাইন।
বলা হয়, প্রায় তিন মিলিয়ন বছর পূর্বে বর্তমান জর্দান নদী, মৃত সাগর এবং ওয়াদি আরাবাহ অঞ্চল লোহিত সাগর এর জলে বারবার প্লাবিত হত। এর ফলে একটি সরু উপসাগরের সৃষ্টি হয়। উপসাগরটি জেজরিল উপত্যকায় একটি সরু সংযোগের মাধ্যমে লোহিত সাগরের সঙ্গে যুক্ত ছিল।
প্রাকৃতিক তত্ত্ব অনুযায়ী প্রায় ২ মিলিয়ন বছর পূর্বে উপত্যকা এবং ভূমধ্যসাগরের মধ্যবর্তী স্থলভাগ যথেষ্ট উচ্চতা লাভ করে। ফলে মহাসাগরের প্লাবনে এই অঞ্চলে সৃষ্ট উপসাগরটি পরিবেষ্টিত হয়ে হ্রদে পরিণত হয়। এই সাগরের অদ্ভূত বিষয় হল কেউ ডুবতে চাইলেও এখানে ডুবতে পারে না। সাঁতার না জানা মানুষও ভেসে থাকে।
তবে এর পেছনে রয়েছে বৈজ্ঞানিক কারণও। হিসাব বলছে জলে দ্রবীভূত লবণের পরিমাণ ৩৪ শতাংশ। যা সমুদ্রের জলের চেয়ে ৮.৬ গুণ বেশি। যা পানিটিকে পরিস্কার পানির মত অতটা হাল্কা রাখেনি। ভারী করে দিয়েছে। আর তা এতটাই ভারী যে মানুষের দেহ তার চেয়ে হাল্কা।
মৃত সাগরের পানিতে মিশে থাকা লবণে ১৪% ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড, ৪% পটাশিয়াম ক্লোরাইড, ৫০% ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড এবং ৩০% সোডিয়াম ক্লোরাইড রয়েছে। এই পানির ঘনত্ব ১.২৪ কেজি/লিটার। এই সকল উপাদানের কারণে ডেড সি’র পানি পৃথিবীর অন্যান্য স্থানের পানির থেকে অনেক ভারি। তাই এখানে কেউ চেষ্টা করলেও ডুবতে পারে না।
এছাড়া এই মৃত সাগরের জলে লবণের পরিমাণ এতটাই বেশি যে কোনও মাছ বা জলজ প্রাণিও দেখা যায় না। বলা চলে কোনও প্রাণ সৃষ্টির উপযোগী নয়। সেই কারণেই এর নাম ডেড সি। তবে এখানে পর্যটকরা যায়। এবং সেখানে অদ্ভুতভাবে ভেসে থাকার ছবি সামনে আসে। বৈজ্ঞানিক কারণ থাকলেও এই সাগর অবাক করে সকলকেই।