• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘বয়কট’ শব্দটি যেভাবে এলো


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ১৩, ২০২৪, ০৬:৩৩ পিএম
‘বয়কট’ শব্দটি যেভাবে এলো
ছবি: সংগৃহীত

বয়কট শব্দটির সঙ্গে আমরা কম-বেশি সবাই পরিচিত। কোনো কিছু পছন্দ না হলেই বয়কট করে দেই। কেউ ব্যক্তিগতভাবে বয়কট করে। আবার সমষ্টিগতভাবেও বয়কটের সিদ্ধান্ত হয়। বয়কট মানে কোনো কিছু ব্যবহার না করা। আবার কোনো ব্যক্তিকে বয়কট করলে বোঝায় তার সবকিছু থেকে সরে আসা। কোনো পণ্যকে বয়কট করলে তা ব্যবহার করাই বন্ধ করে দেই। অনেকে মনের অভিমানে বয়কট করে। আবার অনেকে বয়কট করে প্রতিবাদের লক্ষ্যে। যেকোনো উদ্দেশ্যেই হোক বয়কট করার সিদ্ধান্ত বেশ কঠিন হয়।

বর্তমান সময়ে ‘বয়কট’ শব্দটির ব্যবহার বেড়েছে চারপাশে। জনপ্রিয় বিদেশি পণ্যকে ‘বয়কট’ করতে চলছে আন্দোলনও। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে রাজপথেও ইসরায়েলি পণ্যকে বয়কট করার পক্ষে জোড়ালে আন্দোলন চলছে। আন্দোলনে হয়তো আপনিও সামিল হয়েছেন। কণ্ঠ মিলিয়ে ইসরায়েলি পণ্যকে বয়কট করছেন।

বহু বছর আগেও ইংরেজ আমলে বিদেশি পণ্যের বিরুদ্ধে ‘বয়কট’-এর ডাক ছিল। ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অংশ ছিল তাদের পণ্য বয়কটের সিদ্ধান্ত। তাই এই শব্দটির ব্যবহার চলে আসছে বহু আগ থেকেই। তবে জানেন কি, বয়কট শব্দটি কোথা থেকে এসেছে?

বয়কট শব্দটি বিদেশি শব্দ। যা আবির্ভাব হয় এক ব্যক্তির নামানুসারে। হ্যা, ব্যক্তির নামেই হয়েছে ‘বয়কট’ শব্দের উত্পত্তি। ১৮৩২ সালে ইংল্যান্ডে ওই ব্যক্তিটি ছিলেন  চার্লস কানিংহাম বয়কটের (Charles Cunningham Boycott) জন্ম হয়। প্রথমে নাম ছিল ‘বয়কাট’। কিন্তু ৯ বছর বয়সে নাম বদলে হয় ‘বয়কট’।

চার্লস বেশ দুরন্ত ও মেধাবী ছিলেন। সেনাবাহিনীতে যুক্ত হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। যদিও সেই স্বপ্ন তার পূরণ হয়নি। এরপর শুরু করেন জমি কেনাবেচার কাজ। কিছুদিনের মধ্যে মায়ো কাউন্টির অন্তর্গত আঁচিল দ্বীপের বেশ খানিকটা জমি কিনে নেন। আয়ারল্যান্ডের আর্ল অব আর্নের জমি কেনাবেচার মধ্যস্থতাকারীর কাজও করেন। আর্নের অধীনে প্রায় ৪০০০০ একর জমির দায়িত্ব পান বয়কট। সেই জমির দেখাশোনা করা এবং কৃষকদের থেকে খাজনা আদায় করা ছিল তার দায়িত্ব। অনাদায়ে কৃষকদে উচ্ছেদ করাও হতো। এই কাজে প্রচণ্ড নৃশংস ছিলেন বয়কট।

বয়কট বিশ্বাস করতেন, জমি ও চাষির জীবনের সব সত্ত্ব শুধু মালিকের। তাই যেভাবেই হোক প্রাপ্য আদায় করতেই হবে। কৃষকদের উপর রীতিমতো জুলুম করতেন বয়কট। তার জুলুসে ক্ষিপ্ত ছিলেন চাষিরা।

১৮৭৯ সালে কৃষক মাইকেল ডেভিটের সন্তান মায়ো প্রদেশে গড়ে তোলেন ‘আইরিশ ন্যাশনাল ল্যান্ড লিগ’। খাজনা কমানো ও উচ্ছেদবিরোধী আন্দোলন শুরু করেন। সরগরম হয়ে ওঠে পুরো  আয়ারল্যান্ড। কৃষকরা ২৫ শতাংশ খাজনা কমানোর দাবি জানান। শেষ পর্যন্ত ১০ শতাংশ খাজনা কমানোর সিদ্ধান্ত হয়।

খাজনা উদ্ধারে কৃষকদের উপর অত্যাচার শুরু করেন বয়কট।  কয়েকটি পরিবারকে উচ্ছেদ করেন। যা কিছুদিনের মধ্যেই সংসদ পর্যন্ত পৌছায়।

ওই সময়ের সংসদের সদস্য ও ল্যান্ড লিগের পক্ষপাতী চার্লস স্টুয়ার্ট পার্নেল ঘোষণা করেন, বয়কটের মতো ব্যক্তিকে সব জায়গায় উপেক্ষা করা উচিত। এরপরই বয়কটের বিরুদ্ধে সামাজিক ধর্মঘট শুরু।

তার সঙ্গে সবাই কথা বলা বন্ধ করে দেয়, কোনো অনুষ্ঠানে তাকে নিমন্ত্রণ দেওয়া হয় না। জমির বেচা কেনা বন্ধ করে দেয়। তাকে সম্পূর্ণ একা করে রাখা হয়।

এরপরই ‘দ্য টাইমস’-এর পাতায় নিজের অসহায় অবস্থার কথা জানিয়ে খোলা চিঠি লিখেন বয়কট। তার অবস্থা দেখে এগিয়ে এলেন বেলফাস্ট আর ডাবলিনের বন্ধুরা। জমির ফসল কাটার জন্য মায়োতে ৫০ জন লোক পাঠানো হয়। ৯০০ সশস্ত্র সৈন্য দিয়ে তাদের নিরাপত্তা দেওয়া হয়। ৩৫০ পাউন্ডের ফসল তোলা হয়। আর সৈন্যবাহিনীর জন্য বয়কটের  খরচ হয় ১০ হাজার পাউন্ড। যা বহন করা বেশ কষ্টসাধ্য ছিল।

বয়কটের এই ঘটনা ইংল্যান্ডসহ ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়ে। খবরের কাগজের শিরোনামে বয়কটের অসংখ্য কার্টুন আঁকা হয়। চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে বয়কটের কর্মকাণ্ডের গল্প।

উনিশ শতকের শেষ দিকে ল্যান্ড লিগ ও পার্নেলের জনপ্রিয়তার ফলে জমিদার শ্রেণিরা অত্যাচার করতেন কৃষকদের উপর। তখনই বয়কটের পদ্ধতিতে প্রতিবাদ জানানো শুরু হতো। পরবর্তী সময়ে বয়কট একটি দৃষ্টান্ত হয়ে উঠে। প্রতিবাদের অংশ হিসেবে একঘরে করে রাখার রীতি চালু হয়। আর নাম দেওয়া হয় বয়কট। যা পরবর্তী সময়ে বয়কটিং শব্দে জনপ্রিয়তা পায়।

Link copied!