প্রাণীর জন্ম হয় শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। এটাই সাধারণ প্রক্রিয়া। কিন্তু কিছু কিছু প্রাণীর ক্ষেত্রে তা ভিন্নও হয়। শুক্রাণুর সঙ্গে মিলন না ঘটেই কিছু প্রাণী সন্তান জন্মদানে সক্ষম হয়। আর এই প্রক্রিয়ার নাম হচ্ছে ‘পার্থেনোজেনেসিস’।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের গবেষকরা নতুন এই প্রক্রিয়ার খবর প্রকাশ করেছেন। গবেষণায় প্রমাণ হয়, যৌন সম্পর্ক ছাড়াই কিছু প্রাণী প্রজননে সক্ষম হয়। অর্থাত্ কোনো পুরুষ সঙ্গীর সঙ্গে মিলন কিংবা শুক্রাণু ছাড়াই কিছু স্ত্রী প্রাণী প্রজননে সক্ষম।
গবেষকরা জানান, যুক্তরাজ্যে বোয়া প্রজাতির একটি সাপ পার্থেনোজেনেসিস প্রক্রিয়ায় ১৪টি বাচ্চা জন্ম দেয়। সাপটি দীর্ঘ ৯ বছর কোনো পুরুষ সঙ্গীর সঙ্গে মিলিত হয়নি। এরপরই বিষয়টি বেশ সাড়া জাগিয়েছে।
পার্থেনোজেনেসিস শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ ‘পার্থেনোস’ ও ‘জেনেসিস’–থেকে । পার্থেনোস শব্দের অর্থ কুমারী এবং জেনেসিস শব্দের অর্থ জন্ম। যার অর্থ দাড়ায় কুমারী জন্ম। মানে কুমারী অবস্থায় সন্তান জন্ম দেওয়া।
গবেষকরা জানান, কিছু উদ্ভিদ, পোকামাকড়, পাখি, মাছ এবং উভচর ও সরীসৃপ এই প্রক্রিয়ায় সন্তান জন্ম দিতে সক্ষম। এছাড়াও কিছু ভিমরুল, ক্রাস্টেসিয়ান ও গিরগিটি এই প্রক্রিয়ায় বাচ্চা জন্ম দিতে পারে। তবে অন্য প্রজাতির প্রাণীদের মধ্যে এই প্রক্রিয়ায় সন্তান জন্মের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বিষয়টি প্রমাণে কিছু সক্ষম পশুপাখিদের আটকে রেখে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।
গবেষকরা যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যের একটি অ্যাকুয়ারিয়ামে শার্লট নামের একটি স্টিংরে মাছকে এই প্রক্রিয়ায় গর্ভধারণের প্রমাণ পেয়েছেন। তবে সন্তান প্রসবের আগেই মাছটি মারা যায়।
গবেষক ডেমিয়ান চ্যাপম্যান সম্প্রতি ফ্লোরিডার সারাসোটায় মোট ম্যারিন ল্যাবরেটরি অ্যান্ড অ্যাকুয়ারিয়ামে সার্কস অ্যান্ড রেস কনজারভেশন রিসার্চ প্রোগ্রাম পরিচালনা করেন।
রিসার্চ শেষে গবেষক জানান, পুরুষ সঙ্গীর সঙ্গে স্ত্রী প্রাণীর মিলন সম্ভব না হলেই এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। পার্থেনোজেনেসিস প্রক্রিয়ায় পশুর ডিমে ভ্রূণ সৃষ্টির জন্য শুক্রাণুর প্রয়োজন হয় না। তবে সব প্রাণীর মধ্যে এই প্রক্রিয়ায় গর্ভধারণের সক্ষমতা নেই। প্রাকৃতিক পরিবেশে বন্য প্রাণীদের মধ্যে এই প্রক্রিয়া প্রয়োগের কোনো পরিকল্পনা এখনও করা হয়নি।