বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে ছাগল গৃহপালিত পশু। তবে কোনো একটি দেশে ছাগলকে জাতীয় পশুর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। যা হয়তো অনেকেরই অজানা। যেকোনো স্বাধৗন দেশই তাদের জাতীয় পশু, পাখি, ফল, ফুল নির্ধারণ থাকে। সেই ধারাবাহিকতায় নির্দিষ্ট একটি প্রাণীকে জাতীয় পশু হিসেবে নির্বাচন করে। তেমনই `ছাগল` জাতীয় প্রাণী হিসবে পরিচিত বিশ্বের একটি দেশে। আর সেই দেশটি দূরবর্তী কোনো দেশ নয়। বরং আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ পাকিস্তানেই `ছাগল` জাতীয় পশুর মর্যাদা পেয়েছে।
পাকিস্তানের জাতীয় পশু হচ্ছে মারখোর ছাগল। যা কোনো সাধারণ ছাগল নয়। মারখোর একটি বিশেষ জাতের বন্য ছাগল। সাপের মতো পেঁচানো শিং-এর কারণে এদের আরেক নাম "সাপশিঙি"। এই প্রজাতির ছাগল সাধারণত ভারত, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলে পাওয়া যায়। ২০১৫ সাল পর্যন্ত এটি বিপন্ন প্রজাতি ছিল।
জানা যায়, মারখোর হলো ছাগল পরিবারের বৃহত্তম প্রজাতি। মারখোর নামটি ফার্সি ভাষা থেকে এসেছে। যার মানে "সাপ ভক্ষণকারী"। কারণ মারখোর নিজেকে রক্ষার জন্য বনাঞ্চলে সাপ শিকার করে থাকে। আর এই কাজে মারখোর দুর্দান্ত দক্ষতার অধিকারী।
মারখোর যৌনভাবে দ্বিরূপী। পুরুষ মারখোরের চিবুকে, গলদেশে, বক্ষে ও জঙ্ঘায় লোম স্ত্রী মারখোরের তুলনায় লম্বা হয়। স্ত্রীরা গাত্রবর্ণে পুরুষদের থেকে বেশি লালচে, ছোট লোম ও খাটো কালো দাঁড়ি বিশিষ্ট এবং কেশরহীন হয়। তবে উভয় লিঙ্গেরই সাপের মতো শক্তভাবে পাকানো শিং রয়েছে। যা গোঁড়ায় কাছাকাছিভাবে মিলিত। কিন্তু আগায় উপর দিকে ছড়িয়ে থাকে। পুরুষদের শিং ১৬০ সেঃমিঃ (৬৩ ইঞ্চি) পর্যন্ত বাড়ে এবং স্ত্রীদের ২৫ সেঃমিঃ (১০ ইঞ্চি) পর্যন্ত বড় হয়। পুরুষ মারখোরের গায়ে কটুগন্ধ আছে, যা গৃহপালিত ছাগলের গন্ধকেও ছাড়িয়ে যায়।
মারখোর সাপ খেয়ে ফেলতে পারে। তারা জাবর কাটার পর মুখ থেকে একটি ফেনাজাতীয় পদার্থ বের হয়। যা মাটিতে পড়ে শুঁকিয়ে যায়। এই ফেনাজাতীয় পদার্থ দিয়ে সাপের বিষ তোলা যায় বলে ধারণা করা হয়।
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) মারখোরকে বিপন্নশ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করেছে। পৃথিবীতে এই প্রজাতির মাত্র ২হাজার ৫০০টির মতো প্রাণী টিকে আছে বলে জানায় সংস্থাটি। তাদের মতে, গত দুই প্রজন্মে ২০শতাংশ সংখ্যা কমেছে এই প্রাণীর। বিরল এই প্রাণীটিই পাকিস্তানের জাতীয় পশু হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।