শীতে ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচতে যেসব পাখি নিজ দেশের চেয়ে তুলনামূলক উষ্ণ অঞ্চলে চলে আসে, তাদেরকে অতিথি পাখি বলা হয়। প্রতিবছর শীতকালে আমাদের দেশেও এরকম কিছু অতিথি পাখি আসে। ওরা মূলত হিমালয়ের পাদদেশ আর রাশিয়ার বিভিন্ন জায়গা থেকে আসে। আমাদের দেশে যেসব প্রজাতির পাখি রয়েছে তার মধ্যে ২৪৪ প্রজাতির পাখি অতিথি পাখি হয়ে আসে।
শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে এরা আমাদের দেশে আসতে শুরু করে। তারপর মার্চ থেকে এপ্রিলের দিকে ওদের দেশে বরফ গলতে শুরু করলে ফিরে যেতে থাকে নিজেদের দেশে। কয়েকটা অতিথি পাখির মধ্যে রয়েছে,বালি হাঁস, লেঞ্জা হাঁস, পাতারি হাঁস, বৈকাল হাঁস, গিরিয়া হাঁস, ধূসর রাজহাঁস, ভূতি হাঁস, চিতি হাঁস, বারো ভূতি হাঁস, বৌমুনিয়া হাঁস।
কিছু কবুতর প্রজাতির অতিথি পাখিও রয়েছে। যেমন, মিষ্টি জাল কবুতর, গঙ্গা কবুতর, পান্তামুখী, লালশির, নীলশির, রাঙ্গামুরি, পাথরঘুরানি বাতান প্রভৃতি। জেনে নেওয়া যাক আরও কয়েকটি অতিথি পাখির কথা-
বড়ো গুলিন্দা
বড়ো গুলিন্দা পাখি ইউরোপ ও এশিয়ার উত্তরাঞ্চলে বসবাস করে। এই পাখিগুলো বৃটেন আর আয়ারল্যান্ডে বেশি দেখা যায়। আফ্রিকা ও ইউরোপ এশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে এরা ঘুরতে বের হয়। এই পাখিগুলো সাধারণত কাদার ভেতর ঘুরে বেড়ায় এবং পোকা মাকড় খায়।
রাঙ্গামুরি
রাঙ্গামুরি পাখি হাঁসের একটি প্রজাতি। এরা ইউরোপ এবং মধ্য এশিয়ায় বসবাস করে। শীতকালে এরা বাংলাদেশ অথবা পশ্চিম আফ্রিকার কোনও দেশে চলে যায়। কখনও কখনও আবার আফ্রিকায়ও যায়। এরা সবসময় দলবেঁধেই ঘোরাঘুরি করে। পানির বিভিন্ন উদ্ভিদ এই পাখিগুলোর প্রধান খাবার।
মানিকজোড়
সাদা মানিকজোড় পাখি অনেক বড় আকারের হয়। এই পাখির লেজ অনেক লম্বা এবং লাল রঙের হয়। এদের প্রধান খাবার হলো, পোকা মাকড়, সাপ, ব্যাঙ, এবং ছোট ছোট প্রাণী। সাদা মানিকজোড় তেমন কোনও শব্দ করতে পারে না, কেবল হিসস করে একটা মৃদু শব্দ তৈরি করতে পারে। মিশরে এই পাখিগুলোকে মনে করা হতো আত্মার প্রতীক। গ্রিসে এই পাখিকে এতোই শ্রদ্ধা করা হতো যে, কেউ মানিকজোড়কে মারলে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হত।
হট্টিটি
হট্টিটি পাখি টি-টি-টি ডাকের জন্য খুবই বিখ্যাত। এটিকে আমাদের দেশে তিতির পাখি নামে ডাকা হয়। ছোট্ট এই পাখি সাধারণত মাটিতেই বাস করে, মাটি থেকে পোকা মাকড় ধরে খেয়ে থাকে। রাশিয়া আর কাজাখাস্তানে এই পাখির বসবাস। শীতের সময় গরম জায়গার খোঁজে বেরিয়ে পড়ে। বাংলাদেশে, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, কিরগিজস্তান, আর্মেনিয়া, ইরান, ইরাক, সৌদি আরব, সিরিয়া, সুদান, তুরস্ক, ইসরায়েল, ওমান, ইরিত্রিয়ায় এই পাখিগুলো শীতের মৌসুমগুলো কাটিয়ে থাকে।
বালিহাঁস
বালি হাঁস ইউরোপ, মধ্য এশিয়া এবং উত্তর-পশ্চিম চীনে বাস করে। শীতের শুরুতেই এই পাখিগুলো আমাদের দেশে ঘুরতে আসে। দিনদিন ইউরোপে বালি হাঁসের সংখ্যা অনেক কমে যাচ্ছে। গিরিয়া হাঁস যেমন দলবেঁধে থাকতে পছন্দ করে, বালি হাঁস কিন্তু ঠিক তার উল্টো। বালি হাঁস একা থাকা পছন্দ করে, অথবা জোড়ায় জোড়ায় থাকে। পরিভ্রমনে বের হওয়া ছাড়া বালি হাঁস সাধারণত বড় কোনও দল বাঁধে না।
গিরিয়া
গিরিয়া হাঁসের মূল নিবাস হলো ইউরোপ এবং এশিয়ার পশ্চিমের দেশগুলোতে। এরা বেশিদিন এক জায়গায় থাকতে চায় না। এই পাখিগুলো ভ্রমণ করতে বেশি পছন্দ করে। মাঝে মাঝে এই পাখিগুলো উড়তে উড়তে অস্ট্রেলিয়াতে চলে যায়। এই পাখিগুলো একসঙ্গে দলগতভাবে উড়তে পছন্দ করে। পুরুষ পাখিগুলো অনেক চঞ্চল প্রকৃতির হয়।
আমাদের দেশে অতিথি হয়ে আসা এসব প্রাণীদের অনেকে হত্যা করে খাওয়ার জন্য। প্রাণী বিশারদরা বলছেন, এসব পাখি প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় অনেক ভূমিকা রাখে। তাই এসব পরিযায়ী পাখির আবাসস্থলকে নিরাপদ রাখা ও পাখিদের বিচরণস্থল সংরক্ষণ করার দায়িত্ব আমাদের।