কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্স থেকে এবার পাওয়া গেছে ২৮ বস্তা টাকা। পাঁচ ঘণ্টা ধরে ৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা গণনা করা হয়। তবে গণনার কাজ চলমান। শুধু এবারই নয়, প্রতি তিন মাস পর পর পাগলা মসজিদের দান বাক্স খোলা হয়। প্রতিবারই সেখান থেকে মেলে কোটি কোটি টাকা।
জেলা শহরের নরসুন্দা নদীতীরের ঐতিহাসিক মসজিদটিতে লোহার আটটি দানসিন্দুক আছে। সেখানে প্রতিনিয়ত মানুষ টাকা, মূল্যবান মুদ্রাসহ অনেক কিছু দান করেন। সেই টাকা দিয়ে পাগলা মসজিদ ইসলামিক কমপ্লেক্স তৈরির প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও মসজিদ কমিটির সদস্যরা। ১১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন ইসলামিক কমপ্লেক্স ও মসজিদ নির্মাণের প্রকল্পের কাজ চলমান। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মানুষ কেন, কী উদ্দেশ্যে এত টাকা দান করেন মসজিদের দানবাক্সে?
কেন এত দান?
দান অনেকের সহজাত অভ্যাস হলেও, টাকা বা সম্পদ দান করার ক্ষেত্রে একেক মানুষ অগ্রাধিকার দেন একেক বিষয়ে। বিভিন্ন জরিপে দেখা যায়, যেখানে দান করলে প্রভাব পড়বে সবচেয়ে বেশি, মানুষ আকৃষ্ট হন সেখানেই। গ্রহীতা কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা পরিবার হলে, দান করার হার বেড়ে যায় বহুগুণ। কারণ, এসব ক্ষেত্রে কেউ না কেউ যে উপকৃত হচ্ছেন, তা প্রত্যক্ষ করা যায় সরাসরি।
অন্যদিকে, মানত হলো নিজের ওপর কোনো ভালো কাজ আবশ্যক করে নেওয়া। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে মানত করা যাবে না। অন্যের নামে মানত করলে শিরক হবে। কোনো বৈধ বস্তু অর্জনের আশায় মানত করা জায়েজ। ইসলাম মানতকে বৈধ বললেও তাকে নিরুৎসাহ করেছে। মানত শুদ্ধ হওয়ার জন্য অপরিহার্য শর্ত হলো, এটা একমাত্র আল্লাহর নামে হতে হবে।
এসম্পর্কে সূরা বাকারার ২৭০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আর যেকোনো বস্তু তোমরা ব্যয় কর না কেন, অথবা যেকোনো মানত তোমরা গ্রহণ করো না কেন, আল্লাহ নিশ্চয়ই তা অবগত হন। আর অত্যাচারীদের কোনো সাহায্যকারী নেই।’
আবার বুখারীর ৬৭০০ নম্বর হাদিসে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্য করার মানত করে সে যেন তাঁর আনুগত্য করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর অবাধ্যতা করার মানত করে সে যেন তাঁর অবাধ্যতা না করে।’
তবে ইসলামী গবেষকরা বেশ কিছু শর্তারোপ করেন। যেমন- এমন নেক কাজের মানত করা- যে কাজ ফরজ কিংবা ওয়াজিব হওয়ার নজির শরিয়তে আছে। এ ছাড়া বান্দার সাধ্যের ভেতর হওয়া, নিজের মালিকানাধীন হওয়া, তা পাপের কারণ বা উপলক্ষ না হওয়া ইত্যাদি।
মনস্তাত্বিক জায়গা থেকে দেখলে দান করার ভিন্ন কারণ খুজে পাওয়া যায়। বহু দিন ধরে মানুষের মধ্যে প্রচলিত আছে অসুস্থ হলে বা কোনও সমস্যায় পড়লে মানত করলে সেই সমস্যা থেকে মুক্ত মেলে। তবে সব জাযগায় মানত করা হয় না। সেসব জায়গায় দান করলে মনের চাওয়া অবশ্যই পূরণ হবে সেখানেই দান করে মানুষ। তবে এ ধরনের দানের কোনও প্রামাণিক বাধ্যবাধকতা নেই।
তবে দানের সামাজিক কিছু কারণও আছে। সাধারণ, সমাজের অবস্থাপন্নরাই অপেক্ষাকৃত অসহায় তা দরিদ্রদের দান করে থাকেন। মসজিদে দান করলে সমাজের সবার কাজে লাগবে বলেই মনে করেন তারা। তাছাড়া যাদের অর্থ বেশি আছে তারাই দানের ব্যাপারে সমাজে এগিয়ে থাকেন।
এছাড়া সামাজিকভাবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মসজিদের তত্ত্বাবধান করে থাকেন স্বচ্ছল ও বিত্তশালীরা। অভাবীরা এতে অংশগ্রহণ করতে চান মাত্র। সেজন্য এমন দানবাক্স সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়। যেখানে যারা দান করছেন তারা নিজেদের আড়ালে রাখতে পারেন। সেই সঙ্গে কত দান করছেন সেটাও গোপন রাখতে পারেন।
অবশ্য কেউ কেউ আছেন যারা কোনও না কোনও কারণে দান করতে চান। আর তারা চান সেই টাকা ভালো কাজে ব্যয় হোক। সেজন্যও মসজিদ বা ধর্মীয় উপাসনালয়ে দান করে। তাদের অনেকেই দান কৃত অর্থ অন্যকে দেখাতে চান না বলেও এরকম বাক্সে ফেলে।