প্রশান্ত মহাসাগরে আজ থেকে প্রায় এক যুগ আগে ২০১৩ সালে ভেসে উঠেছিল বিশালাকার এক পুরুষ তিমি। তার লক্ষ্য ছিল একজন সঙ্গী খুঁজে পাওয়া। সেজন্য সে অপার সাগর তল্লাশি করতে বেরিয়ে পড়ে।
একে একে কেটে যায় নয়টি বছর। সেই রূপকথার মতো ‘সাত সমুদ্র তের নদী’ পারি দিয়ে তিমিটি শেষ অবধি ২০২২ সালে এসে পৌঁছে ভারত মহাসাগরে। তার দেখা মেলে আফ্রিকার জাঞ্জিবার এলাকায় দক্ষিণ-পশ্চিম ভারত মহাসাগরের বুকে।
তিমি বিশেষজ্ঞরা জানান, ২০১৩ সালে কলম্বিয়ার উপকূলে প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে ভেসে ওঠা হাম্পব্যাক প্রজাতির বিশাল সেই পুরুষ তিমিকে ক্যামেরাবন্দি করা হয়েছিল। সেই তিমিই প্রশান্ত ও আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে পৌঁছে যায় ভারত মহাসাগরে।
গবেষকরা বলছেন, নয় বছর হাম্পব্যাক প্রজাতির বিশাল সেই পুরুষ তিমি পারি দিয়েছে মোট ৮ হাজার ১০৫ মাইল। অর্থাৎ ১৩ হাজার ৪৬ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছে তিমিটি শুধু সঙ্গীর খোঁজ পেতে।
অস্ট্রেলিয়ার সাদার্ন ক্রস ইউনিভার্সিটির গবেষক টেড চেসম্যান বলেন, “মনের মতো সঙ্গী খুঁজে পেতেই হাম্পব্যাক প্রজাতির তিমি এত পথ সাঁতার কেটে পার হয়ে যায়।”
টেড চেসম্যান জানান, সাঁতার কাটার দীর্ঘ পথে একাধিক স্ত্রী তিমির সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হলেও পুরুষ তিমির একমাত্র লক্ষ্য থাকে মনের মতো জীবনসঙ্গী খুঁজে পাওয়া। যে কারণে এক মহাসাগর থেকে আরেক মহাসাগরে, হাজার হাজার কিলোমিটার সাঁতার কেটে অতিক্রম করে।
শুধু যে পুরুষ তিমির ক্ষেত্রেই এমনটা ঘটে, তা নয়, নারী তিমিরাও এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। তিমি বিশেষজ্ঞরা ১৯৯৯ থেকে ২০০১ সালের মধ্যবর্তী সময়ে হাম্পব্যাক প্রজাতির এক স্ত্রী তিমির ক্ষেত্রে এমন নজির পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।
গবেষণাপত্র থেকে জানা যায়, সেই স্ত্রী তিমিটি ব্রাজিল থেকে মাদাগাস্কার পর্যন্ত সাঁতার কাটে। আর এতে সে পারি দেয় ৬ হাজার ১০০ মাইল বা ৯ হাজার ৮১৭ কিলোমিটার সমুদ্রপথ। পুরুষ তিমির খোঁজেই এমন চ্যালেঞ্জ নেয় স্ত্রী তিমি।
তবে তিমি বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, শুধু বংশবিস্তার করাই বিশালাকার এসব তিমির একমাত্র উদ্দেশ্য না-ও হতে পারে। বাসস্থান বদলের জন্যও তারা দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারে।
গবেষণার তথ্য বলছে, প্রতি বছর তিমিরা আগের বাসস্থান ছেড়ে উত্তর অথবা দক্ষিণ দিকে অন্তত ৮ হাজার কিলোমিটার পথ সাঁতার কেটে যেতে পারে। যদিও মহাসাগরগুলোতে পূর্ব অথবা পশ্চিম দিকে তিমিদের যাতায়াত তেমন লক্ষ করা যায় না।
গবেষকরা বলছেন, পরিবেশগত পরিবর্তনের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও খাদ্যের প্রাচুর্যের মতো বিভিন্ন কারণেই তিমিরা মহাসাগর পাড়ি দিতে পারে।