• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সোশ্যাল মিডিয়ার আসক্তি যে বিপদ ডেকে আনছে


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৪, ০৩:২২ পিএম
সোশ্যাল মিডিয়ার আসক্তি যে বিপদ ডেকে আনছে
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অতিরিক্ত স্ক্রলিংয়ের অভ্যাস উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা বাড়ায়। ছবি : সংগৃহীত

পুরো দুনিয়াকে হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া। চাইলেই দুনিয়ার যেকোনো তথ্য এখন সহজেই খুঁজে পাওয়া সম্ভব। কারণ সোশ্যাল মিডিয়া, যেখানে রয়েছে বিশ্বজুড়ে সব তথ্যসম্ভার। প্রযুক্তির উন্নয়নে মোবাইলের মাধ্যমে স্ক্রলিং করে সোশ্যাল মিডিয়ার সময় কাটাচ্ছে সবাই। প্রয়োজনে কিংবা অপ্রয়োজনে রীতিমতো অভ্যাস হয়ে গেছে এটি। বলা যায়, দিনের অধিকাংশ সময় এখন সোশ্যাল মিডিয়াতেই কেটে যাচ্ছে। তথ্য, জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য় এই অভ্যাস নেতিবাচক নয়। তবে এটি যখন মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যায় তখনই তা হিতের বিপরীত হয়। মানসিক, সামাজিক দিক থেকে এটি নেতিবাচক হয়ে ওঠে। মানুষের মনকে নিয়ন্ত্রণ করা, সামাজিক দূরত্ব বাড়িয়ে দেওয়া এমন কিছু নেতিবাচক প্রভাব পড়ে মানবজীবনে।

সম্প্রতি বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে সোশ্যাল মিডিয়ায় মাত্রাতিরিক্ত সময় কাটানোর নেতিবাচক প্রভাবের কথা। গবেষকদের মতে, মোবাইলে অতিরিক্ত সময় কাটানো উদ্বেগজনকভাবেই প্রভাব ফেলছে  মানুষের জীবনে। সাধারণ কিংবা পেশাগত যোগাযোগ যেকোনো কারণেই এখন সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার বেড়েছে। সেই সঙ্গে অনেকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিনা কারণেই সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রলিং করতে থাকেন। যেমন জনপ্রিয় মাধ্যম ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটকে এখন অনেকেরই অ্যাকাউন্ট রয়েছে। সারা দিন নিজের প্রোফাইল স্ক্রলিং করা রীতিমতো অভ্যাস অনেকের। শুধুমাত্র  অবসর সময় কাটানোর জন্যই অপ্রয়োজনে অনেকে প্রোফাইল স্ক্রলিং করে বেড়ান। এই অভ্যাস নেতিবাচক তখনই হয়, যখন এটি মানসিকভাবে চাপ বাড়ায়। 

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক চিকিৎসাবিষয়ক জার্নালের প্রকাশক বাইশিডেং পাবলিশিং গ্রুপের  একটি গবেষণা প্রকাশ পায়। যেখানে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগামাধ্যমে অতিরিক্ত স্ক্রলিংয়ের অন্যতম কারণ হতে পারে ফিয়ার অব মিসিং আউট (ফোমো) বা হারিয়ে ফেলার ভয়।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অতিরিক্ত স্ক্রলিংয়ের অভ্যাস উদ্বেগ, বিষণ্ণতা বাড়ায়। অন্যদের সাফল্য, আনন্দ, উচ্ছ্বাসের ছবি বা খবর পেয়ে অনেকে নিজের অবস্থান নিয়ে বিষণ্ণ হয়ে পড়েন। যা মানসিক উদ্বেগ বাড়ায়।

শুধু তাই নয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অতিরিক্ত সময় কাটানো বা স্ক্রলিংয়ে জন্য বেড়ে যায় অন্যের সঙ্গে নিজের তুলনা করা। মানুষ তুলনার ফাঁদে পড়ে যায়। এমন তথ্য উঠে এসেছে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক গবেষণাপত্র প্রকাশনা সংস্থা আটলান্টিস প্রেসের প্রকাশিত এক গবেষণায়।  যেখানে বলা হয়, অনলাইনে যারা ‘সফল’ও ‘আকর্ষণীয়’তাদের সঙ্গে তুলনা করে নিজের আত্মসম্মানকে অনেকেই নষ্ট করছেন। এতে অন্যের প্রতি ঈর্ষা বেড়ে যেতে পারে। জীবনকে নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হতে পারে। যা অবশ্যই নেতিবাচক।

সোশ্যাল মিডিয়ায় অতিরিক্ত স্ক্রলিংয়ে আরও একটি নেতিবাচক দিক হচ্ছে ওয়েবসাইট বা অ্যাপগুলোতে আসক্তি। ওয়েবসাইট কিংবা অ্যাপগুলো এমনভাবে সাজানো হয় যা ঘুরে আসতে বাধ্য করে। অপ্রয়োজনে কেনাকাটাও বেড়ে যায়। আর্থিক দিকেও অমিতব্যায়ী হয়ে উঠে মানুষ।

এছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়ায় অতিরিক্ত স্ক্রলিংয়ের ফলে মানবিক ও সামাজিক সম্পর্কও কমে যায়। সমাজ থেকে মানুষ নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। প্রিয়জনদের সঙ্গে সরাসরি দেখা হওয়া কমে যায়। একাকিত্ব ভর করে। ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। এতে মানুষ নিজের আনন্দ ও পরিপূর্ণতা হারিয়ে ফেলে।

সোশ্যাল মিডিয়ার আসক্তি কমানোর উপায়

ডিজিটাল যুগে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারকে এড়িয়ে চলা অসম্ভব। তবে এই ব্যবহারে সামঞ্জস্যতা আনা কঠিন কিছু নয়। নিজেকে সোশ্যাল মিডিয়ার কন্ট্রোলে না দিয়ে বরং এর ব্যবহারকে কন্ট্রোল করতে পারেন। মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে হবে নিজেকে। মনে রাখবেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের ভালোদিকগুলোই মানুষ তুলে ধরে। সেটা ছবি কিংবা খবরের মাধ্যমেই হোক। তাই অন্যের কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনা করে নিজের আত্মসম্মানকে ছোট করা ঠিক নয়। জেনে রাখুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যা দেখা যায় তা সুনির্বাচিত কিছু অংশমাত্র। তাই সম্ভব হলে প্রথমেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকে সীমিত করুন। যে বিষয়গুলো আনন্দ দেয় সেগুলো উপভোগ করুন। বৈচিত্র্যময় কনটেন্টে নজর রাখতে পারেন। অহেতুক সময় না কাটিয়ে অনলাইনে কোনও কাজের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেত পারেন। আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে পারেন। যোগাযোগের মাধ্যম শুধু অনলাইনের সীমাবদ্ধ না রেখে সশরীরে উপভোগ করুন।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

Link copied!