শবে কদর শব্দটি আরবি ভাষার দুটি শব্দ "শব" অর্থাৎ রাত এবং "কদর" অর্থাৎ মহিমা, মর্যাদা বা তাকদির থেকে এসেছে। ইসলামে শবে কদরকে অত্যন্ত পবিত্র ও ফজিলতপূর্ণ রাত হিসেবে গণ্য করা হয়। এটি রমজান মাসের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোর মধ্যে একটি। বিশেষত ২১, ২৩, ২৫, ২৭ বা ২৯ তারিখে হয়ে থাকে। তবে অনেক ২৭ রমজানেই শবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে বলে এই রাতেই শবে কদরের ইবাদত করা হয়।
মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে এই রাতকে অত্যন্ত মহিমান্বিত হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন যে, "এই রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম" (সূরা কদর, আয়াত ৩)। অর্থাৎ, এই রাতে করা ইবাদত ৮৩ বছর ৪ মাসের ইবাদতের সমতুল্য।
শবে কদরের গুরুত্ব কুরআন ও হাদিসের আলোকে
কুরআনে শবে কদরের মর্যাদা
কুরআনের ৯৭ নম্বর সূরা, সূরা কদরে এই রাত সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে: “আমরা এই কুরআন অবতীর্ণ করেছি শবে কদরের রাতে। তুমি কি জানো, শবে কদর কী? শবে কদর হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এই রাতে ফেরেশতারা এবং রুহ (জিবরাইল আ.) তাদের রবের অনুমতিক্রমে সকল বিষয়ে অবতরণ করেন। এই রাত ফজরের সময় পর্যন্ত শান্তি ও বরকতে পূর্ণ থাকে।
এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, শবে কদর রাতটি অত্যন্ত বরকতময় এবং আল্লাহ এ রাতে অসংখ্য রহমত ও মাগফিরাত বর্ষণ করেন।
হাদিসে শবে কদরের গুরুত্ব
রাসূলুল্লাহ (সা: ) শবে কদরের বিশেষ গুরুত্ব সম্পর্কে অনেক হাদিসে আলোচনা করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন— "যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় শবে কদরে নামাজ আদায় করবে, তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।" (বুখারি, মুসলিম)
রমজানের শেষ দশকে শবে কদর খোঁজা নিয়ে আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা: ) বলেছেন— "তোমরা শবে কদরকে রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোর মধ্যে তালাশ করো।" (বুখারি)
হাদিসে এসেছে, শবে কদরের রাতে অসংখ্য ফেরেশতা পৃথিবীতে অবতরণ করেন এবং তারা আল্লাহর রহমত, বরকত ও ক্ষমা নিয়ে আসেন। (আহমদ)
শবে কদরের ফজিলত
শবে কদর রাতের ফজিলত অসীম। এই রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম ইবাদত। শবে কদরে করা ইবাদত ৮৩ বছর ৪ মাসের ইবাদতের সমান সওয়াব লাভ করায় এটি জীবনে একবার পেলেও এক ব্যক্তির জন্য অনেক বড় নিয়ামত।
গুনাহ মাফের সুযোগ পাওয়া যায়। এ রাতে মহান আল্লাহ বান্দাদের তওবা কবুল করেন এবং তাদের গুনাহ মাফ করে দেন। যারা এই রাতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান, তারা নিশ্চয়ই ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে।
কিছু ইসলামিক স্কলারদের মতে, এই রাতে আগামী বছরের জন্য বান্দার রিজিক, মৃত্যু, জীবন ও অন্যান্য তাকদির নির্ধারণ করা হয়।
এ রাতে অসংখ্য ফেরেশতাগণ দুনিয়ায় অবতরণ করেন এবং আল্লাহর রহমত নিয়ে আসেন।
শবে কদরের রাতে করণীয় ইবাদত
শবে কদরের রাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে আমল করা উত্তম। এ রাতে বেশি বেশি নফল নামাজ পড়তে হবে। ২ রাকাত, ৪ রাকাত, ৬ রাকাত বা ১২ রাকাত পড়া যায়। এ রাতে কুরআন তিলাওয়াত করা সবচেয়ে উত্তম আমল। এ রাতে আল্লাহর কাছে নিজের গুনাহের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। রাসূল (সা: ) এর শেখানো এই দোয়াটি এ রাতে পড়তে হবে—"আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া ফা`ফু আন্নি।" অর্থ: "হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, তুমি ক্ষমা করতে ভালোবাসো, আমাকে ক্ষমা করো।"
এই রাতে দরুদ শরীফ পড়তে হবে। রাসূলুল্লাহ (সা: ) এর প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা উচিত। নিজের জন্য, পরিবার ও সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করা উচিত।