• ঢাকা
  • বুধবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

সোনার খনিতে সোনার বিনিময়ে যৌনতা


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৬, ২০২৪, ০৫:২৩ পিএম
সোনার খনিতে সোনার বিনিময়ে যৌনতা
ব্রাজিলের অবৈধ সোনার খনি। ছবি: সংগৃহীত

নাতালিয়া কাভালকানতে ২৪ বছর বয়স থেকে যৌনকর্মীর কাজ করতেন ব্রাজিলের একটি অবৈধ সোনার খনিতে। তিনি বলেন, ‘আমি বলছি না যে এই শহরের সব নারী এ কাজ করেন। তবে তাদের একটি বড় অংশ যৌনকর্মী। তাই এ কাজ এখানে অনেকটাই স্বাভাবিক। আমরা এটাকে তেমন গুরুত্ব দিই না।

গত ১০ বছরে ব্রাজিলে অবৈধ স্বর্ণখনির আয়তন দ্বিগুণ হয়ে ২০২৩ সালে ২ লাখ ২০ হাজার হেক্টরে পৌঁছেছে, যা বৃহত্তর লন্ডনের চেয়েও বড় এলাকা। এসব খনিতে কত শ্রমিক কাজ করেন তা কেউ জানেন না। ব্রাজিল সরকার বলেছে, এ সংখ্যা ৮০ হাজার থেকে ৮ লাখ হবে।

আর ব্রাজিলের এসব সোনার খনিতে সোনার বদলে বিক্রি হচ্ছে যৌনতা। নারীরা বিভিন্ন প্রয়োজনে সেখানে গিয়ে শরীর বিক্রি করেন। তারা জানেন, খনিতে যাওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সেখানে নারীদের মারাত্মকভাবে অসম্মানিত করা হয়। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তারপরও প্রয়োজনের তাগিদে সেখানকার অধিকাংশ নারীরা হয়ে উঠে যৌনকর্মী।

ডায়ান লেইত কখনো যৌনকর্মী হতে চাননি। তার বয়স যখন ১৭ তখন তার স্বামী মারা যান। স্বামীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ব্যয় বহন করার মতো সামর্থ্য তার ছিল না। তখন তার এক বন্ধুর পরামর্শে অর্থ আয় করতে আমাজনের গভীরে সোনার খনি এলাকায় যান। যৌনকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৬ বছর ধরে যাচ্ছেন সেখানে। কখনো রান্নার কাজ, কখনো ধোপার কাজ, কখনো মদের দোকানের কর্মী, কখনো–বা যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। এখন তার পরিবারের সাত সদস্য নিজের আয়ের ওপর নির্ভরশীল।

খনিতে পরিবেশগত সমস্যা যেমন আছে তেমনি মানবিক ক্ষতিও আছে। জাতিসংঘ বলেছে, খনি ঘিরে সহিংসতা, যৌন নিপীড়ন, মানব পাচারসহ নানা নৃশংস ঘটনা ঘটে।

ইতাইতুবার এক সোনার খনিতে গত বছর ২৬ বছরের তরুণী রাইএলে সান্তোসের লাশ  তার ঘরের ভেতর থেকে উদ্ধার হয়।

রাইএলের বড় বোন রাইলানে বলেন, এক ব্যক্তি অর্থের বিনিময়ে তার বোনের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতে চেয়েছিলেন। রাইএলে রাজি না হওয়ায় ওই ব্যক্তি রাইএলেকে খুঁজে পিটিয়ে মেরে ফেলেন। তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিদিন অনেক নারী মারা যান, অনেক নারী। আমার জন্ম এখানে, এখানেই বড় হয়েছি এবং এখন এই খনিতে বসবাস করতে ভয় পাই।’

এই অবৈধ সোনার খনি থেকে ইতাইতুবার অনেক নারী যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করেন। সেখান থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে পরে নিজের ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু খুব সহজে তারা এমন জীবন পাননি। এর আগে নানা রকম ঝুঁকি মাথায় নিয়ে এসব নারীরা খনির শ্রমিকদের ভয়ংকর ও আইনকানুনবিহীন গ্রামগুলোতে যেতেন।

রাইএলেকে হত্যার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু গ্রেপ্তার ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করায় বিচার কার্য শেষ হয় নি।

ব্রাজিল সরকার অবৈধ খনি বন্ধ করতে চাচ্ছে অনেক আগে থেকেই। কিন্তু মূল্যবান এ ধাতুর মূল্য দিন দিন বাড়ছে, যার কারণে ব্রাজিলের মানুষ নিজের ভাগ্য যাচাই করতে সোনার সন্ধানে খনিতে যাচ্ছেন।

মূল্যবান ধাতুর কেনাবেচার সঙ্গে যুক্ত এমন একজন বলেন, আমাজনের এসব অবৈধ খনি থেকে পাওয়া সোনা সাধারণত বৈধ কোনো খনির নামে বিদেশে রপ্তানি করা হয়। গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ‘ইনস্টিটুটো এসকোলহাস’ বলেছে, ইউরোপে রপ্তানি হওয়া ৯০ শতাংশের বেশি সোনা অবৈধ খনি থেকে আসে।

Link copied!