পূজায় সিঁদূর খেলা বাংলা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অঙ্গ। বহুদিন ধরে রক্ষিত হয়ে রয়েছে এই রীতি। শারদীয় দুর্গাপূজা সনাতন ধর্মাম্বলীর সবচেয়ে বড় উৎসব। দুর্গাপূজার শেষ দিনে অর্থাত্ বিজয়া দশমীতে, সিঁদূর খেলা একটি বিশেষ রীতি হিসেবে পালিত হয়। ওই দিন হিন্দু বিবাহিত নারীরা দেবী দুর্গার মূর্তির পায়ে সিঁদূর পরিয়ে দেন। এরপর একে অপরকে সিঁদূর পরিয়ে পূর্ণতা, সৌভাগ্য এবং মঙ্গল কামনা করেন। এই সিঁদূর খেলার রীতি এখন শুধুই আচারিক নয়, বরং এটি একটি ফ্যাশন স্টেটমেন্ট হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছে।
সিঁদূর খেলা এবং সিঁদূরের ফ্যাশন এখন বাঙালির ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার মিশ্রণে একটি অনন্য সংস্কৃতি। বিজয়া দশমীর এই বিশেষ দিনে নারীরা যেমন দেবী দুর্গার প্রতি তাদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন, তেমনি নিজেদের সাজে ফ্যাশনের ছোঁয়া এনে উদযাপনটিকে আরও আনন্দমুখর করে তোলেন।
সিঁদূরের ফ্যাশন
সিঁদূর খেলায় পোশাক মানেই শুধু সাদা শাড়ি আর লাল পাড়। এখন এই ধারণা পাল্টে গেছে। নারীরা সিঁদূর খেলার সময় তাদের পোশাকের ধরনেও বেশ বৈচিত্র্য এনেছে। পূজার দিনগুলোতে সবার মাঝে থাকে উৎসবের আমেজ। আর তারই অংশ হিসেবে সিঁদূরের ফ্যাশনকে ঘিরেও থাকে নতুন নতুন ধারা। লাল পাড় সাদা শাড়ি ধ্রুপদী হলেও, এখন বিভিন্ন রঙের শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, লেহেঙ্গা কিংবা ফিউশন পোশাকেও সিঁদূরের সঙ্গে ফ্যাশন মেলানো হয়।
পোশাকের ভিন্নতা
অনেকেই বিজয়া দশমীতে আধুনিকতা এবং ঐতিহ্যের মিশেলে নতুন স্টাইলের পোশাক বেছে নেন। সাদা শাড়ির বদলে রঙিন বেনারসি, কাতান, সিল্ক বা তসর শাড়িতে নিজেদের সাজিয়ে সিঁদূরের সঙ্গে ম্যাচিং করেন। আবার সিঁদূরের ঐতিহ্যবাহী লাল রঙের সঙ্গে লাল বা সোনালি রঙের বিভিন্ন পোশাক মিলিয়ে পরেন।
গহনার ফ্যাশন
সিঁদূর খেলার সময় নারীরা তাদের সাজে ভারী গহনা পরতে পছন্দ করেন। ধাতব গয়না যেমন সোনার ঝুমকা, হার, বালা, শাঁখা-পলা এবং বাঙালির ঐতিহ্যবাহী সোনার গয়নাও এসময় বেশ জনপ্রিয়। তবে শুধু সোনা নয়, রূপার গয়না বা কুন্দন কাজ করা গয়নাও এখন সিঁদূর খেলার সাজে যোগ হয়েছে।
মেকআপ এবং হেয়ারস্টাইল
সিঁদূর খেলার সময় মেকআপেও থাকে লাল রঙের প্রাধান্য। লাল লিপস্টিক, হালকা গোলাপি বা লাল রঙের ব্লাশ এবং চোখে স্মোকি বা লালাভ শেডের আইশ্যাডো—এগুলো মেকআপে আনা হয়। হেয়ারস্টাইলেও থাকে নানা ভ্যারিয়েশন। খোঁপা করে তাতে ফুলের সাজ অথবা খোলা চুলেও ফুলের মালা দিয়ে সাজানোর ধারা এখন বেশ জনপ্রিয়।
সিঁদূর এবং নারীর সৌন্দর্য
সিঁদূর বাঙালি নারীর সৌন্দর্যের প্রতীক। বিবাহিত নারীর সিঁথিতে সিঁদূর পরানো শুভ লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়। যা তার স্বামীর দীর্ঘায়ু এবং পরিবারের সুখ ও সমৃদ্ধি কামনা করে। পূজার সময় সিঁদূরের এই বিশেষ অর্থটিকে আরো বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। এ কারণে সিঁদূর খেলার রীতিটি উৎসবমুখর হয়ে ওঠে।
সামাজিক মেলবন্ধন
সিঁদূর খেলা কেবলমাত্র নারীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি সামাজিক একতার প্রতীক হিসেবেও দেখা যায়। একইসঙ্গে পূজার শেষ দিনে আনন্দ ভাগাভাগির মাধ্যমে সবাই মিলে এই উৎসবকে এক নতুন রূপ দেন। এটি শুধু আধ্যাত্মিক নয়, সামাজিক মেলবন্ধনও তৈরি করে। বিভিন্ন বয়সের এবং পেশার নারীরা একসঙ্গে সিঁদূরের লাল রঙে নিজেদের রাঙিয়ে তোলেন।