শবে কদর ইসলাম ধর্মের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বরকতময় একটি রাত। এটি রমজান মাসের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোর মধ্যে একটি। যা ২১, ২৩, ২৫, ২৭ বা ২৯ তারিখে হতে পারে। তবে অনেক আলেমের মতে, ২৭ রমজানেই শবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এই রাতকে আল্লাহ কুরআনে "হাজার মাসের চেয়েও উত্তম" বলে উল্লেখ করেছেন (সূরা কদর, আয়াত ৩)। তাই এ রাতে বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগি করা মুস্তাহাব।
শবে কদরের রাতে আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভে ইবাদত করা হয়। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নফল নামাজ আদায় করা।
শবে কদরের নামাজের নিয়ম
শবে কদরে নির্দিষ্ট কোনো নামাজ নেই। তবে নফল নামাজ পড়া উত্তম। আপনি চাইলে ২ রাকাত, ৪ রাকাত, ৬ রাকাত, ৮ রাকাত বা ১২ রাকাত পর্যন্ত নফল নামাজ পড়তে পারেন।
নামাজ পড়ার নিয়ত
প্রথমে মনে মনে নিয়ত করবেন: "আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নফল নামাজ আদায় করছি।"
তারপর নামাজ শুরু করবেন। প্রতি দুই রাকাত নামাজের নিয়ম: প্রথম রাকাতে: সানা (সুবহানাকা আল্লাহুম্মা...), সূরা ফাতিহা (আলহামদুলিল্লাহ...), যেকোনো সূরা (সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক বা সূরা নাস পড়া উত্তম)। এরপর রুকু, সেজদা ও অন্যান্য ফরজ নামাজের মতো আদায় করবেন।
দ্বিতীয় রাকাতে, সূরা ফাতিহাসহ যেকোনো সূরা রুকু ও সেজদা করে শেষ বৈঠকে বসে আত্তাহিয়্যাতু, দরুদ শরীফ ও দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করবেন।
বিশেষ আমল ও দোয়া
শবে কদরের রাতে কুরআন তিলাওয়াত, তাসবিহ-তাহলিল, ইস্তেগফার এবং দোয়া করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। বেশি বেশি তওবা ও ইস্তেগফার করা- "আস্তাগফিরুল্লাহ রাব্বি মিন কুল্লি জম্বিন ওয়াতুবু ইলাইহি।". রাসূল (সা:) এর শেখানো দোয়া পড়বেন, "আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া ফা`ফু আন্নি।" অর্থ: "হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, তুমি ক্ষমা করতে ভালোবাসো, আমাকে ক্ষমা করো।"
বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করবেন। শবে কদরের রাতে কুরআন তিলাওয়াত করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। বিশেষ করে, সূরা কদর, সূরা ইয়াসিন, সূরা রহমান ও সূরা মুলক পড়তে পারেন। এই রাতে নবীজি -এর প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা উত্তম। যেমন: "আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন ওয়ালা আলে মুহাম্মাদ।"
এছাড়াও এই রাতে আল্লাহর কাছে সব ধরনের কল্যাণ, মাগফিরাত ও জান্নাত লাভের জন্য দোয়া করা উচিত।
শবে কদরের ফজিলত
এই রাতের ইবাদত হাজার মাসের (৮৩ বছর ৪ মাস) ইবাদতের সমান। ফেরেশতারা এই রাতে পৃথিবীতে নেমে আসেন এবং শান্তির বার্তা নিয়ে আসেন। এই রাতে আল্লাহ তাআলা বান্দাদের গুনাহ ক্ষমা করেন এবং রহমত দান করেন।
শবে কদর মুসলিম উম্মাহর জন্য এক মহামূল্যবান সুযোগ। এই রাতে ইবাদত করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা এবং নিজের গুনাহ মাফের জন্য আমল করা আবশ্যক। শবে কদরের রাতে নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, দোয়া ও ইস্তেগফারে ব্যস্ত থাকা উচিত। যাতে আল্লাহর অফুরন্ত রহমত ও মাগফিরাত অর্জন করা যায়।