শখের তালিকায় জায়গা করে নেয় বই পড়া। অবসরে কী করতে পছন্দ করেন-অনেকেই এই প্রশ্নের জবাবে বলবে ‘বই পড়তেই ভালো লাগে’। বছরঘুরে বইমেলা এলেও সেখানে লোকারণ্য হয়ে উঠে। শখের বইগুলো কালেকশনে রাখতে আর অবসরে সেগুলোর সঙ্গে মেতে উঠতে অনেকেই পছন্দ করেন।
প্রজন্ম বদলায়। বই পড়ার আগ্রহ, রুচি, ধরণও বদলায়। আগের প্রজন্মে শখের বইগুলোকে যত্নে রেখে দেওয়া হতো। ঘরের পুরো দেয়ালজুড়ে কেউ কেউ বুকশেলফ বানিয়ে নিতেন। যেদিন যে বই পড়তে ইচ্ছে হবে, তা পড়াই শুরু করে দিতেন। নানা লেখক, তাদের লেখার ধরণের সঙ্গে পরিচিত হতেন। লেখকের ধ্যান ধারণার সঙ্গে মিশে যেতেন। সে যেন এক অন্যরকম অনুভূতি।
নতুন প্রজন্মের কাছে এসব অনুভূতি একদমই ভিন্ন। শিশুরা অনেক ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। নতুন বইয়ের পাতায় মিশে যেতে তাদের ইচ্ছে হয় না। বরং মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপের পর্দায় বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠেছে। ছোট বয়স থেকেই এমন অভ্যাস আয়ত্ত হয়ে যাচ্ছে অনেকের। তরুণরাও এই অভ্যাসে গা ভাসিয়েছে। প্রযুক্তির সঙ্গে বেড়ে ওঠা এই নতুন প্রজন্মের সদস্যরা বই পড়ার অভ্যাসকে নতুন করে আবিষ্কার করছে। তবে অক্ষর বইয়ের পাতায় থাকুক আর মোবাইলের স্ক্রিনে থাকুক, ব্যক্তিত্ব গঠন আর জ্ঞানের চর্চায় এর তুলনা হয় না।
যুগে যুগে পড়ার অভ্যাসেও ভাটা পড়েছে। ভিজ্যুয়ালের জগতে মনোযোগের স্থায়ীত্ব হারিয়ে যাচ্ছে। বইমেলায় ঘুরে বই কিনছেন অনেকে। তবে সেই বই যেন শুধু সেলফেই পড়ে থাকে। ঘরের শোভাবর্ধনের জন্য নানা বই কালেকশন করছেন। কিন্তু বই পড়ার মতো সময় বের করতেই পারছেন না।
নতুন প্রজন্মের কাছে বই পড়ার গুরুত্ব তুলে ধরার দায়িত্ব অভিভাবকদেও আছে। বই পড়ার আনন্দের সঙ্গে তাদের পরিচিত করতে হবে। নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে, বই পড়া মানে নতুন এক জগতের সঙ্গে পরিচয় হওয়া। নতুন চিন্তা, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, নতুন আবেগের সঙ্গে পরিচয় হওয়া। নিজের চিন্তাধারাকে বাড়িয়ে দেওয়া। শুধু জ্ঞান বাড়াতে নয়, মানসিক স্বাস্থ্যকেও ভালো রাখতেও বই পড়ার বিকল্প নেই। নিজের চিন্তাকে গুছিয়ে নিতে, নিজেকে সুশৃঙ্খল করতে, মানসিক চাপ কমাতে বই হতে পারে নিত্যদিনের সঙ্গী।