চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পেশ হতে যাচ্ছে। গোটা দেশ এখন বাজেট ঘোষণার অপেক্ষায়। প্রতিবছরের মতো এবারও জুন মাসেই সরকারের তরফ থেকে বাজেট ঘোষণা করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটের আয় ব্যয়ের যাচাই বাছাই শেষে পাশ হবে চূড়ান্ত বাজেট।
সাধারণত দেশের মানুষের কল্যাণে এবং দেশের উন্নতির জন্য় সামগ্রিক আয় ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য রেখেই বাজেট ঘোষণা হয়। চূড়ান্ত বাজেট অনুযায়ী দেশের অর্থনীতি চলবে আগামী একবছর। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার প্রতিফলন ঘটে এই বাজেটের মধ্য দিয়েই। বাজেটে কিছু জিনিসের দাম বাড়বে। আবার কমবে কিছু জিনিসের দাম। এরমধ্যে কিছু জিনিসের মূল্য আবার অপরিবর্তিতই থেকে যাবে।
চূড়ান্ত বাজেট পাশের পর ব্যক্তিজীবনেও বিরাট পরিবর্তন আসে। ব্যক্তির নিজস্ব আয়ের ওপরই নিজের ও পরিবারের স্বাভাবিক জীবনধারণ সম্পৃক্ত। সরকারি বাজেট যেভাবে সাজানো হবে তার প্রভাব পড়বে ব্যক্তিজীবনের আয় ব্যয়ের ওপরও। যার কারণেই সর্বস্তরের মানুষই অপেক্ষায় থাকেন জানতে, কেমন হবে এবারের চলতি অর্থবছরের বাজেট?
ঘোষিত বাজেট নিয়ে আলোচনা সমালোচনার কমতি থাকে না। চূড়ান্ত বাজেট নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই আপনার মধ্যেও। তবে সরকারি বাজেট যেমনই হোক নিজের আয় ব্যয়ের সঙ্গে তো সামঞ্জস্য করতেই হবে। তাই সময়ক্ষেপন না করে নিজের আয় ব্যয়ের সামঞ্জস্য রাখতে ‘ব্যক্তিগত বাজেট’ করে ফেলুন।
ভাবছেন, কীভাবে করবেন? বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, ব্যক্তির আয় যেমনই হোক না কেন, ব্যয় করতে হবে হিসাব করেই। তবেই সরকারি বিলের খরচ বেড়ে যাক কিংবা নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি হোক, সবকিছুই আয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হবে।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ছয় ধাপে নিজের ব্যক্তিগত বাজেট করে নেওয়া যায়। যা আয়ের অর্থের ঠিকঠাক ব্যবস্থাপনা করতে সক্ষম। চলুন জেনে নেই কীভাবে ব্যক্তিগত বাজেটে সামঞ্জস্য রাখবেন।
ব্যয়ের হিসাব রাখুন
বাজেটের প্রাথমিক রোড ম্যাপ তৈরি করতে প্রথমেই ব্যয়ের হিসাবটা খাতায় লিখে রাখুন। এতদিন হয়তো আয় করেছেন আর ব্যয় করেছেন। এর কোনো নির্দিষ্ট হিসাব নেই। তাই কোন মাসে কত টাকা বেঁচে গিয়েছিল কিংবা কোন মাসে আপনার অন্যের কাছে ঋণ খুঁজতে হয়েছে তা নিশ্চয়ই মনে নেই। খাতায় ব্যয়ের হিসাব লেখা হলে সহজেই তা মনে থাকবে। আর সে অনুযায়ী ভবিষ্যতের খরচের হিসাবটা করতে সুবিধে হবে। তাই প্রতিদিন কী খরচ হচ্ছে তা খাতায় লিখে রাখুন। মাস শেষে এই খাতা থেকেই সব তথ্য পেয়ে যাবেন।
আয়ের হিসাব করুন
যদি চাকরিজীবী হোন তবে কত টাকা বেতন পাচ্ছেন তা মাথায় রাখুন। আবার বেতনের অধিকাংশই কি বিভিন্ন খাতে কেটে নিচ্ছে অফিস? তবে মূল কত টাকা আয় করছেন তার হিসাবটা করুন। ব্যবসায়ীরাও হয়তো প্রতিমাসেই নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আয় করেন না। মাসে অন্তত আয়ের খাতায় কত টাকা থাকছে তা খেয়াল করুন। আয়ের ওপরই নির্ভর করে তৈরি করবেন ব্যক্তিগত বাজেটের ছক। বছর শেষে এককালীন বড় কোনো খরচ থাকলে তা প্রতিমাসেই কিছু অর্থ আলাদা করে রাখতে পারেন। এতে চাপ পড়বে না। আবার ঋণও বাড়বে না।
সঞ্চয় করুন
ব্যয়ের হিসাব খাতায় লিখে রাখছেন তো? এবার মাস শেষে কত টাকা বাঁচলো তার হিসাবটাও রাখুন। যে টাকা বাঁচলো তা সঞ্চয়ে যোগ করুন। আর এই সঞ্চয় বরাদ্দ রাখবেন ব্যয়ের খাতায়। সঞ্চয়ের অর্থ থেকে খরচ করার চিন্তাও করবেন না। বরং বড় কোনো প্রয়োজনে এই সঞ্চয়ের টাকাই আপনার ভরসা হবে।
বাড়তি খরচ
আয়ের টাকা কীভাবে খরচ করবেন তার তালিকা করুন। তিনটি তালিকা রাখতে পারেন। দৈনিক, সাপ্তাহিক এবং মাসিক খরচ। প্রতিদিনের খরচকে দৈনিকের তালিকায় ফেলুন। যে খরচ সপ্তাহে একবারই হচ্ছে তা সাপ্তাহিক খরচে রাখুন। আর মাসে একবারই বড় কোনো খরচ করতে হয় সেগুলোকে মাসিক খরচের তালিকায় রাখুন। যেমন, নির্দিষ্ট পরিমাণ বাড়িভাড়া যা প্রতিমাসেই আপনাকে দিতে হচ্ছে। তা সবার আগে আলাদা করে রাখুন। সরকারি বিলের হিসাব প্রতি মাসেই ওঠানামা করে। তাই সেই অনুযায়ী বাজেট করুন। এছাড়াও প্রতিদিন গাড়ি ভাড়া কিংবা বাজার খরচসহ অন্যান্য বাড়তি খরচের মধ্যে যতটা পারবেন সামঞ্জস্য করুন।
পরিবর্তনশীল খরচের হিসাব
প্রতিদিনের যে খরচ হচ্ছে বা হতে পারে তার একটি হিসাব আগেই ঠিক রাখুন। ব্যক্তিগত বাজেটে প্রতিদিনের খরচের একটি আনুমানিক হিসাব ধরে রাখতে পারেন। এই খরচ কমও হতে পারে আবার বেশিও হতে পারে। কিন্তু প্রতিদিনের খরচের বাজেট থাকলে সুবিধে হবে। যা ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য করবে। আবার সঞ্চয়ও হতে পারে। তাই স্থির ব্যয়গুলো হিসাব করার পর ব্যয়ের জন্য যা থাকবে, তা পরিবর্তনশীল ব্যয়ের মধ্যে বণ্টন করুন। পরিবর্তনশীল ব্যয় করার সময় খেয়াল রাখুন, আগে কোন খরচগুলো অযথাই হয়েছিল। সেই দিক মাথায় রেখেই এবারের বাজেট করুন।
বাজেট বাস্তবায়ন
ব্যক্তিগত বাজেট তো করলেন কিন্তু এটি বাস্তবায়ন করা হবে বড় চ্যালেঞ্জ। নিজে এবং পরিবারের সবাইকে বাজেট বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে, বাজেটের উদ্দেশ্য হচ্ছে অপচয় কমানো। বাজেটে যে অর্থ বরাদ্দ করেছেন তা দিয়েই সুস্থ জীবনযাপনের চেষ্টা করতে হবে। স্বাস্থ্যকর খাওয়া দাওয়া, সামাজিক উৎসবে সামিল হওয়া কিংবা শারীরিক অসুবিধায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সবই করতে হবে। বাজেট বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নিজের কিংবা পরিবারের শখ পূরণ বাদ দেওয়া যাবে না। বরং বাজেটের উদ্দেশ্য হবে সব খাতেই নিজের চাহিদা পূরণ করা। তবেই তৈরি হবে সুস্থ সুন্দর একটি ব্যক্তিগত বাজেট।