বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডায় দারুন সময় কাটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে কিংবা আশপাশের খাবারের দোকানে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে চলে এই আড্ডা। বন্ধুরা প্রিয় খাবারের দোকানে বা হোটেলেই বেশি আড্ডা দেন। প্রিয় খাবারের সঙ্গে আড্ডায় মেতে উঠেন। তাইতো প্রায় প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেই খাবারের পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা। যেখানে সকাল থেকে রাত অবধি আনাগোনা থাকে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষেরও।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের চিত্রও ব্যতিক্রম নয়। বরং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো এলাকা জুড়েই রয়েছে খাবারের দোকান। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় যুক্ত হয়ে যায় ক্যাম্পাসের খাবারের তৃপ্তি। আর তা যেন শিক্ষার্থীদের স্মৃতিতে জড়িয়ে থাকে আজীবন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপ্রিয় কিছু খাবারের খোঁজ নিয়ে থাকছে এই আয়োজন।
টিএসসির খাবার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি হলো প্রাণের মেলা। যেকোনো উত্সবেই প্রাণের মেলায় ভিড় জমান শত শত মানুষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সারাবছরই সেখানে আড্ডা জমিয়ে বসেন। টিএসসির এই সমাগমকে আরও জমজমাট করে সেখানকার জনপ্রিয় খাবার। সাশ্রয়ী মূল্যে সেখানে অনেক স্বাদের খাবার পাওয়া যায়। খিচুড়ি বা ভাতের সঙ্গে মুরগির মাংস শিক্ষার্থীদের প্রিয় খাবার। সকালে ও বিকেলের নাশতার ব্যবস্থাও থাকে। সেই সঙ্গে গরম লেবু চায়ে চুমুক দিতেই আরও ভরে যায় অতৃপ্ত মন।
হাকিম চত্বর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পাশেই রয়েছে হাকিম চত্বর। এখানের খাবার সবারই প্রিয়। বিশেষ করে খিচুড়ি আর স্যুপের জন্য লাইন ধরেন সবাই। নাস্তায় গরম গরম শিঙাড়া ও পাকোড়াও পাওয়া যায়। এই চত্বরে চায়ের আড্ডাতেও মেতে উঠেন শিক্ষার্থীরা। লাইব্রেরিতে পড়ার ফাঁকে কিছু খাওয়ার জন্য সেখানে হাজির হন। দুই একটি দোকানে সারাক্ষণই খাবারের আয়োজন চলতে থঅকে। গাছের ছায়ায় বসে এসব খাবারের স্বাদ নিতে যেন মনটাই জুড়িয়ে যায়।
মামা হোটেল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে খুব পরিচিত নাম মামা হোটেল। ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থিত এই হোটেল সবসময় থাকে শিক্ষার্থীদের পদচারণায়। গরুর মাংস, মগজ ভুনা কিংবা চিংড়ির মতো বিশেষ পদের স্বাদ নিতে এই হোটেলে ছুটে যান শিক্ষার্থীরা। আবার ভাত, ঝাল ফ্রাই বা ভর্তা-ভাজিরও ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে।
চারুকলার গেট
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যস্ততম স্থান চারুকলা অনুষদ। অনুষদের গেটে অস্থায়ী দোকান রয়েছে। যেখানে বিকেল হতেই পাওয়া যায় ভাজা খাবার। বিশেষ করে চিকেন ফ্রাই ও পাকোরার স্বাদ নিতে শিক্ষার্থীরা সেখানে ভিড় করেন। সাধারণ মানুষও সেই খাবারেই টানেই ছুটে যান। ছোট ছোট টুকরো করা মুরগির মাংস ভেজে পরিবেশন করা হয়। যা বিক্রি হয় সাশ্রয়ী দামে।
মধুর ক্যান্টিন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিংবদন্তী খাবারের দোকান হচ্ছে মধুর ক্যান্টিন। রাজনৈতিক ইতিহাসে এর গুরুত্ব অনেক। এখানে এখানো শিক্ষার্থীদের আড্ডা বসে। আর সাশ্রয়ী দামে পাওয়া যায় সব খাবার।
শ্যাডো
লেবুর শরবত বা লেমোনেডের জন্য বিখ্যাত শ্যাডো। এখানের সেরা খাবারের তালিকায় রয়েছে লুচি-ডাল। বিকেল হতেই শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষও সেখানে ভিড় জমান। গরম গরম লুচি পরিবেশন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরের পাশেই এটি অবস্থিত। বিকেল হতেই শুরু হয় লুচি আর ডালের আয়োজন। যার সুগন্ধে সবাই ছুটে যান।
এফবিএস ফুডকোর্ট
স্বাস্থ্যসম্মত ও একটু দামি বিদেশি খাবার খেতে শিক্ষার্থীরা ছুটে যান এফবিএস বা ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ‘ফুডকোর্ট’। কুক, বাবুর্চি- ইত্যাদি স্বনামধন্য খাবারের দোকানের শাখা আছে এই ক্যান্টিনে। কফি, জুসসহ বিভিন্ন থাই ও চাইনিজ খাবার সেখানে পাওয়া যায়।
ডাস চত্বর
টিএসসির বিপরীতে ভাস্কর শামীম শিকদারের ‘স্বোপার্জিত স্বাধীনতা’ নামক ভাস্কর্যের সঙ্গেই অবস্থিত ডাস ক্যান্টিন। সকাল থেকে রাত পর্যন্তে সেখানে বিভিন্ন স্ন্যাকস ও ফাস্টফুড, লাচ্ছি পাওয়া যায়। আরও রয়েছে জনপ্রিয় কোল্ড কফি। যার মূল্য মাত্র ৩৫ টাকা।
কার্জন হল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবিচ্ছেদ্য ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে কার্জন হলে। ভবনের প্রাচীন নকশা ও নিজস্বতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরানো ঐতিহ্যকে স্বগর্বে উপস্থাপন করে। সেখানের একটি উল্লেখযোগ্য খাবার হচ্ছে আলুপুরি। হলের শেষ মাথায় বায়োকেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের পেছনে সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে একটি টং দোকানে বিক্রি হয় এই আলু পুরি। সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্তই পাওয়া যায়। যার মূল্য মাত্র ৫ টাকা। শহীদুল্লাহ হল সংলগ্ন পুকুর পাড়ের শেইড দেওয়া খাবারের কয়েকটি দোকানও রয়েছে। সেখানে বিভিন্ন মৌসুমি ফলের জুস পাওয়া যায়। যার গ্লাস প্রতি বিক্রি হয় মাত্র ২০ টাকা।