২৭ জানুয়ারি দিবাগত রাতে পবিত্র শবে মেরাজ পালিত হবে। মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত মহিমান্বিত এই রাত। এই রাতে মহান আল্লাহর কাছে রহমত ও ক্ষমা প্রার্থনা করবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। রাতভর ইবাদত-বন্দেগি করবেন। পবিত্র মেরাজের রাতেই ৫ ওয়াক্ত নামাজ মুসলমানদের জন্য ফরজ হয়। পবিত্র এই রাতে মহান রাব্বুল আলামিন জিবরাঈল (আ.) এর মাধ্যমে রাসুল (সা.) কে আসমানে নিয়ে যান এবং মুসলমানদের জন্য দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় ফরজ করেন।
ফারসি শব্দ ‘শব’ এর অর্থ রাত এবং আরবি মেরাজ শব্দের অর্থ ঊর্ধ্বগমন। আরবিতে এ রাতকে ‘লাইলাতুল মেরাজ’ মহিমান্বিত রজনি বলা হয়। এ রাতে দুনিয়া ও আখেরাতের সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক আল্লাহ তাআলার হুকুমে আল্লাহর রসুল হজরত মুহাম্মদ সা. ঊর্ধ্বজগৎ ভ্রমণ করেন। এই রাতেই নবীজি ফিলিস্তিনের বায়তুল মুকাদ্দাস ছাড়াও সাত আসমান, জান্নাত ও জাহান্নাম ঘুরে দেখেন। আর ফেরার সময় উম্মতের জন্য মহান রবের বিশেষ পুরস্কার হিসেবে ৫ ওয়াক্ত নামাজ নিয়ে আসেন। পবিত্র কুরআনের সুরা আন-নাজমের ১ থেকে ১৮ নম্বর আয়াতে এই রাতের বর্ণনা উল্লেখ রয়েছে।
“পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, “পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাতে ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত। যার চারদিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি। যাতে আমি তাকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দিই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল। (সুরা বনি ইসরাইল-১)”
মুসলমানরা মেরাজের রাতকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে পালন করে। আল্লাহর সন্তুষ্টি আদায়ে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত, নফল নামাজ আদায়, জিকির, দোয়া-দরুদ পাঠ করেন। অনেক মুসল্লি এই রাতে রোজাও রাখেন।
ইসলামি শরিয়াহ্ অনুযায়ী শবে মেরাজের রাতে বিশেষ আমলে ভিত্তি কতটুকু তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। ইসলামি স্কলার মিজানুর রহমান আজহারী ও শায়খ আহমাদুল্লাহসহ অধিকাংশ আলেমরা জানান, রজব মাস আরবি বর্ষপঞ্জিকার সম্মানিত চারটি মাসের (রজব, জিলকদ, জিলহজ ও মহররম) মধ্যে একটি। তবে কুরআন ও হাদিসে মেরাজের রাতের কোনো নির্দিষ্ট তারিখের উল্লেখ নেই। আবার এই রাতকে ঘিরে কোনো বিশেষ আমল বা নামাজের কথাও উল্লেখ নেই। নফল কোনো রোজা রাখারও কথা উল্লেখ নেই। মহান রাসুল (সা.) এই রাতে কোনো আমল করেছেন এটাও কোনো হাদিসে বর্ণিত নেই। তাই মেরাজের রাতকে ঘিরে সুন্নতি তরিকার বাইরে যেকোনো বিশেষ আমলকে বিদায়াত হতে পারে।
তবে এ রাতে হজরত মুহাম্মদ (স.) রজব ও শাবান মাসের বরকত ও পবিত্র রমজান পর্যন্ত হায়াত বৃদ্ধির জন্য মহান আল্লাহ্ কাছে দোয়া করতেন। দোয়াটি তিনি নিজে পড়েছেন এবং মুসলিম উম্মাহকেও পড়তে বলেছেন।দোয়াটি হলো-
‘আল্লাহুম্মা বারাকলানা ফি রাজাবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগনা রামাদান। অর্থ, হে আল্লাহ আপনি রজব ও শাবান মাসকে আমাদের জন্য বরকতময় করুন এবং আমাদেরকে রমজান মাস পর্যন্ত পৌঁছে দিন।’
হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, রজব ও শাবান মাসে হজরত মুহাম্মদ (স.) এ দোয়াটি বেশি বেশি পড়তেন। যা মুসলিম উম্মাহর জন্য অনুকরণীয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমল।
এছাড়াও মুসল্লিরা এই সম্মানিত রজব মাসে ৩ দিন রোজা রাখতে পারেন। হাদিসে আবূ কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, প্রতি মাসে তিন দিন সাওম (রোজা) পালন করা এবং রমজান মাসের সাওম, এক রমজান থেকে পরবর্তী রমজান পর্যন্ত সারা বছর সাওম পালনের সমান। আর আরাফাত দিবসের সাওম সম্পর্কে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, তাতে পূর্ববর্তী বছর ও পরবর্তী বছরের গুনাহের ক্ষতিপূরণ হয়ে যাবে। এছাড়া আশুরা’র সাওম সম্পর্কে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, তাতে পূর্ববর্তী বছরের গুনাহসমূহের কাফফারা হয়ে যাবে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬১৭)
সুরা বাকারার শেষের দুটি আয়াত মেরাজেই অবতীর্ণ হয়। এ আয়াতগুলোতে উম্মতে মুহাম্মদির প্রতি আল্লাহর অশেষ রহমত ও অনুগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে। উম্মতে মুহাম্মদির মধ্যে যারা কখনো শিরক করেনি, তাদের ক্ষমা করার সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে মেরাজে। নামাজে যে ‘আত্তাহিয়্যাতু’ পড়া হয়, সেটিও মেরাজের উপহার।