নবজাতকের জন্ম হলে পরিবারে আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে। শিশু একটু করে বড় হয়, তার হাবভাব, আচার-আচরণ মুগ্ধ করে সবাইকে। শিশুর কান্নাতেই বিচলিত হয়ে পড়েন। আবার হাসি দেখলে সবাই হেসে দেন। এভাবেই নবজাতকের সঙ্গে কেটে যায় দিনগুলো।
নবজাতকের জন্মের পর তার স্বভাব, ইচ্ছে অনিচ্ছে, আরাম, অস্বস্তি বুঝতে সময় লাগে। সর্বক্ষণ তাকে পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়। কিন্তু জানেন কি, নবজাতকের মধ্যে কিছু গোপন অভ্যাস থাকে যা সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানে না।
শিশুর চোখে পানি বের হয় না
জন্মের পর কিংবা তারও কিছুদিন পর পর্যন্ত শিশুরা কান্নাকাটি করলেও, প্রাথমিক ভাবে চোখ দিয়ে পানি পড়ে না। তারা উচ্চস্বরে কাঁদে কিন্তু চোখ থেকে পানি বের হয় না। কারণ জন্মের পরও তাদের অশ্রুনালী বিকশিত হতে থাকে। পুরোপুরি বিকশিত হতে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগে। এই সময় চোখের শুষ্কতা এড়াতে স্বাভাবিক নিয়মে নবজাতকের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে আর্দ্রতা তৈরি হয়। সেই পর্যন্ত জন্মের পর থেকে প্রথম কয়েক দিন ছোট্ট শিশুর কান্না অশ্রুহীন থাকে।
শিশুর শরীরে ৩০০টি হাড় থাকে
প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরে হাড়ের সংখ্যা হয় ২০৬টি। একটি শিশু জন্ম নেয় ৩০০টি হাড় নিয়ে। শিশুর শরীরে অতিরিক্ত হাড় থাকে। এই হাড়গুলো পরে কোথায় যায়? এই হাড়গুলোর বেশিরভাগই হয় তরুণাস্থি। শিশু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক হাড় তরুণাস্থির সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। জন্মনালী দিয়ে বের হওয়ারন জন্য জন্মের সময় শিশুর মাথার খুলির বেশ কয়েকটি হাড় আলাদা থাকে। সময়ের সঙ্গে হাড়গুলো এক সঙ্গে মিলিত হয়ে প্রাপ্তবয়স্কের কাঠামো তৈরি করে।
শিশুদের ১০ হাজার স্বাদকোরক থাকে
শিশু জন্ম নেয় প্রায় ১০ হাজার স্বাদকোরক নিয়ে। সেই স্বাদকোরকগুলো জিহ্বার পাশাপাশি গালের ভেতরে, মুখে ও গলাতে অবস্থান করে। সেই অতিরিক্ত স্বাদের অনুভূতি তাদেরকে মিষ্টি, তেতো এবং টক স্বাদের মধ্যে পার্থক্য বোঝায়। যদিও সেই সময় মিষ্টির স্বাদের প্রতি তাদের স্বাভাবিক আকর্ষণ থাকে। বড় হওয়ার সঙ্গে শিশুর স্বাদকোরকের সংখ্যা কমে যায়।
শিশুর শ্বাস বন্ধ করে রাখে
নবজাতক শিশুরা মাঝেমধ্যে নিজেদের শ্বাস বন্ধ করে রাখে। এটা খুবই স্বাভাবিক অভ্যাস। শিশুরা পর্যায়ক্রমে শ্বাস-প্রশ্বাস নেয় এবং শ্বাসের মধ্যে কয়েক সেকেন্ডের জন্য বিরতি নেয়। কারণ অশ্রুনালীর মতো, শিশুদের শ্বাসযন্ত্রও ধীরে ধীরে পূর্ণতা পায়। তাই নিঃশ্বাসের বিরতিগুলো ক্ষতিকারক হয় না। এটি ঘুমের মধ্যেই বেশি হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে, এই বিরতি যেন অনেকক্ষণ ধরে না হয়। তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
শিশুর ডান-পার্শ্বীয় মস্তিষ্ক
শিশু শুয়ে থাকার সময় ডান দিকে মাথা ঘোরাচ্ছে কিনা খেয়াল করুন। যদি তা করে তাহলে আপনার সন্তান ৭০ থেকে ৮৫ শতাংশ স্বাভাবিক শিশুর মতোই আচরণ করছে। ২০১৭ সালের একটি গবেষণায় বলা হয়, এই অভ্যাস তাদের মস্তিষ্কের বিকাশ এবং মোটর সমন্বয়ের সঙ্গে যুক্ত। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই অভ্যাস আরও দৃঢ় হয়। তাদের ঘাড়ের পেশীগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণও ভালো হয়।
প্রথম হাসিতে সময় লাগে
সদ্যোজাতকের হাসি দেখতে গেলে একটু অপেক্ষা করতে হবে। অন্যের কথায় হাসা কিংবা কিছু দেখে হাসতে সময় নেয়। বেশিরভাগ শিশুরই এমন প্রতিক্রিয়া দেখাতে প্রায় ৬-৮ সপ্তাহ সময় লাগে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা পরিচিত কণ্ঠস্বর শুনতে বা মুখ চিনতে শুরু করে। এরপরই তারা প্রথম হাসি দেয়৷ যা ধীরে ধীরে আরও বেড়েই চলে।