বন্ধুত্বের সংজ্ঞা কী? কী তার পরিচয়? ভালো কিংবা খারাপ সময় পাশে থাকার নামই বন্ধুত্ব, এই সংজ্ঞা তো সবারই জানা। তবে বন্ধুত্বের খাতিরে রাজপথে আন্দোলন, বন্ধুর কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে ন্যায়ের জন্য লড়াই করা, বন্ধুকে গুলির মুখে একা ফেলে না যাওয়া, বন্ধুর রক্তাক্ত দেহ কাঁধে চড়িয়ে চিৎকার করা, বন্ধুর হত্যার প্রতিশোধ বা বিচার চাইতে রাজপথের স্লোগানমুখর আন্দোলনের চিত্র যেন অন্য রকম বন্ধুত্বের পরিচয় দিচ্ছে।
৪ আগস্ট বন্ধু দিবস। প্রতিবছর আগস্ট মাসের প্রথম রোববার বন্ধু দিবস পালিত হয়। পুরো বিশ্বেই দিনটি যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়। তবে এই বছর বাংলাদেশের জন্য দিনটি অনেক বেশি আবেগপ্রবণ।
স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা প্রতিবছরই এই দিনটিতে আড্ডায় মেতে ওঠে। একসঙ্গে উদযাপন করে দিনটি। এই বছরও একসঙ্গে পালন হচ্ছে দিবসটি। শুধু চিত্রটি ভিন্ন। রাজপথে আন্দোলনককে ঘিরেই যেন বন্ধুত্বের উদযাপন চলছে।
এ বছর পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। স্কুল, কলেজ বন্ধ। ক্যাম্পাসগুলো বন্ধ। অনেক বন্ধুই দূরে রয়েছেন। এই দিনটিতে দেখাও মিলবে না। আবার চলমান সহিংসতায় অনেকে প্রিয় বন্ধুকে হারিয়েও ফেলেছন। সেই কষ্ট বুকে চেপেই রাজপথে স্লোগান দিয়ে যাচ্ছেন। বন্ধুর রক্তের বিচার চাইতে এবারও সোচ্চার হয়ে উঠেছেন লাখো শিক্ষার্থী।
অনেকের ধারণা ছিল, প্রকৃত বন্ধু হয়তো ছোটবেলায়ই হয়। বাল্য বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু। যে ছোট থেকেই পাশে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধুরা অনেক বাস্তবিক আর প্রয়োজনের খাতিরে বন্ধুত্ব করে। এই ধারণাকে এবার পুরোটাই বদলে দিয়েছে বর্তমান চিত্র।
কোটাবিরোধী আন্দোলন প্রমাণ দিল অন্য রকম বন্ধুত্বের। সোশ্যাল মিডিয়ায় ডুবে থাকা এই প্রজন্ম সময়ের সঙ্গে বন্ধুত্বের প্রমাণ দিয়েছে। তারা প্রমাণ করে দিয়েছে, আন্দোলন শুধু শত্রু বাড়ায় না, বন্ধুও বাড়ায়। এই প্রজন্ম বন্ধুত্ব বোঝে না, সম্পর্ক বোঝে না বলে যে ধারণা ছিল সবার, সেই ধারণাকেই মিথ্যা প্রমাণ করে দিল এই আন্দোলন।
দেশের চিত্র বদলাবে। আগামী বছর হয়তো ভালো সময়ে বন্ধু দিবস পালিত হবে। তবে থেকে যাবে হারানো বন্ধুদের স্মৃতি। রয়ে যাবে ইতিহাসের রক্তিম অধ্যায়। বন্ধুর স্মৃতিতে বুক কেপে উঠবে, চোখ ভিজে যাবে। নীরব কষ্টেই হয়তো সারাজীবন উদযাপন করবে বন্ধু দিবসটি।
প্রজন্ম বদলে যাবে, কিন্তু এই আন্দোলনকে মনে রাখবে পরের প্রজন্ম। প্রকৃত বন্ধুত্বের উদাহরণে উঠে আসবে এই আন্দোলনের চিত্র। বন্ধুত্বের কোনো বয়স হয় না, ছোটবেলা কিংবা বড় বেলার কোনো ভেদাভেদ হয় না, তারই বিশ্বাস মনে গেথে যাবে পরবর্তী প্রজন্মের।